আই এস এল-এর প্রথম ম্যাচে বেশ ভাল খেলে জিতেছে এটিকে মোহনবাগান। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় ভাস্কোর তিলক ময়দানে এবার এস সি ইস্ট বেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ। তাদের সামনে জামশেদপুর এফ সি। গত বছরের আই এস এল-এ জামশেদপুর ছয় নম্বরে শেষ করেছিল। ইস্ট বেঙ্গলের স্থান ছিল নবম। তবে গত বছরের ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে এ বারের ইস্ট বেঙ্গলের অনেক তফাত। হেড কোচ সহ গোটা বিদেশি ব্রিগেড বদলে গেছে। সেই জায়গায় জামশেদপুর প্রায় গত বছরের টিমটাকেই ধরে রেখে নিজেদের প্রয়োজন মতো দলে বদল এনেছে। তাদের কোচ ব্রিটিশ ওয়েন কয়েল আই এস এল-এর পুরনো লোক। গত বছর তিনি জামশেদপুরের দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ছিলেন চেন্নাইয়ান এফ সি-তে। সেই টিমের দায়িত্ব নিয়ে শূণ্য থেকে শুরু করে ফাইনালে তুলেছিলেন। গত বছর থেকে তিনি জামশেদপুরের দায়িত্বে। টিমকে ছয় নম্বরে নিয়ে যাওয়া একেবারে ফ্যালনা নয়।
জামশেদপুরের ভারতীয় প্লেয়াররা জাতীয় সার্কিটে সবাই পরিচিত মুখ। মাঝ মাঠের কোমল থাটাল, বরিস সিং কিংবা জিতেন্দ্র সিংরা সেই ২০১৭ সালের বিশ্ব কাপ থেকে সবার নজর কাড়ছেন। তাঁদের সঙ্গে দুই ফরোয়ার্ড ইশান পন্ডিতা এবং ফারুক চৌধুরি দেশের সিনিয়র টিমের জার্সি গায়ে নজর কেড়েছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এটিকে মোহনবাগান থেকে লোনে নেওয়া মিডফিল্ডার প্রণয় হালদার। তবে জামশেদপুরের আসল শক্তি তাদের বিদেশিরা। দলের অধিনায়ক ব্রিটিশ সেন্টার ব্যাক পিটার হার্টলে গত বছর থেকেই ডিফেন্সের স্তম্ভ। গোল করার জন্য জামশেদপুর নির্ভরশীল দুই স্ট্রাইকার নেরিজুস ভালস্কিস এবং জর্ডন মারের উপর। দু বছর আগের লিগে টপ স্কোরার ছিলেন ভালস্কিস। মাঝ মাঠের অতন্দ্র প্রহরী হলেন গ্রেগ স্টূয়ার্ট। সব মিলিয়ে জামশেদপুরের শক্তি বেশ ভাল।
কী করবে এস সি ইস্ট বেঙ্গল? গত বছরের মতো এ বছরেরও ইনভেস্টরদের সঙ্গে সমস্যায় দল গঠনে অনেক দেরিতে আসরে নেমেছিল ইস্ট বেঙ্গল। তবে প্রথম ম্যাচের আগে তারা গত বছরের তুলনায় প্র্যাক্টিসের সময় বেশি পেয়েছে। কদিন আগে তারা গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফ সি-র সঙ্গে পিছিয়ে থেকেও ১-১ করেছে। তবে সে সব দিয়ে ইস্ট বেঙ্গলের শক্তি বোঝা যাবে না। তাদের কোচ নতুন। রবি ফাউলারের বদলে স্প্যানিশ হোসে ম্যানুয়েল দিয়াজ। রিয়াল মাদ্রিদের জুনিয়র টিমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কোচিং অভিজ্ঞতা কম নয়। গত বছরের সাত বিদেশির একজনকেও ধরে রাখতে পারেনি ইস্ট বেঙ্গল। এ বছরের ছয় বিদেশিই নতুন। নতুন কোচের ভাবনায় চার বিদেশির কথাই বেশি করে ফুটে উঠছে। এরা হলেন ডাচ মিডফিল্ডার ড্যারেন সিডোয়েল, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার স্লোভেনিয়ার আমির দেরভিসেভিচ, আর দুই স্ট্রাইকার ক্রোয়াশিয়ার আন্তোনিও পেরোসেভিচ এবং নাইজিরিয়ার ড্যানিয়েল চিমা। নাইজিরিয়ার আর এক চিমা অর্থাৎ চিমা ওকেরির সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের মধুর সম্পর্ক। লাল হলুদ জার্সি গায়ে বহু স্মরণীয় ম্যাচ খেলে গেছেন সেই চিমা ওকেরি। তাই নতুন আরেক চিমাকে পেয়েই লাল হলুদ জনতা অধীর প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন। আগের চিমার কাছ থেকে তারা ম্যাচের পর ম্যাচ গোল পেয়েছিলেন। এই চিমার কাছ থেকেও তাদের বিরাট প্রত্যাশা। এখন দেখার তিনি সেই আশা পূরণ করতে পারেন কি না।
এই চার বিদেশির সঙ্গে আরও যে দুজন আছেন তাঁরা হলেন অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাক টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ক্রোয়াশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাক ফ্রাঞ্জো প্রেস। এই ছেলেটির বয়স কম। মাত্র ২৫। বাকিরা সবাই ২৯-৩০। প্রত্যকেই ফ্রি প্লেয়ার ছিলেন। এত দেরিতে দল গঠন করতে নেমে ফ্রি প্লেয়ার ছাড়া আর কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। ইস্ট বেঙ্গলের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। এদের সঙ্গে ইস্ট বেঙ্গলের ভারতীয় ফুটবলাররা বেশির ভাগই গত বছরের। সেই রাজু গায়কোয়াড়, বিকাশ জাইরু, সৌরভ দাস, অঙ্কিত মুখার্জি, মহম্মদ রফিক, লোকেন মিতাই। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আদিল খান এবং জ্যাকিচাঁদ সিং। আদিল খানের বয়স একটু বেশি। আবার ভারতীয় অনূর্ধ্ব সতেরো দলের হয়ে বিশ্ব কাপ খেলা অমরজিৎ সিং-কেও পেয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। সব মিলিয়ে ভারতীয় ব্রিগেড গত বছরের তুলনায় উনিশ বিশ। তবে একটা পজিশনে কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল দুর্দান্ত রিক্রূট করেছে। তা হল এটিকে মোহনবাগান থেকে তারা নিয়ে এসেছে গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে। গত বছরের আই এস এল-এ অরিন্দম সেরা গোলকিপারের পুরস্কার হিসেবে গোল্ডেন গ্লাভস পেয়েছিলেন। তাঁকে পেয়ে লাস্ট লাইন অব ডিফেন্সে ইস্ট বেঙ্গল অন্যদের থেকে একটু হলেও এগিয়ে। এই অরিন্দমকেই এবার আই এস এল-এ দলের ক্যাপ্টেন করেছে ইস্ট বেঙ্গল।
কাগজে কলমে এবারের ইস্ট বেঙ্গল কি গত বারের চেয়ে ভাল? এখনই বলা যাবে না। প্রথম ম্যাচ সব দলের কাছেই একটু কঠিন। ইস্ট বেঙ্গলের দল তো প্রায় আনকোরাই। অন্তত বিদেশিদের নিরিখে। তাই জামশেদপুরের তৈরি দলের বিরুদ্ধে তারা কতটা লড়াই করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই কথাটাই যেন শোনা গেল কোচের মুখে। সাংবাদিক সম্মেলনে কোচ দিয়াজ বললেন, ” প্রথম ম্যাচে জয় পরাজয় মুখ্য নয়, অভিজ্ঞতা অর্জনই আসল।” এই সার কথাটা মাথায় নিয়ে মাঠে নেমে ড্যানিয়েল চিমারা কী করেন তাই এখন দেখার।