ইম্ফল ও নয়াদিল্লি: অমিত শাহের চারদিনের মণিপুর সফরেও অশান্তির আগুন কিছুতেই নিভছে না। দফায় দফায় শান্তি আলোচনাতেও সমস্যার বরফ গলেনি। তার জ্বলন্ত প্রমাণ ইম্ফলের শহরতলি এলাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া এক পরিবারকে অ্যাম্বুল্যান্সসহ জ্বালিয়ে দেওয়া হল। ২ হাজারের বেশি মেইতি গোষ্ঠীর উন্মত্ত জনতা পুলিশের চোখের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সটি জ্বালিয়ে দেয়। আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ৭ বছরের শিশুসহ মা ও এক আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে। গুলিতে জখম অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গত রবিবার এই ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার অনেক রাতের দিকে এই খবর প্রকাশ্যে আসে।
এদিকে, মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিল্লির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, কুকি উপজাতির লোকজন জমায়েত হয়েছেন অমিত শাহের বাড়ির সামনে। তাঁদের বুকে রাজ্যে শান্তি ফেরানোর আবেদন ঝুলছে। হাত রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা। কুকি প্রতিনিধিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। তাঁদের বিক্ষোভের জন্য শাহের বাড়ির সামনে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যারিকেড দিয়ে এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পরে তাঁদের কয়েকজনকে শাহের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের মেয়াদ ১০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়েছে। মণিপুর হাইকোর্টের এক আইনজীবী এবং এক ব্যবসায়ী এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবেদনে তাঁরা বলেছেন, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ফলে তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের উপর আর্থিক, মানবিক, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে। তাঁরা কাউকে টাকা পাঠাতে পারছেন না, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না, ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে পেমেন্ট পাচ্ছেন না, কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না এবং মেল কিংবা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এই নির্দেশ দেশের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী বলে আবেদনে বলেছেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তোনসিং হাংসিং নামে ৭ বছরের এক বালককে নিয়ে তার মা মিনা হানসিং এবং তাঁদের এক আত্মীয় হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। অসম রাইফেলসের ত্রাণ শিবিরের ভিতরেই তাঁদের ছেলেকে গুলি করা হয় বলে খবরে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, মিনা মেইতি সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান হলেও বিয়ে করেছেন এক কুকিকে। তাঁদের আত্মীয় মেইতি খ্রিস্টান। সে কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু মেইতি জনতা ওই দুই খ্রিস্টান ও কুকি পরিবারের বধূ মিনার উপর আক্রমণ চালায়। পুলিশের চোখের সামনে অ্যাম্বুল্যান্স সুদ্ধ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের।