ক্যান্সারজনিত বিভিন্ন কারণ যেমন পরিবেশ বা বংশগত প্রভাবের কারণে মলাশয়ের মিউকোসাল এপিথেলিয়ামের টিউমারটি (mucosal epithelium tumour) ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে(malignant tumour) পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে কোলন যেটা বৃহদন্ত্র (large intestine) থাকে সেখানে কিছু ছোট নন ক্যানসেরাস সেল বা কোষ কোলনের ভেতরে একত্রিত বা জমাট বাঁধতে শুরু করে। এদের পলিপ বলা হয়। প্রথমে কোনও সমস্যা না হলেও পরে এই পলিপের কিছ কোষ নানা কারণে ক্যানসারাস সেলে পরিণত হয়। তখন কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সার হয়। মলাশয় এবং মলদ্বারের সংযোগস্থানে মূলত এই সমস্যা হয়। সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে এই ক্যানসারের প্রবণতা বেশি তবে যে কোনও বয়সেই কোলন ক্যানসার হতে পারে। কোলন ক্যানসারে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়।
কী কী কারণে কোলন ক্যান্সার হয়
১. খাদ্যাভ্যাসের কারণে কোলন ক্যান্সার হতে পারে। নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় হাই ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশী থাকলে এবং আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবার কম খেলে এই ক্যান্সার হতে পারে।
২. বংশগত কারণে এই সমস্যা হতে পারে। যেমন আগে পরিবারের কারও এই ক্যান্সার হয়ে থাকলে অন্যদের এই ক্যান্সারে ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারো বাবা-মা, ভাই-বোনের এই ক্যান্সার হয়ে থাকলে তারও হতে পারে।
৩. আলসারের কারণে যাদের ইনফ্লেমেশেন থাকে তাদের এই ক্যান্সার হতে পারে। অন্যদের তুলনায় এদের ক্ষেত্রে ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রায় ৩০ গুন বেশী থাকে।
৪. যারা সেডেন্ট্যারি লাইস্টাইল কাটান অর্থাৎ দিনের অধিকাংশ সময় বসে কাটান।
৫. দীর্ঘদিনের আলসারের ব্যথায় ভুগলে এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে। ক্রনিক ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য এর কারনেও এই ক্যান্সার হতে পারে।আবার দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে যেমন ডায়বিটিস ও স্থুলতার কারণে এই সমস্যা হতে পারে।
৬. মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপানের কারণেও এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ কি?
১. পায়খানার সাথে লাল বা গাঢ় লাল রঙের রক্ত দেখা গেলে।
২. পেত ব্যথা বা ফেঁপে ওঠা, হজমে সমস্যা ও অরুচি।
৩. পায়খানায় যে কোন ধরনের পরিবর্তন যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য,ঘন ঘন পায়খানা এমনকি ডায়রিয়া।
৪.স্বাভাবিক এর থেকে অতিরিক্ত পায়খানা হলে।
৫. মলাশয়ে ঘা বা অনবরত পেট ব্যথা।
৬. লিভার জনিত বিভিন্ন অসুখ যেমন জন্ডিস, লিভারে পানি জমা হওয়া ইত্যাদি।
কিভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়?
১. ডিজিটাল রেক্টাল এক্সাম(digital rectal exam)- এক্ষেত্রে ডাক্তার পায়ু পথ হাত দিয়ে পরীক্ষা করেন যে কোন মাংসপিণ্ড আছে কিনা।
২. ফেকাল অকালট ব্লাড টেস্ট(fecal occult blood test)- এই পদ্ধতিতে পায়খানার সাথে রক্ত গেলে তা পরীক্ষা করে জানা যায় কোন ক্যান্সার কোষ আছে কিনা। যদি অনেকগুলো পরীক্ষার পরও কোন ক্যান্সার ধরা না পড়ে তাহলে বুঝতে হবে হজম প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন প্রত্যঙ্গে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে দ্রুত অন্য পরীক্ষা করাতে হবে।
৩. এক্স-রে টেস্ট(X-ray test)- এর মাধ্যমে হজম প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যঙ্গ গুলোতে কোলন এর অস্তিত্ব বোঝা যায়। সেখানে একাধিক পলিপ বা ক্যান্সারের একাধিক কেন্দ্র বিন্দু আছে কিনা তাও জানা যায়।
৪. কোলনোস্কপি(Colonoscopy)- মলের সাথে রক্ত দেখা গেলে, পায়খানায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলে এবং ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামের পর পসিটিভ ফল আসলে সেক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করা হয়। মলাশয়ে কোন ক্ষত আছে কিনা তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় এবং কোন ক্ষত পাওয়া গেলে ঐ অংশের টিস্যু নিয়ে বায়প্সি করা হয়।
৫. আলট্রাসনোগ্রাফি(ultrasonography), সি.টি. স্ক্যান(CT Scan), এম.আর.আই(MRI).: এগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ক্যান্সার(cancer) সনাক্ত করা না গেলেও ক্যান্সারের উৎস, কেন্দ্রস্থল, আকৃতি ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।