কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ আইনজ্ঞরা। তাঁর নির্দেশে হাইকোর্টের নির্দিষ্ট নিয়মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মত আইনজীবী মহলের একাংশের। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের কার্যকারিতার প্রতিবাদে শুক্রবার দিন বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে পাঁচটি দাবি সমন্বিত একটি চিঠি দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে। আইনজীবীদের দাবি সেই চিঠির ভিত্তিতে কিছুটা সুর নরম ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির। রবিবার কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মামলার শুনানির তালিকা থেকে জানা গেছে ভার্চুয়াল মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের দাবিকে মান্যতা দিয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে। মামলার নোটিফিকেশন থেকে জানা গেছে, ভার্চুয়ালের পাশাপাশি এবার থেকে আইনজীবীরা এজলাসে উপস্থিত হয়ে সওয়াল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন : রাজ্যের উপর আস্থা নেই, সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে আর্জি শুভেন্দুর
দ্বিতীয়ত, জামিন সংক্রান্ত মামলার চাপ সামলাতে দুটি ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এতদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে বসতেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, এবার থেকে থাকবেন বিচারপতি রাজশ্রী ভরদ্বাজ। যদিও শুক্রবার বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক ঋজু ঘোষালের আহ্বানে বৈঠকে যে চিঠি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছে তার উত্তর এখনও আসেনি বলে আইনজীবী মহলের খবর। বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সহ সম্পাদক সঞ্জয় বর্ধন জানান, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ভার্চুয়াল শুনানিতে সমস্যা হওয়ায় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ক্ষোভ প্রকাশ করে নির্দেশিকা জারি করেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে শোকজ করেন তিনি। আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় জানান, করোনা আবহে যেভাবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানি চলছে তাতে সামগ্রিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া যথেষ্ট ধাক্কা খাচ্ছে। এই বিষয়টি প্রতিবাদ করেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এরপরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নির্দেশে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের অনুমোদন ছাড়াই তাঁর এজলাসে বিচারাধীন মামলাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে।
আরও পড়ুন: ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য
একইভাবে বিচারপতি অরিন্দম সিনহা নারদ মামলার তৃতীয় একক বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি প্রয়োজন বলে চিঠি দিলেও তাতে মান্যতা দেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। বৈঠকে বার অ্যাসোসিয়েশনের পাঁচ দফা দাবির চিঠিতে এই বিষয়গুলি উত্থাপন করা হলেও তাঁর কোনও উত্তর দেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। শুক্রবারের বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা আগে নোটিস জারি করা হলেও হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদক অনুপস্থিত ছিলেন। গরহাজির ছিলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা। বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সহ সভাপতি ললিত মোহন মাহাত প্রশ্ন তোলেন, নারদ মামলায়, নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করতে বিকেল ৫টার পর শুনানি শুরু হয়েছিল। করোনাকালে অনলাইনে হাইকোর্টের কার্যকাল বিকেল ৩টে পর্যন্ত হলেও নারদ মামলার ক্ষেত্রে তার অন্যথা কেন? তাঁর বক্তব্য, হাইকোর্টে বার অ্যাসোসিয়েশন একটি নিরপেক্ষ সংগঠন যা আইনজীবীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে গঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের প্রভাব সেখানে থাকতে পারে না। সরাসরি জানানো না হলেও হাইকোর্টের মামলার নোটিফিকেশন বলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছেন, এমনটাই মত আইনজ্ঞ মহলের। যদিও চিঠির উত্তর না আসলে সোমবার আইনজীবীদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে সেদিকেই নজর।