কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে মামলার এজলাস স্থানান্তর নিয়ে আইনজীবী মহলের সমালোচনার মুখে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল। ১৬ জুলাই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে একটি মামলা চলাকালীন কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য কলকাতা হাইকোর্টের সেন্ট্রাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরকে শোকজ করেন। সেই শোকজের জবাব পাননি বিচারপতি। হঠাৎই দেখা যায় তাঁর এজলাস থেকে মামলা তাঁর অনুমতি ছাড়াই স্থানান্তরিত করা হয়েছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে। এই আকস্মিক ঘটনায় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্তম্ভিত হন।
সংবিধানের ২২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলা শোনার অধিকার রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের। কিন্তু এই মামলা কি করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী মহলের বড় একটা অংশ। আইনজীবী মহলের মতে সংবিধানের ২২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলা কখনওই ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে না। এখানেই আইনজ্ঞ মহল প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের কার্যকারিতা নিয়ে।
বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর নির্দেশিকায় উল্লেখ করেছেন, প্রযুক্তিগত সমস্যার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট স্পিড ২ এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ১০০ এমবিপিএস করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন। এছাড়াও প্রযুক্তি বিভাগে ১৫০ জনের পদ খালি রয়েছে। নিয়োগ কমিটিতে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য নিযুক্ত থাকার সময় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই নিয়োগ হয়নি। তা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। এই রায় দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন মোমবাতির আলোয় যেমন ডিনার হয়, তেমনি মোমবাতি প্রতিবাদ মিছিলেও ব্যবহার করা হয়। তিনি আশঙ্কা করেছেন হয়তো তাঁর শোকজের বিষয়টি অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার জন্যই মামলাটিকে তাঁর অনুমোদন ছাড়াই ডিভিশন বেঞ্চে স্থানান্তর করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবীরাও। প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কার্যকারিতা নিয়ে। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ করেছেন, তাঁর এই নির্দেশের কপি কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে দিতে হবে, যাতে সকলে জানতে পারে পরবর্তীকালেও কেন তিনি এই মামলার শুনানি গ্রহণ করবেন না।
নারদ মামলায় যেমন সিঙ্গেল বেঞ্চকে এড়িয়ে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ মামলা গ্রহণ করেছিল, ঠিক তেমনই এদিনের এই পরিবর্তনের বিষয়টিও কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির কার্যকারিতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিল। অন্যদিকে এই মামলাটি যখন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের এজলাসে শুনানির জন্য ওঠে তখন বিচারপতি মন্তব্য করেন, এখনও পর্যন্ত তিনি এই মামলার কোন কাগজ পাননি। কেন এই মামলা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়েছেন, তাও তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না। একথা জানিয়ে রেজিস্টার জেনারেলকেও এই প্রশ্ন করেছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ।