কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে মামলার এজলাস স্থানান্তর নিয়ে আইনজীবী মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল৷ এবার তাঁকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিলেন আইনজীবীরা৷ এ ব্যাপারে আলোচনা চেয়ে আইনজীবীরা বার অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছে৷ ঠিক হয়েছে, আগামিকাল শুক্রবার বেলা ১টায় অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন আইনজীবীরা৷ বার অ্যাসোসিয়েশন বয়কটের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এজলাসে আর কোনও মামলার শুনানিতে আইনজীবীরা অংশ নেবেন না৷ এর আগে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মোহিত শান্তিলাল শা-কে বয়কট করেছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবীরা৷ ফের একই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আইনজীবী মহল৷
আরও পড়ুন: মোদি-শাহ চুপ কেন, সংসদে দাঁড়িয়ে জবাব দিন: মমতা
আইনজীবীদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে পন্থা অবলম্বন করছেন তা আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খায় না৷ সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে মামলা ডিভিশন বেঞ্চে সরিয়ে দেওয়া হল৷ অথচ সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি জানতেই পারলেন না৷ এমনটাই ঘটেছে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সঙ্গে৷ তাঁর এজলাস থেকে মামলা সরিয়ে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে৷ এই আকস্মিক ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান বিচারপতি ভট্টাচার্য৷
১৬ জুলাই একটি মামলা চলাকালীন কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য৷ ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্টের সেন্ট্রাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটরকে শোকজ করেন৷ সেই শোকজের জবাব পাননি বিচারপতি৷ হঠাৎই দেখা যায় তাঁর এজলাস থেকে মামলা তাঁর অনুমতি ছাড়াই স্থানান্তরিত করা হয়েছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে৷
সংবিধানের ২২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলা শোনার অধিকার রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের৷ কিন্তু এই মামলা কি করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী মহলের বড় একটা অংশ৷ আইনজীবী মহলের মতে সংবিধানের ২২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলা কখনওই ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে না৷ এখানেই আইনজ্ঞ মহল প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের কার্যকারিতা নিয়ে৷
আরও পড়ুন: জাতীয় সংবাদমাধ্যমের অফিসে এজেন্সি পাঠিয়ে মুখবন্ধ করার চেষ্টা করছে বিজেপি : মমতা
নারদ মামলায় যেমন সিঙ্গেল বেঞ্চকে এড়িয়ে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ মামলা গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করেছিল৷ সিঙ্গেল বেঞ্চকে এড়িয়ে ডিভিশন বেঞ্চ কী করে মামলা শোনে এই প্রশ্ন তুলেছিল আইনজীবী মহল৷ নারদ মামলায় বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের পর বিচারপতি অরিন্দম সিনহা চিঠি দিয়ে দাবি করেন, এই মামলায় বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের কোনও প্রয়োজন নেই৷ এই মামলা তৃতীয় অর্থাৎ একক বিচারপতির বেঞ্চেই বিচার্য বিষয়৷ বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের ইতিহাসে দুর্ভাগ্যজনক৷
কলকাতা হাইকোর্টের নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি না থাকলে হাইকোর্টের সব চেয়ে প্রবীণ বিচারপতি প্রধান বিচারপতির এক্তিয়ারের মামলার শুনানি গ্রহণ করেন৷ বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে কী করে বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চকে এড়িয়ে হরিশ ট্যান্ডনের বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য হল সেই প্রশ্ন উঠছে৷