কলকাতা: গুরুপূর্ণিমা নাম থেকেই স্পষ্ট, এই দিনটি গুরু বা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাই হল গুরুপূর্ণিমা। ভারতীয়রা তাঁদের গুরুকে শ্রদ্ধা জানান এই দিনটির মধ্যে দিয়ে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই দিনটির উল্লেখ বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়। কিন্তু কী তার ইতিহাস? কেনই বা এই দিনটিকে পালন করা হয়ে থাকে?
আরও পড়ুন: মাইরি বলছি গুরু, আজও তোমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে যাই
হিন্দু মত অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের এই পূর্ণিমা তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস। মুনি পরাশর ও মাতা সত্যবতীর সন্তান তিনি। মহর্ষি বেদব্যাস নামেও প্রসিদ্ধ এই দ্বৈপায়ণ। যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁর নাম রাখা হয় দ্বৈপায়ন। গায়ের রং ছিল শ্যামবর্ণ। তাই তাঁকে কৃষ্ণ দ্বৈপায়নও বলা হত। ঋক, সাম, যজু আর অথর্ব এই চার ভাগে বেদকে ভাগ করেছিলেন তিনি। এই কারণে তাঁর নাম হয় বেদব্যাস। হিন্দু ধর্মের মোট ১৮ টি পুরাণের রচয়িতা তিনি। বেদব্যাস সবচেয়ে বেশি পরিচিত মহাভারত গ্রন্থের রচনাকার হিসেবে। তাঁর জন্ম তিথিকেই হিন্দুরা গুরুপূর্ণিমা হিসেবে পালন করে থাকেন।
আরও পড়ুন: গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে খোলা বেলুড় মঠ
কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধ এই দিন প্রথম তাঁর বাণী দিয়েছিলেন ভক্তদের উদ্দেশ্যে। অর্থ্যাৎ প্রথম গুরু হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। গয়াতে বোধিবৃক্ষের তলায় বসে মোক্ষলাভের ঠিক পাঁচ দিন পর এই দিনে তিনি তাঁর শিষ্যদের কিছু কথা বলেন যা পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত হয়। আবার জৈনরা মনে করেন, তীর্থঙ্কর মহাবীর তখনকার গান্ধারের (বর্তমান আফগানিস্তানের) গৌতম স্বামীকে প্রথম শিষ্য হিসেবে স্বীকার করেছিলেন এই দিন। সেই হিসেবে জৈন ধর্মাবলম্বীরা এই দিনে গুরুদের শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: কার্টুন তোমার দিন গিয়াছে
‘গুরু’ শব্দটি ‘গু’ এবং ‘রু’ এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দিয়ে তৈরি। ‘গু’ শব্দের অর্থ ‘অজ্ঞতা’ বা ‘অন্ধকার’ এবং ‘রু’ শব্দের অর্থ ‘দূরীভূত করা’। অর্থাৎ, ‘গুরু’ মানে যে বা যিনি অন্ধকারকে দূর করেন। জীবনে আলোর পথ দেখান। গুরুপূর্ণিমা দিনটি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সুসম্পর্ককে চিহ্নিত করে। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি শিক্ষকরা মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার শিক্ষাও দিয়ে থাকেন। হিন্দু ধর্মে গুরুকে ঈশ্বর ও অভিভাবকের চেয়েও উঁচু আসনে বসানো হয়েছে। এদিন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের গুরু বা শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। একজন গুরুই পারেন সুশিক্ষা প্রদান করে প্রত্যেককে উৎকৃষ্ট মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। তাই গুরুপূর্ণিমার দিনটি সকল শিক্ষক বা গুরুদের উদ্দেশ্যে সমর্পিত।