কলকাতা: একি বলছেন মুকুল রায়? কী হয়েছে তাঁর? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতির মন্তব্যে তোলপাড় নেট পাড়া থেকে রাজনৈতিক মহল৷ তার পরই উঠছে প্রশ্ন৷ হল টা কী কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের?
সকালই থেকে ভাইরাল মুকুলের মন্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ৷ কলকাতা টিভি ডিজিটাল টিমের কাছে যে ভিডিও ক্লিপ এসে পৌঁছেছে তা ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই ভিডিও ক্লিপটি বহু মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে৷ এবং তা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল৷ ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুকুল রায়৷ তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন তিনি৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী এমন বলেছেন তৃণমূল নেতা যা তাঁর নিজের দলের অন্দরেই তুমুল চর্চা?
আরও পড়ুন: দলিতদের নেওয়াতেই মহিলাদের হকিতে হার অলিম্পিক্সে, বন্দনা কাটারিয়ার পরিবারকে কুৎসা
কয়েক দিন ধরে কৃষ্ণনগরে রয়েছেন মুকুল৷ খাতায়-কলমে তিনি এখনও বিজেপির বিধায়ক৷ কিন্তু গত জুন মাসে ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে ফিরে আসেন পুরনো দল তৃণমূলে৷ সেই মুকুল রায় কৃষ্ণনগরে দাঁড়িয়ে নিজেকে ‘ভারতী জনতা পার্টির’ প্রতিনিধি বলে বসেন৷ জানান, উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পর্যুদস্ত হবে৷ মুকুলের এই মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়৷ প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি দেহ তৃণমূলে আর মন বিজেপিতে?
ঠিক কী ঘটেছে একটু বিস্তারিত বলা যাক৷ সময়মতো উপনির্বাচনের দাবিতে আজ নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েছে তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদল৷ এ নিয়ে মুকুলকে প্রশ্ন করা হয়৷ এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘তৃণমূল কংগ্রসের পক্ষ থেকে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছে৷ কী বলবেন?’ মুকুল তখন সাংবাদিকের কাছে জানতে চান, ‘কারণ কী?’ সাংবাদিক বলেন, ‘উপনির্বাচনের কারণ হিসাবে৷’ জবাবে মুকুল বলেন, ‘দেখা যাক৷ উপনির্বাচন হোক৷ উপনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে তৃণমূল কংগ্রেস পর্যুদস্ত হবে৷’ তৃণমূল কংগ্রেস পর্যুদস্ত হবে কথাটি দু’বার বলেন তিনি৷
মুকুলের মন্তব্য তখনও শেষ হয়নি৷ তার আগেই বিতর্কের আঁচ পেয়ে যান তৃণমূল নেতারা৷ মুকুলকে শুধরানোর চেষ্টা করেন তাঁরা৷ ভিডিও ক্লিপে দেখা গিয়েছে, পিছন থেকে সাদা গেঞ্জি পরা একজন ঝুঁকে মুকুলের কানে কানে কিছু একটা বলেন৷ সম্ভবত তিনি মুকুল রায়ের ভুল শুধরে দিতে চেয়েছিলেন৷ মুকুলের বলা উচিত ছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে বিজেপি পর্যুদস্ত হবে৷ কিন্তু মুকুল তৃণমূল-বিজেপি গুলিয়ে ফেলেন৷
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি কৃষ্ণনগরে গিয়ে সম্ভবত আরও একটা বেফাঁস মন্তব্য করেন৷ সম্ভবত, কারণ ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুতে করা একটি প্রশ্ন ঠিক মত শোনা যায়নি৷ আর সেই প্রশ্নের উত্তরে মুকুল বলেছেন, ‘এটা কিছু লোকের অপব্যাখ্যা৷ কোনও জায়গায় অভিষেককে বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসম্মানিত করা হয়নি৷’ মনে করা হচ্ছে, ত্রিপুরায় অভিষেকের উপর হামলার প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন৷ তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে উপনির্বাচনে বিজেপির কাছে তৃণমূলের হার মন্তব্য৷
সেই থেকে একটাই চর্চা৷ এটা কী বললেন মুকুল? কেন বললেন? ‘স্লিপ অফ টাং’ না কি অন্য কোনও কারণ? তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ মুকুল রায়৷ তাঁর রক্তে যে পরিমাণ সোডিয়াম-পটাশিয়াম থাকা দরকার তা মাঝে মধ্যেই ওঠা-নামা করছে৷ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ওঠা-নামার কারণে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা বা উপসর্গ দেখা দেয় যে কোনও মানুষের৷ যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয়, ‘সোডিয়াম-পটাশিয়াম ইমব্যালেন্স’৷ শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে মাথা যন্ত্রণা, শারীরিক দুর্বলতা, আচ্ছন্ন ভাব দেখা দিতে পারে৷ দেখা দিতে পারে সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ, খিচুনি ইত্যাদি উপসর্গ৷ এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে কোমাতেও চলে যান এই ধরনের রোগী৷ মুকুল রায়ের ক্ষেত্রেও সম্ভবত এই জিনিসটি ঘটেছে৷
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতন না দিলে নাম কাটা যেতে পারে পড়ুয়াদের, আদালতের নির্দেশে চাপে অভিভাবকরা
কবে থেকে অসুস্থ মুকুল রায় তা খোঁজ নিয়েছিল কলকাতা টিভি ডিজিটাল ডেস্ক৷ জানা যাচ্ছে, গত দুই-আড়াই বছর ধরেই ডিপ্রেশন বা অবসাদে ভুগছেন মুকুল রায়৷ এ নিয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে৷ গত জুলাইয়ের শেষে দিল্লিতে গিয়ে এইমসে গিয়েও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছিলেন৷ চিকিৎসকরা মুকুলকে পরীক্ষা করে দেখেন৷ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে থাকার কারণে মুকুল রায়ের মস্তিষ্কের পিছনে জল জমেছে৷ যেখান থেকে সম্ভবত তাঁর শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের তারতম্য ঘটছে৷ এবং হঠাৎ হঠাৎ কাজে ভুলভ্রান্তি ঘটছে মুকুল রায়ের৷ অস্বাভাবিক আচরণ করছেন তিনি৷ আগামী সপ্তাহে আবার দিল্লি যাবেন মুকুল রায়৷ চিকিৎসকরা এবং মুকুলের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন আপাতত তিনি কিছুদিন বিশ্রামেই থাকবেন৷