২০১৭ সালের ৮ জুলাই ট্যুইট করে অনুরাগ ঠাকুর শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সেইদিন রাতেই সৌরভ ট্যুইটের উত্তর লিখেছিলেন,’ডিয়ার অনুরাগ, থ্যাংক ইউ সো মাচ… নিড ইউ ব্যাক ইন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’। আজ ২০২১। অনুরাগ ঠাকুর এখন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনেক রদবদল ঘটে গেছে। আর সেই রদবদলে বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি অনুরাগেরও দপ্তর বদল হয়ে গেছে। কিরেন রিজিজুকে সরিয়ে তাঁকেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী করে দেওয়া হল। সৌরভের জন্মদিনের ২৪ ঘণ্টা আগেই! কাকতালীয় হয়তো,কিন্তু এমন কিছুই তো চেয়েছিলেন ৪ বছর আগে!
২০১৬ সালে মে মাসে বিসিসিআইয়ের সভাপতি হয়েছিলেন অনুরাগ। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে (মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার অভিযোগে) তাঁকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরই মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লোধা কমিটি-কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (সিএএ) হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিল বিসিসিআই চালানোর জন্য।
সেই সময়ই আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিসিসিআই সভাপতি পদে বসেন। কিছুদিনের মধ্যে আসে সৌরভের জন্মদিনও। দুজনের মধ্যে আদান প্রদান হয় এই দুটি টুইট। সিএএ-র থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষমতা পাওয়ার পর, বোর্ডের আগের সব প্রথা ফিরিয়ে আনেন মহারাজ । বোর্ড এরপর সৌরভের নেতৃত্বে আবার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। নিজের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলেও (বিষয়টি বিচারাধীন বলে),এখনও বোর্ডের সভাপতি পদেই আছেন। আর একই সময় অনুরাগ ঠাকুর হয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী।
অনুরাগ নিজে একসময় রাজ্য দলের হয়ে বোর্ডের বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন। পরে হিমাচল প্রদেশের রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার সচিব থেকে সভাপতিও হয়েছিলেন। জগমোহন ডালমিয়া বোর্ডের যে বার্ষিক সাধারণ সভায় শেষবার বোর্ড সভাপতি হন,সেইবার বিরোধী শিবিরে থেকেও সচিব পদে জেতেন অনুরাগ। বোর্ড রাজনীতির অন্দর মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন অনুরাগকে
জেতানোর জন্য।
অনুরাগ আর সৌরভের দোস্তি অনেক আগে থেকেই। ক্রিকেটার সৌরভ আর অধিনায়ক সৌরভের বড় ফ্যান ছিলেন অনুরাগ। হিমাচল প্রদেশের রাজ্য ক্রীড়া সংস্থার নুতন ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দারুণ প্রশংসা করেন। সৌরভ-অনুরাগ দোস্তি আরও গভীর হয়ে ওঠে বাংলার আইকন বোর্ড সভাপতি হওয়ার পর থেকেই। সবরকম ভাবে অনুরাগ সৌরভকে সহায়তা করে গেছেন।
এবার অনুরাগ দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী। সৌরভ এখনও বোর্ড সভাপতি। সামনে বিসিসিআইয়ের অনেকগুলো আইসিসি টুর্নামেন্ট করার সুযোগ। কর ছাড় দেওয়া নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে। অনুরাগ ক্রীড়ামন্ত্রী হলেও তিনি বিসিসিআই সভাপতি ছিলেন আগে। ফলে তিনি জানেন কি কি সমস্যা সামলাতে হয়। তাই বোর্ডকর্তারা দারুণ আশাবাদী নয়া ক্রীড়ামন্ত্রীকে নিয়ে।
চারবছর আগে সৌরভের জন্মদিনে ট্যুইট করেছিলেন অনুরাগ। সৌরভ পাল্টা উত্তর লিখেছিলেন। এবার নয়া মন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে এখনও অনুরাগ সোশ্যাল মিডিয়াতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা সৌরভকে জানিয়ে উঠতে পারেননি। সৌরভও নুতন ক্রীড়ামন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিনন্দন জানান নি। হোয়াটসঅ্যাপ অবশ্যই আদান প্রদান হয়েছে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর মহেন্দ্র সিং ধোনি-দেশের দুই সফল অধিনায়ক। কিন্তু পরপর দুদিন তাঁদের জন্মদিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্যুইট করেননি। বাংলা কিংবা ঝাড়খন্ডে নির্বাচন এখন নেই বলে বাংলায় লিখে বা ভোজপুরিতে কোনও ট্যুইট সোশ্যাল মিডিয়া দেখতে পেল না! সময় অনেক কিছুর উত্তর দেয়। সচিন তেন্ডুলকর কিন্তু তাঁর দাদিকে শুভেচ্ছা ট্যুইট করেছেন তার শুরুটাই হয়েছে বাংলায়।