ইউরোর প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের যা ক্রীড়াসূচি হয়েছে তাতে তিনটে বড় দল সেখান থেকেই বিদায় নেবে। পর্তুগাল-বেলজিয়াম, জার্মানি-ইংল্যান্ডের মাঝখানে পড়ে গেছে স্পেন-ক্রোয়াশিয়া ম্যাচ। সোমবার কোপেনহেগেনের সেই ম্যাচে কাউকেই ফেভারিট বলা যাবে না। যে কোনও দলই জিততে পারে।
গ্রূপ লিগের প্রথম দুটি ম্যাচে সুইডেন ও পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করার পর স্পেন তৃতীয় ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ছন্দে ফিরেছে। তাও আলভারো মোরাতা পেনাল্টি মিস না করলে ফলটা অন্য রকম হত। এর জন্য অবশ্য মোরাতা স্প্যানিশ সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েছেন। অন আইনে তাঁর ছেলেকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর জন্য মোরাতা ম্যাচের শেষে নয় ঘণ্টা নিদ্রাহীন কাটিয়েছেন। সোমবারের ম্যাচে তাই প্রথম একাদশে মোরাতার থাকার সম্ভাবনা কম। স্পেনের কোচ লুই এনরিকে যে তিনজনকে ফরোয়ার্ড লাইনে ভেবেছেন তাঁরা হলেন পাবলো সারাবিয়া, জেরার্ড মোরেনো এবং ড্যানি ওমলো। এই ওমলো দীর্ঘ দিন খেলেছেন ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবের ক্লাবে। ক্রোয়াশিয়া ফুটবলারদের তিনি খুব ভালভাবেই চেনেন। তাঁর কাছে প্রস্তাবও ছিল ক্রোয়াশিয়ার হয়ে খেলার। কিন্তু তিনি তাঁর দেশ ছেড়ে যাননি। তেইশ বছর বয়সী ওমলো এখন স্পেনের ফরোয়ার্ড লাইনের অন্যতম ভরসা।
২০০৮ থেকে ২০১২–স্পেন ফুটবলের স্বর্নযুগ ছিল। এই সময়ে তারা দুবার ইউরো কাপ আর একবার বিশ্ব কাপ জিতেছে। কিন্তু জাভি, ইনিয়েস্তা, সের্গেই র্যামস, জেরার্ড পিকে, ইকের কাসিয়াসদের ফর্ম পড়ে যাওয়ায় ২০১৪ থেকে স্পেনের অবস্থা খুবই খারাপ। সেই বিশ্ব কাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল স্পেন। ২০১৮ বিশ্ব কাপ থেকেও তাই। মাঝে ২০১৬-র ইউরো কাপে তারা বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। এবার স্পেন যে খুব ভাল শুরু করেছিল বলা যাবে না। তাদের অধিনায়ক সের্গেই বুসকোয়েটস করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় প্রথম দুটি ম্যাচে খেলতে পারেননি। স্লোভাকিয়া ম্যাচে তাঁকে খেলানো হয়েছিল। খারাপ খেলেননি বার্সেলোনা তারকা। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে এনরিকে যে তিনজন মিডফিল্ডারের কথা ভেবেছেন তার মধ্যে বুসকোয়েটস নেই। তাঁর পছন্দ রড্রি, পেড্রি এবং কোকে। এদের মধ্যে বার্সেলোনার পেদ্রি দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। এবারের ইউরোতে তিনিই স্পেনের সেরা ফুটবলার। আটলেটিকো মাদ্রিদের কোকের উপরেও এনরিকের প্রবল আস্থা। এবার লা লিগা জিতেছে আটলেটিকো। তাঁর অধিনায়ককে ভরসা করাই যায়। আর কোকে খেলছেনও ভাল।
ক্রোয়েশিয়া গত বিশ্ব কাপের রানার্স। লুকা মদ্রিচের ছেলেরা গত বিশ্ব কাপে খুবই ভাল খেলেছিলেন। সেই টিমটার ১৩জন ফুটবলার আছেন এবারের ইউরোর টিমে। তবে স্ট্রাইকার ইভান পেরিসিচকে সোমবার পাচ্ছে না ক্রোটরা। তিনি করোনায় আক্রান্ত। ক্রোয়াশিয়া বেশ কঠিন গ্রূপে পড়েছিল। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে তারা এক গোলে হেরে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ড্র করেছিল পেরিসিচের গোলে। শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৩-১ হারিয়ে নক আউটে উঠেছে ক্রোয়াশিয়া। সে ম্যাচে গোল করেছেন ইভান পেরিসিচ ও লুকা মদ্রিচ। স্পেনের বিরুদ্ধে পেরিসিচের অভাব অনুভব করবে ক্রোয়াশিয়া।
ম্যাচ জেতার জন্য ক্রোটদের ভরসা তাই লুকা মদ্রিচ। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদ্রিচের বয়স হয়েছে। তিনি এখন ৩৫। পাঁচ বছর আগের বিশ্ব কাপের ফর্মে তাঁকে পাওয়ার কথা না ভাবাই ভাল। শুধু মদ্রিচই নন, গোটা টিমটা বয়সভারে আক্রান্ত। স্পেনের তারুণ্যকে অভিজ্ঞতা দিয়ে কীভাবে আটকান মদ্রিচরা তাই এখন দেখার। তবে পেরিসিচ না থাকলেও আছেন মিডফিল্ডার মাতেও কোভাশিচ এবং ইভান রেবিক। তাই ক্রোয়াশিয়ার শক্তিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এখন দেখার স্পেনের তারণ্যকে তারা হারাতে পারে কি না।