যে ম্যাচটা হতে পারত ইউরোর ফাইনাল তা হতে চলেছে প্রিকোয়ার্টার ফাইনাল। রবিবার স্পেনের সেভিয়ায় ভারতীয় সময় রাত সাড়ে বারোটায় এডেন হ্যাজার্ডের বেলজিয়ামের সঙ্গে লড়াই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের। গ্রূপ লিগে বেলজিয়াম তিনটি ম্যাচেই জিতেছে। তারা রাশিয়া (৩-০), ডেনমার্ক (২-১) এবং ফিনল্যান্ড (২-০)–তিনটি টিমকেই হারিয়েছে এবং পর্যাপ্ত প্রাধান্য রেখেই। আর মারণ গ্রূপ থেকে তৃতীয় হয়ে পর্তুগাল উঠেছে নক আউটে। তারা শুধু হারিয়েছে হাঙ্গারিকে (৩-০)। কিন্তু হেরেছে জার্মানির কাছে (২-৪)। এবং ড্র করেছে ফ্রান্সের সঙ্গে (২-২)। পর্তুগালের সাতটা গোলের মধ্যে পাঁচটাই করেছেন রোনাল্ডো। এর মধ্যে তিনটে পেনাল্টি থেকে। বেলিজিয়ামের হয়ে রোমেলো লুকাকু তিনটি গোল করেছেন। জোড়া গোল আছে কেভিন দে ব্রূইনেরও।
রোনাল্ডো বিশ্বের এক নম্বর ফুটবলার। ১০৯টি গোল করে তিনি এখন সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার। কিন্তু মুসকিল হল টিমটা ভীষণভাবে দাঁড়িয়ে তাঁর উপর। রোনাল্ডো এখন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ৩২ সেকেন্ডে ৯০ মিটার দৌড়ে গোলও করছেন। কিন্তু যদি কোনও কারণে তিনি আটকে যান তাহলে পর্তুগালের অবস্থা কী হবে কেউ জানে না। বেলজিয়াম কিন্তু কোনও একজনের উপরে দাঁড়িয়ে নেই। মাঝ মাঠের রাজা কেভিন দে ব্রূইন এমন একজন প্লেয়ার যিনি গোল করতেও পারেন, করাতেও পারেন। এবারের ইউরোতে সেই নমুনা তিনি রেখেছেন। তবে টিমের এক নম্বর স্ট্রাইকার রোমেলো লুকাকু। ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকারটিকে আটকাতে গেলে বেশ কসরত করতে হবে পর্তুগালকে। এদের পাশে এডেন হ্যাজার্ড আছেন। রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গারের বয়স হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় তিনি সবার আগে। গোলের মুখ দেখেছেন তিনিও।
রোনাল্ডোকে যদি বাদ দেওয়া যায়, তাহলে তুল্যমূল্য বিচারে বেলজিয়াম কিন্তু সব কটা বিভাগে এগিয়ে। গোলে থিওবা কুর্তোয়া এই মুহূর্তে দুনিয়ার প্রথম দুজনের একজন। জার্মানির ম্যানুয়েল ন্যয়ারের সঙ্গে তাঁর লড়াই এক নম্বর জায়গাটার জন্য। পর্তুগালের গোলকিপার রুই প্যাট্রিসিও যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের কুর্তোয়ার চেয়ে উলভসের প্যাট্রিসিও অনেক পিছিয়ে। কিন্তু ডিফেন্সে পর্তুগালের দুই সেন্ট্রাল ব্যাক পেপে কিংবা রুবেন ডায়াস যথেষ্ট দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা দুজনেরই প্রচুর। তাঁদের পাশে দুই সাইড ব্যাক সেমেডো এবং গুয়েইরো বেশ ভালই। বেলজিয়াম খেলছে তিন ব্যাকে। অল্ডারওয়েরিল্ড, ডেনেয়ার এবং ভারটনজেন। এই তিনজনের কম্বিনেশন বেশ ভাল। কিন্তু সমস্যা একটাই। তিনজনেরই বয়স হয়েছে। গ্রূপ লিগের খেলায় সেটা তেমন সমস্যার হয়নি। কিন্তু রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে তাঁরা কী করেন তাই দেখার।
মাঝ মাঠে কিন্তু পর্তুগালকে টেক্কা দিতে পারে বেলজিয়াম। মেউনিয়ের, টেলম্যান, উইটসেলের সঙ্গে কেভিন দে ব্রূইনকে নিয়ে বেলজিয়াম মাঝ মাঠ বেশ জমজমাট। তাঁরা রক্ষণেও যেমন দুর্ভেদ্য, গোল করানোর ব্যাপারেও তাই। রোনাল্ডোকে ফ্রি খেলতে দেবে না এই মাঝ মাঠ। পাশাপাশি দে ব্রূইনদের আটকাতেও বেশ সমস্যা হতে পারে পর্তুগাল ডিফেন্সের। সামনের দিকে ড্রাই মার্টেনস , লুকাকু এবং এডেন হ্যাজার্ড মিলে বেলজিয়াম অ্যাটাক দুর্দান্ত। এমনি এমনি তো বেলজিয়াম ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর টিম হয়নি। পাশাপাশি যদি পর্তুগাল মিডফিল্ডকে ধরা যায় তাহলে দেখা যাবে পলহিনা, রেনেতো স্যাঞ্চেস কিংবা মৌতিনহোর কম্বিনেশন ততটা মারাত্মক কিছু নয়। এরা মূলত ডিফেন্সেভ হাফ। ডিপ ডিফেন্সের কভারের কাজটা করেন। সামনের দিকে রোনাল্ডোর সাথী বের্নাদো সিলভা এবং দিয়েগো জোটা। ব্রূনো ফার্নান্ডেজের ফর্মটা ভাল নেই। তাঁকে হয়তো এই ম্যাচে বসতে হবে।
এত সব কথা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে যদি রোনাল্ডো ম্যাজিক দেখা যায়। তখন কে কোথায় আছে তার কোনও মূল্য থাকবে না। একটা ফ্রি কিক, অনেকটা স্পট জাম্প দিয়ে একটা হেড, কিংবা অনেকটা দৌড়ে গোল করে রোনাল্ডো যে কোনও ম্যাচের রঙ এক লহমায় বদলে দিতে পারেন। তাই রবিবাসরীয় লড়াইয়ে বেলজিয়াম টিম গেমে এগিয়ে থাকলেও রোনাল্ডো যতক্ষণ আছেন তাঁকে উপেক্ষা করবে কে? বেলজিয়াম তাই ফেভারিট হয়েও ফেভারিট নয়।