জার্মানির সঙ্গে ম্যাচ মানেই গ্যারেথ সাউথগেটের মনে পড়বে পঁচিশ বছর আগেকার কথা। সেবার ইউরোর সেমিফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের খেলা পড়েছিল ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেই। নব্বই মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ে কোনও গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাই ব্রেকারে। এবং গ্যারেথ সাউথগেট পেনাল্টি শটটা নষ্ট করেন। জার্মানি টাই ব্রেকারে জিতে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালের পর মঙ্গলবার আবার ইউরোর প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির সামনে ইংল্যান্ড। সেদিনের সেই মিডফিল্ডার সাউথগেট এখন ইংল্যান্ডের কোচ। তাঁর টিম গ্রূপ লিগের তিনটে ম্যাচে অপরাজিত থাকলেও গোল করেছে মাত্র দুটি। ক্রোয়াশিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাত্র এক গোলে জয়। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূণ্য ড্র।
ব্রিটিশ মিডিয়া বরাবরই বড় টুর্নামেন্টের আগে তাদের টিমকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখায়। রাশিয়া বিশ্ব কাপে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে উঠেছিল। সেটা বড় ব্যাপার। এবার কিন্তু ব্রিটিশ প্রেস বেশ সংযত। তাদের অধিনায়ক টিমের এক নম্বর স্ট্রাইকার হ্যারি কেন তিনটি ম্যাচে এখনও গোলের মুখ দেখেননি। এটা সাউথগেটের কাছে চিন্তার বিষয়। তিনটে ম্যাচে মাত্র দুটি গোল। সে দুটি গোল করেছেন রহিম স্টার্লিং। এখন এই রকম গোলকানা দল জার্মানির বিরুদ্ধে কতটা লড়বে তা নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ারই সন্দেহ আছে। জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে তাই তারা কোনও অলীক কল্পনার ফানুস ওড়াচ্ছে না।
জোয়াকিম লো-র জার্মানির হয়ে এটাই শেষ টুর্নামেন্ট। ২০০৬ সাল থেকে তিনি দেশের দায়িত্বে। দেখতে দেখতে দেড় দশক হয়ে গেল। লো জার্মানিকে বিশ্ব কাপ দিয়েছেন। কনফেডারেশন কাপ দিয়েছেন। কিন্তু ইউরোটা অধরা থেকে গেছে। ২০০৮ সালে ফাইনালে উঠে স্পেনের কাছে হেরে গেছেন। পরের দুটি ইউরোতে সেমিফাইনালে উঠেও আর এগোতে পারেননি। এবার গ্রূপ লিগেই তাঁকে বাঘ-সিংহদের সামনে পড়তে হয়েছিল। সেখানে বিশ্বজয়ী ফ্রান্সের কাছে আত্মঘাতী গোলে হারলেও ইউরোজয়ী পর্তুগালকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল জার্মানি। তার পর তারা ২-২ করেছে হাঙ্গারির সঙ্গে। তিন ম্যাচে ছয় গোল খুব খারাপ নয়। কিন্তু ফুটবল পণ্ডিতরা বলছেন, জার্মানি এখনও তাদের সেরা খেলা থেকে অনেক দূরে।
হ্যারি কেনের গোল না পাওয়া ইংল্যান্ডের কাছে যে রকম সমস্যা, জোয়াকিম লো-র তেমন সমস্যা নেই। তাঁর তিন ফরোয়ার্ডের অন্যতম কাই হার্ভাৎজ গোল করেছেন পর্তুগাল এবং হাঙ্গারির বিরুদ্ধে। মিডফিল্ডার রবিন গোসেন্সও গোল করেছেন। এমন কি হাঙ্গারির বিরুদ্ধে বিরতির পর নেমে লিওন গোরেৎজকাও গোল করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখ মিডফিল্ডারকে লো গত তিনটে ম্যাচে প্রথম একাদশে রাখেননি। পরিবর্ত হিসেবে নেমেছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে থাকবেন গোরেৎজকা। তাঁর সঙ্গে জসুয়া কিমিচ, টনি ক্রূস এবং রবিন গোসেন্স। সামনে কাই হার্ভাৎজের সঙ্গে টমাস মুলার এবং সার্জ ন্যাব্রি। গোল অবশ্য মুলার এবং নাব্রিও পাননি। তাতে চিন্তিত নন লো। কারণ তাদের ফুটবল বেশ ইতিবাচক। জার্মান মুভমেন্টের সঙ্গে তাঁরা বেশ ভালভাবেই আছেন। তিন ব্যাকে খেলছেন লো। ম্যাথিয়াস জিন্টার, ম্যাটস হামেলসের সঙ্গে আন্তোনিও রুডিগার। গোলে চিরবিশ্বস্ত ম্যানুয়েল ন্যয়ার। আসলে লো তাঁর দলে খুব একটা পরিবর্তন করতে চান না। ইকের গ্রূন্ডোগানের শরীরটা ভাল যাচ্ছে না বলে তাঁর জায়গায় শুরু করবেন লিওন গোরেৎজকা। লো-র রণনীতি হল বিপক্ষ তাঁর দল দেখে নিজেদের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করবে। বিপক্ষকে দেখে তিনি নিজের দল পাল্টাবেন না।
সাউথগেট কী করবেন? তাঁর ভাণ্ডারেও অবশ্য গোলাগুলি ভাল রকমের মজুত আছে। কিন্তু তিনিও দলে খুব একটা পরিবর্তনের পক্ষপাতী নন। গোলকিপার জর্ডন পিকফোর্ডের সামনে চার ব্যাক কাইল ওয়াকার, জন স্টোন্স, হ্যারি ম্যাগুয়ের এবং লুকা শ-র সামনে দুই হোল্ডিং মিডিও হলেন ডেকলান রিসে এবং কলভিন ফিলিপস। তিন আ্যাটাকিং মিডিও হলেন ফিল ফডেন, জ্যাক গ্রিয়েলিশ এবং রহিম স্টার্লিং। সামনে একমাত্র স্ট্রাইকার হ্যারি কেন। কাগজেকলমে ইংল্যান্ড একটু হলেও পিছিয়ে জার্মানির থেকে। কিন্তু সেই ঘাটতিটা তারা পুষিয়ে দিতে পারে ওয়েম্বলির সমর্থকদের দিয়ে। ইংলিশ সমর্থকরা সারাক্ষণ চিৎকার করবেন তাদের প্লেয়ারদের জন্য। কম হলেও থাকবেন জার্মানরা। তবে জার্মানি এ সব নিয়ে খুব একটা ভাবিত নয়। পঁচিশ বছর আগে টাই ব্রেকারে জিতেছিল তারা। তার পর ২০১০ সালের বিশ্ব কাপে ইংল্যান্ডকে ৪-১ গোলে হারালেও সেই ম্যাচে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের নায্য গোল বাতিল করেছিলেন রেফাররি-সহকারি রেফারি। এবার সময় এসেছে নিষ্কলঙ্ক জয়ের। জার্মানি কিন্তু প্রস্তুত।