গ্রূপ লিগের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরো কাপ এখন পৌছে গেছে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে। দু দিন বিরতির পর শনিবার শুরু হচ্ছে প্রি কোয়াটার ফাইনালের খেলা। প্রথম দিন থাকছে দুটি ম্যাচ। ডেনমার্ক বনাম ওয়েলস এবং তার পর ইতালি বনাম অস্ট্রিয়া।
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইতালির বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া কতটা লড়াই করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অস্ট্রিয়ার ব্যাপারে ইতালির বর্তমান এবং অতীত–দুটোই নিজেদের দিকে। ২০১৮ সালের বিশ্ব কাপের পর থেকে ইতালি তিরিশটি ম্যাচে অপরাজিত। এর মধ্যে তারা জিতেছে পঁচিশটা ম্যাচ, বাকি পাঁচটি ড্র হয়েছে। এর মধ্যে গত দশটি ম্যাচ তারা জিতেছে, যার মধ্যে চলতি ইউরোর গ্রূপ লিগের তিনটি ম্যাচ আছে। এই তিনটি ম্যাচে ইতালি করেছে সাতটি গোল এবং তারা কোনও গোল খায়নি। এটা যদি ইতালির বর্তমান হয় অতীতও তাদের সঙ্গে। অস্ট্রিয়ার সঙ্গে গত তেরোটা ম্যাচে তারা অপরাজিত। শেষ বার ইতালি অস্ট্রিয়ার কাছে হেরেছে সেই ১৯৬০ সালে। সেই ১-২ গোলে হারটা ছিল একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে। দু দলের শেষ সাক্ষাৎকার ২০০৮ সালে। সেই ম্যাচটা শেষ হয়েছিল ২-২ গোলে।
এই যদি ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার অতীত এবং বর্তমান হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ কী। দু দলের শক্তির যা তারতম্য, দু দলের দলগত শক্তির যা ব্যালান্স তাতে জেতার ব্যাপারে ইতালির কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তারাই দুর্দান্ত ফেভারিট। ইতালির ফরোয়ার্ড লাইন রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। তিন ফরোয়ার্ডে খেলছে ইতালি। দমেনিকো বেরার্দি, সিরি ইম্মোবাইল এবং লরেঞ্জো ইনসিগনে। কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলবেন? এ বলে আমায় দ্যাখ, তো ও বলে আমায়। এমন নয় যে এরা ভুরি ভিরি গোল করে ফেলেছেন। কিন্তু এদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া, মোক্ষম সময়ে ফাইনাল পাস বাড়ানো এবং গোল করার ক্ষমতা ইতালি ফরোয়ার্ড লাইনকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালি বিখ্যাত রক্ষণাত্মক ফুটবলের জন্য। কিন্তু এবার তাদের পাসিং ফুটবল নজর কেড়েছে সকলের। মাঝ মাঠে পাসের পর পাস খেলছে ইতালি। তিন মিডফিল্ডার ব্রাজিল জাত জর্জিনহো, নিকোলো বারেত্তি এবং মার্কো ভেরাত্তি শুধু নিজেদের মধ্যে পাসের পর পাস খেলছেন না, অ্যাটাকিং জোনে ফরোয়ার্ডদের সঙ্গেও চমৎকার বোঝাপড়ার সৃষ্টি করছেন। এতে বিপক্ষ হয়রান হয়ে যাচ্ছে তাদের হদিশ পেতে। গ্রূপ লিগে তুরস্ক, সুইৎজারল্যান্ড কিংবা ওয়েলস ম্যাচে এই দৃশ্য চোখে পড়েছে বার বার। এদের সঙ্গে যোগ করতে হবে ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির কথাও। এই মিডফিল্ডার হয়তো শনিবার শুরু থেকেই খেলবেন না। কিন্তু অপেক্ষায় থাকবেন। ভুলে গেলে চলবে না সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল আছে তাঁর। কিন্তু প্রথম একাদশে বাকিদের থেকে তিনি একটু পিছিয়ে বলে মনে করছেন ইতালির কোচ রবের্তো মানচিনি। ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্ব কাপে তিনি ইতালি দলে ছিলেন। কিন্তু একটি ম্যাচও খেলেননি। নিজের সেই দুঃখের কথা মাথায় রেখে মানচিনি গত তিনটে ম্যাচে দলের ২৬ জন ফুটবলারের মধ্যে পঁচিশ জনকেই খেলিয়ে দিয়েছেন। জার্সি পাননি শুধু তৃতীয় গোলকিপার মোরেনো।
ইতালির অধিনায়ক জিওর্জিও চেলিনি সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে আহত হয়ে বসে যান। এখন তিনি ফিট। বৃহস্পতিবার দলের সঙ্গে প্র্যাক্টিসও করেছেন। তবে তাঁকে খেলতে হয়েছে দ্বিতীয় একাদশে। অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে কমজোরি টিমের সঙ্গে তাঁকে খুব একটা দরকার নেই। পরের দিকে আরও শক্তিশালী টিমের মুখে পড়তে হবে ইতালিকে। সেই টিমগুলো হতে পারে বেলজিয়াম, পর্তুগাল এবং ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়ার মতো টিম। তখন চেলিনিকে অবস্যই লাগবে। অস্ট্রিয়া ম্যাচে তাই ইতালির ব্যাক ফোর হবেন ডিলরেঞ্জো, এসেরবি, বোরুচি এবং স্পিনাজোলা। গোলে দোনারুমা।
গ্রূপ লিগে অস্ট্রিয়া পড়েছিল সবচেয়ে সহজ গ্রূপে। সি গ্রূপে তাদের সঙ্গে ছিল নেদারল্যান্ডস, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া এবং ইউক্রেন। সেখানে নেদারল্যান্ডেসের কাছে ০-২ গোলে হারলেও অস্ট্রিয়া ৩-১ গোলে হারিয়েছিল উত্তর ম্যাসিডোনিয়াকে আর ১-০ গোলে জিতেছিল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। কিন্তু এরা কেউই ইতালি নয়। ইতালি অনেক বেশি শক্তিশালী টিম। তাদের জয় তাই শুধু সময়ের অপেক্ষা।