ইংল্যান্ড–২ জার্মনি–০
(রহিম স্টার্লিং, হ্যারি কেন)
সেই ১৯৯৬ সাল থেকে কষ্টটা বুকের মধ্যে পুষে রেখেছিল ইংল্যান্ড। সেবারে তাদের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেই জার্মানি তাদেরকে ইউরোর সেমিফাইনালে টাই ব্রেকারে হারিয়ে চলে গিয়েছিল ফাইনালে। আর পরে তারা চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। অবশেষে মঙ্গলবার সেই ওয়েম্বলিতেই জার্মানিকে হারিয়ে পঁচিশ বছরের কষ্টটা ভুলতে পারল ইংল্যান্ড। সেদিনের সেই টাই ব্রেকারে পেনাল্টি মিস করা গ্যারেথ সাউথগেট আজকের ইংল্যান্ডের গর্বিত কোচ। শাপমুক্তি হল তাঁরও। আর ইংল্যান্ড জিতল মাথা উঁচু করে নব্বই মিনিটের মধ্যেই। আবার গোল পেলেন রহিম স্টার্লিং। তবে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের আনন্দ আরও বেশি হল তাদের অধিনায়ক হ্যারি কেন গোল পেলেন বলে। ৭৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূণ্য থাকার পর স্টার্লিংয়ের গোলে ইংল্যান্ড এগিয়ে যায়। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির স্ট্রাইকারের এটি এবারের ইউরোর তিন নম্বর গোল। ৮৬ মিনিটে গোল করে জার্মানির কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিলেন হ্যারি কেন। প্রিকোয়ার্টারে জার্মানিকে হারিয়ে ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে সুইডেন ও ইউক্রেনের বিজয়ীর সঙ্গে। শনিবার সেই ম্যাচ হবে রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে দর্শক আঁটে আশি হাজার। করোনার জন্য পঞ্চাশ হাজার দর্শকের প্রবেশাধিকার ছিল। এর মধ্যে ছিলেন প্রিন্স উইলিয়ামসও। ইংল্যান্ড প্রথম গোলটা করার পর আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বাতাসে ঘুসি ছুড়তে দেখা যায় তাঁকে। শুধু প্রিন্স উইলিয়ামসই নন, গোটা লন্ডন বা সারা ইংল্যান্ড জুড়ে মঙ্গলবার উৎসবের রাত। ২০১০ সালে বিশ্ব কাপের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি যখন ২-১ গোলে এগিয়েছিল তখন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের শট বারে লেগে গোল লাইন অতিক্রম করলেও রেফারি গোল দেননি। পরে ম্যাচটা ইংল্যান্ড ১-৪ হারে। এদিনের জয় যেন সব ক্ষতের উপরেই প্রলেপ লাগিয়ে দিল। জার্মানি যে এদিন হারার মতো খেলেছে তা বলা যাবে না। পঁচাত্তর মিনিট পর্যন্ত তারা সমানে সমানে লড়েছে। হয়তো একটু বেশিই। কিন্তু ইংলিশ ডিফেন্স তাদের খুব একটা জায়গা দেয়নি। যদিও ফাঁকফোকড় দিয়ে জার্মানি সুযোগ তৈরি করে তা প্রতিহত হয়েছে গোলকিপার জর্ডন পিকফোর্ডের হাতে। ইংল্যান্ড এদিন তিন ব্যাকে খেলেছে। এদের মধ্যে সেরা ছিলেন জন স্টোন্স। জার্মানির দুই বিপজ্জনক স্ট্রাইকার টমাস মুলার এবং কাই হার্ভাৎজকে একদমই রেয়াত করেননি স্টোন্স। তাঁর দুই পাশে ছিলেন চিরবিশ্বস্ত কাইল ওয়াকার এবং হ্যারি ম্যাগুয়ের। তিন ব্যাকে খেলার কারণ ইংল্যান্ড কোচ মনে করেছিলেন মাঝ মাঠেই যত জারিজুরি আটকাতে হবে জার্মানদের। চার মিডফিল্ডার কেভিন ট্রিপিয়ের, কলভিন ফিলিপস,ড্যানিয়েল রিসে এবং লুকা শ সারাক্ষণ পাল্লা দিয়ে লড়ে গেছেন জার্মানদের সঙ্গে। যে প্রেসিং ফুটবলের জন্য জার্মানরা প্রসিদ্ধ তা এদিন দেখতে পাওয়া যায়নি। বা ইংল্যান্ড তাদের দেখাতে দেয়নি।
জার্মান কোচ জোয়াকিম লো-র দেশের কোচিংয়ের শেষ দিন হয়ে গেল আজ। পনেরো বছরের বর্ণময় জীবনের সমাপ্তি। তবে শেষটা ভাল হল না। এদিন তিনি একটা ফাটকা খেলেছিলেন। প্রথম তিনটি ম্যাচে ফরোয়ার্ড লাইনে থাকা সার্জ ন্যাব্রিকে বসিয়ে তিনি চেলসির টিমো ওয়ের্নারকে নামিয়েছিলেন। ফাটকাটা কাজে লাগেনি। টিমো তাঁকে ডুবিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্দ্ধের মাঝামাঝি টিমোকে বসিয়ে ন্যাব্রিকে নামানো হল। তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ইংল্যান্ড ম্যাচটা ধরে নিয়েছে। জার্মানির হারে ইউরো মঞ্চ থেকে একে একে নিভিছে দেউটি। গত বারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের বিদায়ের পর গতকাল অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নিয়েছে গতবারের রানার্স ফ্রান্স। আর এদিন চলে গেল তিন বারের চ্যাম্পিয়ন এবং গতবারের সেমিফাইনালিস্ট জার্মানি। ইউরো কাপ অধরাই থেকে গেল জোয়াকিম লো-র কাছে।
তুল্যমূল্য লড়াই হতে হতে ইংল্যান্ড প্রথম গোলটা পেল ৭৫ মিনিটে। চার ফুটবলারের সম্মিলিত আক্রমণ থেকে গোল। পরিবর্ত জ্যাক গ্রিলিশ, লুকা শ, হ্যারি কেন এবং রহিম স্টার্লিং হয়ে বল গেল গ্রিলিশের কাছে। তাঁর নীচু ক্রস ছয় গজের মধ্যে থেকে চমৎকার প্লেসিংয়ে গোল করেন স্টার্লিং। ৮৬ মিনিটের গোলটার পিছনেও গ্রিলিশ। তাঁর ক্রস ঠিক খুঁজে নিয়েছিল হ্যারি কেনকে। দুর্দান্ত হেডে গোল করে টিমকে শেষ আটে তোলা নিশ্চিত করলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তাঁর দেশ কখনও ইউরো জেতেনি। গত বারের বিশ্ব কাপে ইংল্যান্ড এই কোচ এবং এই ক্যাপ্টেনের হাত ধরেই সেমিফাইনালে উঠেছিল। সেখানে যাদের কাছে হারতে হয়েছিল এবার প্রথম ম্যাচেই সেই ক্রোয়াশিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। এবার বিদায় নিতে হল জার্মানিকেও। সাউথগেটের দল চারটি ম্যাচেই খেলল ওয়েম্বলিতে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা যদি রোমে যেতে তাহলে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলার সুযোগ থাকছে সেই ওয়েম্বলিতেই।
ব্রিটিশ সূর্য কি তাহলে আবার উদিত হবে ওয়েম্বলির আকাশে?