কলকাতা: গঙ্গাসাগর মেলার রায় নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা ‘আদালত অবমাননা’র শামিল বলে মনে করেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র (kolkata HC verdict on gangasagar) এবং রাজ্যসভার সদস্য শান্তনু সেন (Santonu Sen on Gangasagar mela)।
গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত হাইকোর্টের নতুন কমিটি থেকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম বাদ পড়ায়, সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। তৃণমূল কংগ্রেসের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রেই শুভেন্দু অধিকারীকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে, শমীক হাইকোর্টকেও নিশানা করেন। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্রের অভিযোগ, ‘রাজ্য যেমন চাইছে, আদালত তেমন রায় দিয়েছে।’ শমীকের এই মন্তব্য ঘিরেই আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে, শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ নস্যাত্ করে দেন শান্তনু সেন। শমীকের নাম না-করেই তৃণমূল সাংসদ জানান, বিজেপি-র কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য অপ্রত্যাশিত নয়। এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মন্তব্যও তিনি উল্লেখ করেন। শান্তনু বলেন, ‘বিপ্লব দেবকে প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, কোর্ট কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না। আমি পুলিস মন্ত্রী, যা ইচ্ছে করব।’
আরও পড়ুন: Gangasagar Mela: গঙ্গাসাগর কমিটি থেকে শুভেন্দু বাদ, হাইকোর্টকে বেনজির আক্রমণ বিজেপি-র
বাংলার প্রাক্তন বিধায়কের মন্তব্য ‘আদালত অবমাননার শামিল’ বলে দাবি করে শান্তনু সেন পালটা তোপ, ‘বিজেপি কেন্দ্রে বসে স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে নিজেদের অঙ্গুলি হেলনে চালাচ্ছে। তাই ওদের ধারণা, সবাই সেই পথেই হাঁটে। কিন্তু তৃণমূল শৃঙ্খলাপরায়ণ একটি দল। ফলে, বিজেপির মুখপাত্র যে অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, ওনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ হওয়া উচিত।’
গঙ্গাসাগর মেলার রায়কে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। হাইকোর্টের গঙ্গাসাগর কমিটি থেকে কেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার বেনজির আক্রমণ করেন শমীক ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: Gangasagar: শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিল হাইকোর্ট
মঙ্গলবারই গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রায় দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গঙ্গাসাগর সংক্রান্ত কমিটিতে শুভেন্দু অধিকারীকে রাখা নিয়ে একাধিক পিটিশন জমা পড়ায়, নতুন রায় ঘোষণার সময় আগের কমিটিই বাতিল করে দেওয়া হয়। সেখানে শুধুমাত্র শুভেন্দু অধিকারীকে বাদ দেওয়া হয়নি। কমিটিতে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে রাখা হয়নি। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দুই সদস্যের এই কমিটি গড়া হয়। কমিটির অপর জন পশ্চিমবঙ্গ লিগাল এইড কমিটির সদস্য। শুধু শুভেন্দু নন, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকেও আগের কমিটিতে রাখা হয়েছিল। যদিও রাজ্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এখনও পর্যন্ত নিয়োগ করা হয়নি। তাই আগের কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
আদালতের রায়কে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে, কেন গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দেওয়া হল, এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির মুখপাত্র। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন। শমীকের কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী লোকজনকে ঘর থেকে বেরোতে বারণ করছেন। অথচ, গঙ্গাসাগর মেলা চলছে। সরকারের এই গাফিলতিতে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হবে। এই সরকারের কাছে মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই।’ শমীকের আশা, হাইকোর্ট রায় পুনর্বিবেচনা করবে।