কলকাতা: যাবতীয় অনিশ্চয়তা দূর করে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata High Court)। তবে, সেটা শর্তসাপেক্ষে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ, গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে পুণ্যার্থীদের আরটি-পিসিআর টেস্ট করাতে হবে (Kolkata HC verdict on Gangasagar)। এটা বাধ্যতামূলক। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এলে, তবেই সাগরমেলায় যাওয়ার অনুমতি মিলবে (Gangasagar mela)। শুধু কোভিড টেস্ট রিপোর্ট নয়, সেইসঙ্গে সাগরে আসা পুণ্যার্থীদের কাছে জোড়া টিকাকরণের সার্টিফিকেটও থাকতে হবে। সাগরদ্বীপকে নোটিফায়েড এলাকা ঘোষণা করার কথাও বলেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
পিটিশনারদের আর্জিতে সাড়া দিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট আগের তিন সদস্যের কমিটিও বাতিল করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে নতুন করে আর একটি কমিটি এদিন গড়ে দেওয়া হয়। স্বভাবতই কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন কমিটিতে দুই সদস্যেকে রাখা হয়েছে। কমিটির অপর জন পশ্চিমবঙ্গ লিগাল এইডের এক সদস্য।
আরও পড়ুন: Gangasagar mela : মেলা হওয়ায় খুশি সাগরের ব্যবসায়ীরা
আগের রায় ঘোষণার সময় রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে যে কোভিড বিধির কথা জানিয়েছিল, তা গঙ্গাসাগর মেলায় মানা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখবে এই কমিটি। কমিটি সেইমতো নির্দেশ দেবে। নির্দেশ কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে।
শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা করার অনুমতি অবশ্য আগেই দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ করোনাবিধি মেনে মেলার আয়োজন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও তৈরি করে দেয় আদালত৷ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে নিয়ে এই কমিটি গড়ে দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু কমিটিতে কেন শুভেন্দু অধিকারীকে রাখা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিট পিটিশন করেছিলেন জনৈক কবিরুল ইসলাম, অজয় কুমার দে এবং প্রমোদ ভর্মা৷
আরও পড়ুন: Covid-19: করোনা সতর্কতায় হরিদ্বারে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান নিষিদ্ধ করল প্রশাসন
আবেদনকারীদের অভিমত, কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকলে তাঁরা এমন কিছু মন্তব্য করতে পারেন, যা অন্যের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে৷ অথবা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে৷ তা ছাড়া আগে যাঁদের কমিটিতে রাখা হয়েছিল, তাঁদের এসব কাজের অভিজ্ঞতা না-থাকায় আদালত নির্দেশিত দায়িত্ব তাঁরা ঠিকমতো পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
শুধু শুভেন্দুকে নিয়ে আপত্তি নয়, রাজ্য এখনও পর্যন্ত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে নিযুক্ত করেনি৷ এই অবস্থায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে কমিটিতে রাখায়, কমিটি গঠনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এই প্রশ্নের মুখেই এদিন আগের কমিটি বাতিল করে, দুই সদস্যের নতুন কমিটি গড়ে দেয় হাইকোর্ট। কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, তার জন্যই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি।
অতিমারির আবহে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশিকাকে সামনে রেখে সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা৷ তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ার কারণে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জিও জানানো হয়েছিল। ফলে, গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে একটা সংশয় ছিলই। কিন্তু, আদালত এদিন শর্ত চাপিয়েই মেলার অনুমতি দিয়েছে।