কলকাতা: সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)-র আইনের বৈধতা নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় বিএসএফকে সংযুক্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধি (Centre extends BSF jurisdiction) নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বরে এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেন সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রেক্ষিতেই ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ। পরবর্তী শুনানি ১৪ ডিসেম্বর।
দেশের সীমান্তবর্তী তিন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও পঞ্জাবের বিএসএফের এক্তিয়ার ভুক্ত এলাকা ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করে কেন্দ্র। বিএসএফ নিয়ে কেন্দ্রের নোটিফিকেশন (BSF jurisdiction notification 2021) অনুযায়ী, বর্ধিত এলাকায় তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত এবং গ্রেফতার করতে পারবে বিএসএফ।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সরব বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলা। দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গায়ের জোরে এলাকা দখল করতে দেব না। বিএসএফ আমার বন্ধু। তবে, বিএসএফ মানে বিজেপি নয়। তবে, কেন্দ্র যে ভাবে বিভিন্ন এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে, তা ঠিক নয়। বিএসএফের বিষয়েই কথা বলতে যাচ্ছি।’
শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, বিজেপি ছাড়া বাকি বিরোধী দলগুলোও বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির বিরোধিতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছে। নানা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ থাকলেও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ ক্ষেত্রে মমতার ভূমিকায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রবীণ বাম নেতার বক্তব্য, ‘সীমান্তের অনেকটা অঞ্চল জুড়ে এখনও কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে উঠতে পারেনি বিএসএফ। আগে সেদিকে নজর দিক।’ বিমান বসু মনে করেন, বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ালে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনজীবনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন – মমতা-মোদি বৈঠকে বিএসএফ, রাজ্যের বকেয়া প্রাপ্য টাকা নিয়ে কথা
বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ইতিমধ্যে ১১২- ৬৩ ভোটে প্রস্তাবও পাস হয়েছে। যদিও এই প্রস্তাবে বিরোধিতা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের বিএসএফের সীমান্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক। প্রয়োজনে এই সীমান্ত বৃদ্ধির পরিমাণ ৮০ কিলোমিটার করা হোক। আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাব তারাও যেন এই প্রস্তাবে আমাদের সঙ্গে গলা মেলান।’
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও বিধানসভায় পাশ হওয়া প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক এবং গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন। তাঁর অভিযোগ প্রস্তাব পাস হলেও তার কার্যবিবরণী তাঁকে পাঠানো হয়নি। এই বিতর্কের আবহে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের হয়।