কলকাতা: শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ দুনিয়ায় এবার পাকা জায়গা করে নিচ্ছে দুর্ধর্ষ ‘মুক-বধির গ্যাং’। অপরাধ দুনিয়ায় এই নতুন অপরাধের ট্রেন্ড সামাল দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুলিসকে। এই ধরনের অপরাধ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন রাজ্য মহিলা কমিশন। এই ধরনের অপরাধে যারা যুক্ত, তারা সকলেই মুক ও বধির। এই অপরাধের যারা শিকার হচ্ছেন, তাঁরাও মুক ও বধির তরুণী।
তাঁদের দিয়ে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার পর জোর করে দেহ ব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে। এর পিছনে বড় কোনও চক্র রয়েছে বলে পুলিসের অনুমান। সঞ্জীব চক্রবর্তী নামে এই চক্রের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হলেও তাকে জেরা করে তার কাছ থেকে বিশেষ কিছু জানতে পারেনি পুলিস। কারণ সঞ্জীব নিজেও মুক ও বধির।
এই ধরনের অপরাধের বিশেষ সুবিধা হল, অপরাধের শিকার হওয়া কোনও মুক ও বধির তরুণী থানায় গিয়ে অভিযোগ জানালেও কোন কাজ হচ্ছে না। কারণ ওই তরুণী কথা বলতে পারেন না। তার আকার ইঙ্গিতও বুঝতে পারে না পুলিস। এর ফলে তদন্ত থমকে যায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটার পর একটা অপরাধ করে চলেছে অপরাধীরা। এই ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
নতুন এই ধরনের অপরাধের কথা প্রথম জানা যায় কয়েকদিন আগে। বাগুইআটির এক মুক ও বধির তরুণী গৃহবধূ এই ধরনের অপরাধীদের শিকার হন। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের আগে ওই তরুণী মুক ও বধিরদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হুগলি গিয়েছিলেন। ওই তরুণীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। সেই অনুষ্ঠানে তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয় খড়দহের এক মুক-বধির দম্পতির।
তাঁরা ওই তরুণীকে নিজেদের কাছে রেখে কাজ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সেই কাজে রাজি হয়ে যান বাগুইআটির ওই মুক ও বধির তরুণী। তখনই তাকে সঙ্গে করে ওই দম্পতি নিয়ে যায় খড়দহ ইটখোলা বোসপুকুর রোডের নিজেদের ফ্ল্যাটে। সেখানে তরুণীকে রেখে বাড়ির কাজ করানো হয়। তার মধ্যেই বাথরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে দেয় মুক ও বধির দম্পতি সঞ্জীব চক্রবর্তী এবং তানিয়া চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন: Burdwan Business Man: বর্ধমানে লটারি বিক্রেতাকে গুলি করে খুন, লুট দু’লক্ষ টাকা
সেই বাথরুমে স্নান করতে যান বাড়িতে কাজ করা ওই মুক-বধির তরুণী। তখনই তাঁর স্নানের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হয়। এরপর ফুটেজ দেখিয়ে তরুণীকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেল করে তাকে ধর্ষণ করতে থাকে সঞ্জীব চক্রবর্তী। অভিযোগ, নিজে ধর্ষণ করার পর অন্য একাধিক পুরুষের সঙ্গে তরুণীকে সহবাস করতে বাধ্য করা হয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণী কাউকে কিছু বলতে পারেননি।
এরপর বাগুইআটির এক মুক-বধির তরুণকে বিয়ে করেন ওই তরুণী। কিন্তু বিয়ের পরেও ব্ল্যাকমেল করে ওই তরুণীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে সহবাস করতে বাধ্য করে সঞ্জীব। তখন বাধ্য হয়ে বিষয়টি ওই তরুণী স্বামীকে জানান। তখন তারা প্রথমে বাগুইআটি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে চান। কিন্তু তাদের আকার-ইঙ্গিত বুঝতে পারেনি পুলিস। এর ফলে এই থানায় তাঁদের এফআইআর নেওয়া হয়নি। তখন তাঁরা চলে আসেন খড়দহ থানায়।
সেখানেও সেই একই সমস্যা দেখা দেয়। তখন বাধ্য হয়ে ইন্টারপ্রেটার রজনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য নেয় খড়দহ থানার পুলিশ। তখনই জানা যায় আসল রহস্য। এরপর এফআইআর নেয় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। গ্রেফতার করা হয় সঞ্জীব চক্রবর্তীকে। কিন্তু তার স্ত্রী তানিয়াকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি।
আরও পড়ুন: Extra Marital Affair: পরকীয়ার জের, প্রেমিকার স্বামীর হাতে খুন বিবাহিত প্রেমিক
এরপরই শুরু হয় একের পর এক হুমকি ফোন। অবিলম্বে এফআইআর তুলে নেওয়ার জন্য ওই তরুণীর কাছে হুমকি ফোন আসতে শুরু করে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে। এমনকি রাজাবাজার থেকে একদল দুষ্কৃতী তরুণীর বাগুইআটির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। হামলা চালানো হয় খড়দহ থানার সামনেও।
বিশিষ্ট ইন্টারপ্রেটার রজনী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বড় কোনও মাথা। তরুণী অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছেও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এই ধরনের অপরাধ সত্যি উদ্বেগজনক। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন।