কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে দূষণের কারণে। গত দু’দশকে পৃথিবীর বাতাসে দূষণ-বিষের পরিমাণ বেড়েছে ৬৬ শতাংশ। আঁতকে উঠছেন! কিন্তু এটাই সত্যি। একটি সমীক্ষায় এই তথ্যটি সামনে এনেছে ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেল্থ জার্নাল।
বায়ুদূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিক দূষণ ও জলদূষণের কারণে ২০১৫ সালে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়েছে এই পত্রিকা। ২০১৯ সাল পর্যন্ত দূষণজনিত কারণে বিশ্বমানবের মৃত্যুর সংখ্যাটি হল বছরপ্রতি ৯০ লক্ষ। ভুরু কুঁচকে উঠছে! আরও আছে, সেটা শুনলে পিলে চমকেও উঠতে পারে। সেটা হল, যুদ্ধ, জঙ্গিপনা, পথ দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়া, মাদক কিংবা মদ্যপানে মৃত্যুর চেয়েও দূষণের বলির সংখ্যা বেশি।
ভারতের মতো দেশের জন্যও খারাপ খবর দিয়েছে এই পত্রিকা। বলা হয়েছে, এই জাতীয় মৃত্যুর ৯০ শতাংশেরও বেশি হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে। তাদের মতে, বিশ্বের সব থেকে ভয়ঙ্কর বিপদ হল দূষণের কারণে ঘটা বিভিন্ন অসুখ। তারমধ্যে রয়েছে অপরিণত শিশুমৃত্যুও। ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সমীক্ষাকারী দলের প্রধান রিচার্ড ফুলার বলেন, দূষণ প্রতিরোধে গাফিলতিই এই ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহারের কারণ। প্রতি বছর ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পরও কারও হুঁশ ফিরছে না, এটাই আশ্চর্যের।
আরও পড়ুন: SSC High Court: এসএসসির দুর্নীতিবাজদের সিবিআই কলার ধরে গ্রেফতার করবে, এজলাসে বললেন বিচারপতি
সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, বায়ুদূষণের ফলে অল্পবয়সে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৭ লক্ষ মানুষের। জলদূষণের কারণে মারা গিয়েছেন ১৪ লক্ষ মানুষ। সিসাঘটিত দূষণে প্রায় ১০ লক্ষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বায়ু ও জলদূষণেই বেশি সংখ্যায় মানুষ মারা গিয়েছেন। গত ৫ বছরেও দূষণজনিত মৃত্যুর কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। আগে বায়ুদূষণে মারা যাওয়ার কারণ ছিল ঘরেই। কাঠ, কেরোসিন, কয়লা ও ঘুঁটের ধোঁয়ায় এই দূষণ হয়। এছাড়া অপরিষ্কার নর্দমার পাশে বসবাস, পুকুর বা খোলা জায়গায় রাখা জলপানে জলঘটিত রোগে বহু মানুষ মারা যায়।
তবে কয়েক বছরে এই ধরনের মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও কমেছে। তার কারণ চীন ও ভারতের মতো কিছু দেশ এই ধরনের জ্বালানির পরিবর্তে রান্নার জন্য গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়েছে। যদিও এটা শুধুই আশার কথা, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যে হারে পেট্রলজাত জ্বালানি, যান দূষণ ও বিষাক্ত রাসায়নিক দূষণ চলছে তা ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিতে পারে। বিশ্বের অর্ধেক দেশই এই দূষণে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন, চীনে কলকারখানা ও রাসায়নিক দূষণে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে বলে সমীক্ষা জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে মার্কিন ডাক্তার নিলু টুমমালা বলেন, শিল্পের বিকাশ, শহুরে জীবনযাত্রা বৃদ্ধিই এ জাতীয় দূষণের কারণ। আর এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বৃদ্ধরা। এইসব দূষণ একত্রিত হয়ে মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু মৃত্যুই নয়, এর ফলে গড় জাতীয় উৎপাদনও (GDP) ব্যাপকভাবে মার খাচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র বায়ুদূষণের জন্য মৃত্যুতে ২০১৯ সালে ১০.৩ শতাংশ জিডিপি ক্ষতি হয়েছে।