কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে প্রথম চেনা যায় ১৯৮১ সালে। মিশরের একটি আদালতের লকআপে। মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। সাদা জোব্বা পরা জাওয়াহিরি আদালতের গারদ থেকে চিৎকার করে বলেছিলেন, আমরা অনেক জান কবুল করেছি। দরকারে আরও জান কুরবান করে দেব, যতক্ষণ না ইসলামের ফতে হবে, ততদিন আমাদের জেহাদ চলবে। তাঁর এই উচ্চকণ্ঠের ঘোষণায় সঙ্গী জেহাদিরা স্লোগান দিয়ে ওঠেন। ইজরায়েলের সঙ্গে মিশরের শান্তিচুক্তির বিরোধিতায় হত্যা করা হয়েছিল সাদাতকে। যদিও সেই মামলায় অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি জাওয়াহিরির বিরুদ্ধে। বেআইনি অস্ত্র রাখার অপরাধে তাঁর ৩ বছরের জেল হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই জাওয়াহিরি চলে আসেন পাকিস্তান-আফগান সীমান্তের এক জায়গায়।
দীর্ঘ প্রায় এক দশকের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ ৭১ বছরের জাওয়াহিরিকে খতম করতে সফল হয়েছে আমেরিকা। কিন্তু, এই জঙ্গি নেতার উত্থানের কাহিনি আরব্যরজনীর গল্পকেও হার মানায়। চোখের শল্য চিকিৎসক ডাক্তার জাওয়াহিরি পাকিস্তানে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের জখম বিদ্রোহীদের চিকিৎসার কাজে নেমে পড়েন। সে সময় সোভিয়েতের কবজায় থাকা আফগানিস্তানে মার্কিন সাহায্যে ব্যাপক লড়াই চলছে। ইসলামি মুজাহিদিন গেরিলাদের চিকিৎসা করার সময়ই তিনি ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে পরিচিত হন। বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক ওসামা আফগান বিদ্রোহীদের মদত করছিলেন।
আরও পড়ুন: Ayman al-Zawahiri killed: জাওয়াহিরিকে খতমে কি ফের ‘নিনজা বম্ব’ প্রয়োগ আমেরিকার?
জাওয়াহিরি এরপর ১৯৯৩ সাল নাগাদ ফের মিশরে গিয়ে ইসলামি জেহাদের নেতৃত্ব দেন। নয়ের দশকের সেই ভয়াবহ লড়াইয়ে প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যুর পরিবর্তে দেশের সরকার ফেলে দিয়ে কট্টর ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করেন মিশরকে। ১৯৯৫ সালের জুনে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের উপর হামলা হয়। তারপর থেকেই জাওয়াহিরি সহ তাঁর জঙ্গিদলের উপর ব্যাপক আক্রমণ শানায় মোবারক সরকার। তাতে জাওয়াহিরি ইসলামাবাদস্থিত মিশরের দূতাবাস উড়িয়ে দেন। সেই হামলায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
১৯৯৯ সালে মিশরের সামরিক আদালতে পলাতক জাওয়াহিরিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর থেকেই যাযাবরের মতো জীবন কাটিয়ে অবশেষে ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে আল কায়দা সংগঠন তৈরি করেন তিনি। কিন্তু, শুরু থেকেই তাঁর নেতৃত্বদানের ক্যারিশ্মার অভাব এবং লাদেনের মতো বাগ্মী না-হওয়ার কারণে প্রচারের মুখ হতে পারেননি। যদিও আমেরিকা নাক কেটে দেওয়া ৯/১১ হামলার প্রধান রূপকার তিনিই ছিলেন বলে সকলের বিশ্বাস। ২০১১-য় লাদেনকে খতম করার পর থেকেই জাওয়াহিরির সহকারী জঙ্গিনেতাদের নিকেশ করতে থাকে পেন্টাগন ও সিআইএ। তাতেই দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে আল কায়েদা। অন্যদিকে, সিরিয়াসহ অন্যত্র আইসিস মাথাচাড়া দিতে থাকায় অর্থনৈতিকভাবেও অক্ষম হয়ে পড়তে থাকেন জাওয়াহিরি।
এ মাসের গোড়ার দিকে আমেরিকার গুপ্তচর বাহিনী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জাওয়াহিরির গোপন ঘাঁটির কথা জানায়। কাবুলের শহরতলির ওই বাড়িতে জাওয়াহিরি ছাড়াও থাকেন তাঁর স্ত্রী, মেয়ে এবং নাতি-নাতনিরা। তাই আমেরিকা এমনভাবে হামলা চালিয়েছে, যাতে জাওয়াহিরি ছাড়া আর কারও ক্ষতি হয়নি।