কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নবজ্যোৎ সিং সিধু একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে চলেছেন। গত প্রায় কয়েক বছর ধরে পঞ্জাব কংগ্রেসে ঘরোয়া কোন্দল চলছে। কংগ্রেস হাইকম্যান্ড সেই কোন্দল সামাল তো দিতেই পারছে না। বরং তা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপটেন অমরেন্দ্র সিংকে গদি ছাড়তে হয়েছে সিধুর ছক্কা মারের চোটে। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে সিধুর প্রথম থেকেই বনিবনা হচ্ছিল না। গান্ধী পরিবার সিধুর পক্ষে থাকায় ক্যাপ্টেন আরও বিড়ম্বনায় পড়েন। ক্যাপ্টেনের মত উপেক্ষা করেই রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সিধুকে মদত দেন।
অমরেন্দ্রর আপত্তিকে তুড়ি মেরে দুই ভাইবোন সিধুকে পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করে দেন। কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার আগে থেকেই সিধু মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্ম সম্পর্কে নানা অভিযোগ করছিলেন প্রকাশ্যে। দুজনের মধ্যে দূরত্বও বাড়ছিল ক্রমাগতই। ক্যাপ্টেন গান্ধী পরিবারে সিধুর বিরুদ্ধে নালিশও করেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। সিধুকে না সামলালে তিনি ইস্তফা দেবেন বলেও হুমকি দেন অমরেন্দ্র। তাঁর হুমকিকে পাত্তাই দেননি সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা। তাঁরা বরাবর সিধুর পাশে থেকেছেন। দুই সিংয়ের বিরোধ এমন জায়গায় চলে যায় যে, হাইকম্যান্ড অমরেন্দ্রকে পদত্যাগ করতে বলে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী করা হয় দলিত চরণজিৎ সিং চান্নিকে। চান্নির সঙ্গেও সিধুর খটামটি শুরু হয়ে গিয়েছে। একের পর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সিধু চান্নির অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন।
আরও পড়ুন – কেমন করে গান করো হে গুণী
রবিবার একাধিক ট্যুইট করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সিধু। তাঁর ট্যুইটে আক্রমণের লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রী। সিধুর বক্তব্য, রাজ্যের প্রকৃত সমস্যাগুলি নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। পঞ্জাব এখন অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থার মুখে দাঁড়িয়ে। এর মোকাবিলার পথ খুঁজে বার করতে হবে সরকারকে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কে আমাদের মহান রাজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করবে? যাঁরা ব্যাক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত, তাঁদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। বলা বাহুল্য, সিধুর অভিযোগ নতুন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এর আগে তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংয়ের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্রকে নিয়ে যখন টানাটানি চলছে, তখন সিধু বলেছিলেন, অমরেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে না সরালে তিনি পদত্যাগ করবেন।
একটা সময় সিধুকে মুখ্যমন্ত্রী করার কথাও ভাবা হয়েছিল। সেই সময় অমরেন্দ্রর বক্তব্য ছিল, সিধুকে মুখ্যমন্ত্রী করলে তিনি দল ছেড়ে দেবেন। সিধু রাজ্য চালানোর উপযুক্তই নন। দিল্লিতে গিয়ে ক্যাপ্টেন বলে আসেন, সিধু যেভাবে তাঁকে অপমান করে চলেছেন,তাতে তাঁর আর দলে থাকা সম্ভব নয়। সম্প্রতি তিনি নতুন দল গড়ে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়বেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। এখানেই পঞ্জাব কংগ্রেসের কোন্দল শেষ নয়। নয়া মুখ্যমন্ত্রী চান্নিও বলেছেন, ভোটের আগে এই ক’মাস সিধু রাজ্য চালিয়ে দেখুন। অত সহজ নয়।
আরও পড়ুন – গিরের সিংহ নিয়ে নিজের সাফল্যে গর্বিত মোদী
সিধুর অভিযোগ ক্যাপ্টেনের পাক যোগাযোগ নিয়েও। এরই মধ্যে আবার রাজ্যে দলের কাজ নিয়ে ফোঁস করে উঠেছেন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ মনীশ তিওয়ারি। তিনি বিক্ষুব্ধ জি ২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা। তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে দলের এই হাল তিনি আগে কখনও দেখেননি। পঞ্জাবে দলের বর্তমান পরিস্থিতিকে মনীশ সোপ অপেরার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ভোটের মুখে পঞ্জাব কংগ্রেসের অবস্থা এতটাই খারাপ যে দলের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা হরিশ রাওয়াত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেচেঁছেন।
পঞ্জাবে যখন এই আকচাআকচি চলছে কংগ্রেসে, তখনই ওড়িশার প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ মাঝি সমর্থকদের নিয়ে বিজেডিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক শচীন বিড়লা রবিবারই যোগ দিলেন বিজেপিতে। রাজ্যে রাজ্যে খুবই দুঃসময় চলছে কংগ্রেসে। প্রায় তিন বছর হতে চলল, কংগ্রেসে পূর্ণ সময়ের সভাপতি নেই। কাজ চলছে অন্তর্বর্তী সভাপতি দিয়ে। আগামী বছর কয়েকটি রাজ্যে ভোট। দেখতে দেখতে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট চলে আসবে। মাজা ভাঙা কংগ্রেস কি উঠে দাঁড়াতে পারবে? রাজনৈতিক মহলে এখন তা নিয়েই চর্চা তুঙ্গে।