স্নেহের রাজীব,
গত প্রায় দুই মাস ধরিয়া তোমার কোনও খোঁজ নাই। গত ২ মে ভোটের ফল প্রকাশের পর সেই যে তুমি নিখোঁজ হইলে, তাহার পর তোমাকে আর দেখাই যাইতেছে না। তোমাকে না দেখা যাইতেছে মুরলীধর সেন লেনে, না দেখা যাইতেছে হেস্টিংসে। তোমার নামে বিভিন্ন স্থানে পোস্টার পড়িয়াছে বলিয়া শুনিলাম। তোমা বিহনে ডোমজুড়ের মানুষ বড়ই কষ্টে রহিয়াছে। তাহাদের কত আশা ছিল, তুমি পাশে থাকিবে। পরাজিত হও বা জয়ী হও, ডোমজুড়কে তুমি ভুলিবে না, ইহাই সকলে ধরিয়া বসিয়া ছিল। কিন্তু এখন তোমার দেখাই পাওয়া যাইতেছে না। তুমি এখন কোথায়, কেহই জানে না। দল বদল করিয়া তুমি যে এমন ডুমুরের ফুল হইয়া যাইবে, কে তাহা জানি তো?
আরও পড়ুন: ‘মোদি ভিক্ষার ঝুলি ধরবেন’, তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্তব্য বিজেপি কর্মীদের
ভোটের আগের দিনগুলির কথা খুব মনে পড়িতেছে। তুমি কত কথা বলিয়াছিলে। জিতিলে কী কী করিবে, তাহার বিস্তারিত বিবরণ দিয়াছিলে। আমরা খুব আশা করিয়াছিলাম, তুমি জিতিয়া তোমার প্রতিশ্রুতি পালন করিবে। কিন্তু জেতাই তো তোমার হইল না। ডোমজুড়ের মানুষ তোমাকে খালি হাতে ফেরাইল।
তুমি প্রাপ্তবয়স্ক। তুমি তো ভালো করিয়াই জান, ভোটে বা খেলায় হার জিৎ আছে। একদল বা একজন জিতবে, অন্য দল বা অন্য একজন হারিবে। তাই বলিয়া অভিমান করা কি সাজে? সেই যে ভোটের ফল প্রকাশের পর তুমি নিভৃতবাসে চলিয়া গেলে, এটা কি ঠিক হইল, রাজীব?
ভোটের আগে তোমাকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা কতই না খাতির যত্ন করিয়াছে। দিল্লি হইতে চার্টার্ড ফ্লাইট পাঠাইয়া তোমাকে এবং তোমার সঙ্গীদের উড়াইয়া নিয়া গিয়াছেন দিল্লির নেতারা। হেতু কী? না, তুমি দল বদল করিবে। কত জনের এই রকম ভাগ্য আছে, বল তো? তুমি বিজেপিতে যোগ দিবে বলিয়া উহারা বিশেষ বিমান পাঠাইয়া দিলেন। সেই বিমানে চড়িয়া তোমরা দিল্লি পৌঁছাইলে। অমিত শাহের হাত হইতে পতাকা লইয়া আবার বিমানেই ফিরিয়া আসিলে কলকাতায়। আমি আজ পর্যন্ত কখনও বিমানে চড়িবার সুযোগ পাই নাই। আর তোমরা রাজনীতি করিবার কারণে কেমন এ পাড়া, ও পাড়ায় যাওয়ার মতো করিয়া বিমানে চড়িয়া বেড়াও। অবশ্য ইহা তোমাদের কপাল। ভাবিও না, ইহা লইয়া আমি ঈর্ষা করিতেছি।
যাক সেই প্রসঙ্গ। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, তখন তোমাকে লইয়া বিজেপিতে কতই না মাতামাতি। কিন্তু কী ফল হইল? পর্বতের মূষিক প্রসব হইল। তুমি হারিলে, তোমার নতুন দল কার্যত মুখ থুবড়াইয়া পড়িল। এখন তোমার গলায় ফের ভিন্ন সুর শোনা যাইতেছে। তুমি বলিতেছ, বিপুল ভোটে জিতিয়া আসা একটি সরকারকে এখন আক্রমণ করা ঠিক নয়। কেবল ৩৫৬ ধারার জুজু দেখাইলে মানুষ তা ভালোভাবে লইবে না। ইহা তোমার আগে মনে হইল না? যে তুমি ভোটের আগে দল বদল করিয়া তোমার পুরানো দলের বাপবাপান্ত করিয়া ছাড়িয়াছ, সেই তুমি এখন ফের ভোল বদলের অপেক্ষায়? আজ তুমি কুণাল ঘোষের বাড়ি যাইতেছ। কাল তুমি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি যাইতেছ। ইহা কীসের ইঙ্গিত? লজ্জা শরম কি সব বিসর্জন দিয়া বসিয়াছ? মানুষ কিন্তু তোমাদের মতো গিরগিটি শ্রেণির নেতাদের ভালো চোখে দেখিবে না।
যাহাই হউক। তোমাকে দীর্ঘ দুই মাস না দেখিয়া খুবই উৎকণ্ঠায় রহিয়াছি। যেখানেই থাক, সত্ত্বর ফিরিয়া আইস। ভালো থাকিও।
পুনশ্চঃ তুমি নিশ্চয়ই টের পাইয়াছ, তোমার বিরুদ্ধে ডোমজুড়ের মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ? তোমাকে যাতে আবার পুরানো দলে না ফেরানো হয়, তাহার জন্য মানুষ রাস্তায় নামিয়াছে। তোমার কুশপুতুল পোড়ানো হইয়াছে। রাস্তা অবরোধ হইয়াছে। আরও কত কী হইবে, কে জানে।
ইতি তোমার
এক শুভানুধ্যায়ী