চুঁচুড়া : বয়স ৭৪ বছর। ৪৫ বছর বাসে কন্ডাকটারি করার পর এ বয়সে নিঃস্ব তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের পদ্মপুকুর এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র বাবু। তাই পেট চালাতে হাত পাততে হয় স্কুল মাস্টার ছেলের কাছেই। কিন্তু তাতেও সুরাহা মেলে না। দুবেলা তো দূর কোন রকমে দু’মুঠো খাবারও জোটে না তার। বাবার দায় এড়িয়েছে ছেলে। তাই এই বয়সে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে শনিবার পুলিশের দ্বারস্থ হলেন রবীন্দ্রনাথ বাবু। স্কুল শিক্ষক, ছেলে মানিক ঘোষ -এর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় এদিন অভিযোগ জানায় বাবা, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
সাদা পাকা দাড়ি। মাথায় অল্পবিস্তর পাকা চুল। বয়সের ছাপ মুখে স্পষ্ট। কাজ করার মতন ক্ষমতা হারিয়েছেন। তাই সর্বস্বান্ত হয়ে ছেলের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকাই ভরসা। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এভাবেই দিন কাটাতে হচ্ছে তাকে। চেনা জানা বন্ধুবান্ধবের কাছেও হাত পাততে হয়েছে পেট চালাতে। এভাবেই অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। শনিবার এমনটাই দাবি করেছেন রবীন্দ্রনাথ বাবু।
আরও পড়ুন রাজ্যে বাড়ল করোনা বিধিনিষেধের সময়সীমা
তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ছয় বছর ধরে তিনি একাই রয়েছেন। ৬ বছর আগে স্ত্রী মারা যান। আর তারপর থেকেই ছেলে তার খাওয়া-পরার দায়িত্ব নেয়। যদিও সে দায়িত্ব নাম মাত্রই। তবুও যে টাকা ছেলে মানিক ঘোষ দেন তা দিয়ে একার সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে ।
ছেলে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়েও এ ধরনের আচরণ তিনি আশা করেন নি একমাত্র ছেলেকে ৪৫ বছর ধরে টিকেট কন্টাক্টরের কাজ করে মানুষ করেছেন স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একা হাতে সংসার চালিয়েছেন। সময়-অসময়ে ছেলের পাশে থেকেছেন। এতকিছুর পরেও ছেলের এহেন আচরণে নিজেকে দুর্ভাগা মনে করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রবীন্দ্রনাথ বাবু।
আরও পড়ুন পিছু হঠল মাইসুরু বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রীদের বাইরে বেরনোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
যদিও ছেলে মানিক ঘোষ তার অভিযোগের বিরুদ্ধে জানিয়েছেন এই ঘটনা, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে । ২০০৬ সাল থেকে সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি নিজেই। প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করে ৬ জনের সংসার চালাতে হয় তাকে। প্রতি মাসে বাবাকে দেড় হাজার টাকার বেশি হাত খরচা দেন। তাই বাবার প্রতি তার অবিচারের যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারেই ভুল। এমন কোনও অবিচার তিনি করেননি বলেই জানিয়েছেন মানিক ।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই বাড়িতে বাবা ছেলের অশান্তি লেগেই আছে। যে কারণেই হয়তো বাবা, ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। সম্পত্তি নিয়েও একাধিকবার বিবাদে জড়িয়েছেন তাঁরা। যেখান থেকেই বাবার প্রতি দুর্ব্যবহার শুরু হয়। বলেই মত স্থানীয় বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন ভরসন্ধ্যায় গুলি তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের, আতঙ্কে বাসিন্দারা
যা একেবারেই কাম্য নয় এক জন শিক্ষকের। সমাজ গড়ার কারিগর, একজন শিক্ষকের যদি এই আচরন হয় তাহলে তার কাছে যেসব শিশুরা শিক্ষা গ্রহণ করছেন তারা কি শিখবে? এ নিয়েও প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। যা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা বলে জানিয়েছেন তারা।