ঋদ্ধিমান সাহা আর বাংলার ক্রিকেটার নন। শনিবার সরকারিভাবে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার থেকে ‘নো অবজেকশন’ রিলিজ অর্ডার নিয়ে নিলেন। পরে বাংলার ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানানো হল: ঋদ্ধিকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দেওয়ার হয়েছে। সিএবির রিলিজে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়েছে :, ‘ঋদ্ধিমান সাহা সিএবিতে আসেন এবং সভাপতি অভিষেক ডালমিয়ার কাছে অ্যাসোসিয়েশন ছাড়ার আবেদন জানান। সাহার অনুরোধ মতোই তাঁকে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলার জন্য এনওসি দিয়েছে সিএবি। সেই সঙ্গে তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন।’
এর আগে জাতীয় দলের হয়ে খেলা, বাংলার অন্যতম সফল পেসার অশোক দিন্দাকে্ও বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলতে যেতে হয়েছিল। কোচ অরুনলালের সঙ্গে ঝামেলায় বাংলা ছেড়েছিলেন দিন্দা। এবার ঋদ্ধির অন্য রাজ্যের হয়ে খেলতে চাওয়ার কারণটাও বহু চর্চিত। সিএবি যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাসের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই রাজ্য দলের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নেন ঋদ্ধি। মজার ব্যাপার হল, কোচ ও কর্মকর্তা কিংবা সাপোর্ট স্টাফরা শত আপরাধেও বহাল তবিয়তে বাংলার ক্রিকেটে বিরাজ করেন।আর সরে জেতে হয় ক্রিকেটারদের।
কারণ যাই হোক না কেন,এ্ভাবে আর কতদিন বাংলার অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের রাজ্য ছেড়ে যেতে হবে, ময়দানেই শুধু নয়, দেশের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যা আজ জেনে গেছে।
BCCI Media: ঋদ্ধিমানের অভিযোগে সুবিচার, ‘ব্যান’ বোরিয়া
শনিবার বেলা ১টা নাগাদ তিনি সিএবিতে এসেছিলেন। মিনিট পঁয়তাল্লিশ ধরে ঋদ্ধিমানের কথা হয় সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া ও সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের (যিনি আবার বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাদা) সঙ্গে।
ঋদ্ধি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়েননি।তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে অন্য রাজ্যের হয়ে খেলার জন্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ঋদ্ধিমানকে দিয়ে দেয় সিএবি। সকলের মনে আছে, সিএবির পদাধিকারী দেবব্রত দাস ঋদ্ধিমানকে নিয়ে আপমানজনক মন্তব্য করার আগে স্নেহাশিসও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, সৌরভের নাম প্রচারমাধ্যমের সামনে আনায়।
এখন থেকে ১৫ বছর আগে, ২০০৭ সালে বাংলার হয়ে সীমিত ম্যাচে খেলতে শুরু করেছিলেন শিলিগুড়ির ঋদ্ধিমান। টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক একই বছরের এপ্রিল মাসে।আর রঞ্জি অভিষেক ২০০৭ সালে।ক্রিকেটার ঋদ্ধিমানের সঙ্গে বাংলার সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরের সম্পর্ক শেষ হল শনিবার।২০২২ সালে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দল থেকে যান ঋদ্ধিমান।এই বাদ পড়ার পর তিনি বলেছিলেন, বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভরসা পাওয়ার পরেও দল থেকে ছিটকে গিয়ে তিনি হতবাক। যদিও তিনি এটাও জানিয়েছিলেন , ভারতের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই ঋদ্ধিকে বলে দেন তাঁকে টেস্ট দলের জন্য আর ভাবা হচ্ছে না। সৌরভের সঙ্গে কথোপকথন প্রকাশ্যে আনায় সিএবি দুই কর্তা ঋদ্ধিমানের সমালোচনা করা শুরু করেন। কিন্ধু ঋদ্ধি সবচেয়ে বেশি অপমানিতবোধ করেছিলেন, সংস্থার যুগ্ম সচিব দেবব্রত দাস তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়।
Exclusive Widdhiman: ‘আমার জন্য কাউকে কিছু করতে বলিনি কোনোদিন, নিজের যোগ্যতায় বিশ্বাসী’
ঋদ্ধিমান ভারতীয় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর সিএবিকে জানিয়েছিলেন, তিনি এই বছর রঞ্জি ট্রফিতে খেলবেন না। স্ত্রীর অসুস্থতা, টানা বায়ো-বাবলে দিন কাটানো নিয়ে মানসিক অস্থিরতায় থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়ে ছিলেন। সিএবি’র প্রথম সারির কর্তা দেবব্রত দাস(ময়দানে টাউন ক্লাবের প্রতিনিধি) ঋদ্ধিমানকে নিয়ে যে কটূক্তি করে ছিলেন সেটি নিয়ে নিন্দা করেছিলেন অনেকেই।
প্রচার মাধ্যম প্রতিনিধি বোরিয়া মজুমদার ঋদ্ধিমানকে হুমকি দিলেও ‘বিশেষ’ কারণে ঋদ্ধির পাশে প্রকাশ্যে দাঁড়ায়নি সিএবি।বোরিয়া–বাঙালি।বিসিসিআইয়ের এক ক্ষমতাশালী কর্তার ছত্রছায়ায় ছিলেন এই শাস্তিপ্রাপ্ত বোরিয়া।
ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। এবারের আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্সের হয়ে নজর কাড়া ক্রিকেট খেলেন ঋদ্ধিমান।রঞ্জি নক আউট পর্বে বাংলা দলে তাঁকে রাখা হয়,ঋদ্ধির সঙ্গে কথা না বলেই। তবুও বাংলার হয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঋদ্ধিমান শর্ত দেন: দেবব্রত দাসকে জনসমক্ষে নি:শ্বর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া অবশ্য দেবব্রতর বক্তব্যের দায় সংস্থার উপর নিতে চাননি।বলেছিলেন, সেই কর্তার ব্যক্তিগত মত।
এরমাঝে আরও কিছু ঘটনা ঘটে। আপমানিত হয়ে ঋদ্ধিমান বাংলা দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দলের জন্য সাফল্য কামনা করে নিজেকে সরিয়ে নেন।সিএবি’র সেই কর্তাটি সামান্যতম দু:খ প্রকাশ কোথাও করেননি। ময়দানে এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠীতে তিনি আছেন। শোনা যাচ্ছে, সেই গোষ্ঠীর অতি প্রভাবশালী কর্তার ক্লাব দলের আর্থিক দায় দায়িত্ব নাকি এই টাউন ক্লাব কর্তাটি সামলান! তাই হয়তো ঋদ্ধিমান ইস্যুতে তিরষ্কৃত না হয়ে পুরষ্কৃত হয়েছেন।তিনি ভারতীয় দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার হয়ে জাতীয় দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করছেন।
নো অবজেকশন লেটার হাতে নিয়ে ঋদ্ধিমান নাকি বলেছেন, একটি বিশেষ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নাম না করে বুঝিয়েছেন- দেবব্রতই দায়ী। ভবিষ্যতে কোনও প্রয়োজনে বাংলাকে সহযোগিতা করতেও তিনি পিছ পা হবেন না। কিন্তু সেই কর্তাটি সিএবিতে থাকলে।কথা প্রসঙ্গে ঋদ্ধি এক বলেন, এইসব নিয়ে বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার – প্রধান কর্তা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও কথা হয়নি।
ছবি:সৌ-সিএবি, টুইটার।