ফ্রান্স–১ জার্মানি–০
(ম্যাটস হামেলস–নিজ গোল)
সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে ইউরোর আগে জার্মানি টিমে ম্যাটস হামেলস এবং টমাস মুলারকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। কিন্তু তাঁর ও জার্মানির দুর্ভাগ্য আড়াই বছর পরে জাতীয় দলে ফিরেই সেই হামেলস মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারলেন না। কুড়ি মিনিটে দূর থেকে ভেসে আসা একটা বল হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলেই ঢুকিয়ে দিলেন বিশ্ব কাপ জয়ী সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। তবে ইউরোর প্রথম ম্যাচে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে জার্মানির হারের পিছনে হামেলসের গোল খাওয়া কোনও কারণই নয়। ক্ল্যাশ অব টাইটানসে যে কোনও দলই জিততে পারত। ফ্রান্স জিতেছে তাদের সংগঠিত ডিফেন্সের জন্য। জার্মানি হেরেছে প্রাপ্ত সুযোগগুলি থেকে গোল করতে না পারার জন্য। ম্যাচের তুল্যমূল্য বিচারে জার্মানিকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। পাসিং থেকে ট্যাকলিংয়ে যে টিমটা অসম্ভব শৃঙ্খলা দেখিয়েছে তাদের আত্মঘাতী গোলে হেরে যাওয়াটা দেখতে যতই খারাপ লাগুক, এটাই ফুটবল। দেয়ও যেমন, কেড়ে নেয়ও তেমন।
দুই টিমের অনেকগুলো বিশ্ব সেরা ফুটবলার ছাড়া দেখার ছিল দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কোচের মস্তিষ্কের লড়াই। জোয়াকিম লো-র মতো দিদিয়র দেশঁ-ও বিশ্ব মুকুট মাথায় পরেছেন। উয়েফার ক্রীড়াসূচি ঘোষণার পর দুই কোচই নিজেদের ছক তৈরি করার অনেক সময় পেয়েছেন। একে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ। তার উপর সেরার সঙ্গে সেরার লড়াইয়ে কোনও কোচই দুঃসাহসী কোনও ছক ভাঁজেননি। ফ্রান্স যেমন তাদের সেরা তিন ফরোয়ার্ডকেই সামনে রেখেছিল। আঁতোয়া গ্রিজম্যান, করিম বেঞ্জামা এবং কিলিয়ান এম্বাপের পিছনে পল পোগবা, এনগোলো কন্তে। আর জার্মানি টিমো ওয়ার্নার কিংবা লেরয় সানেকে না নামিয়ে সামনে শুধু সার্জ নাব্রিকে সামনে রেখে তাঁর পিছনে রেখেছিলেন টমাস মুলার, কাই হাভাৎর্জ এবং টনি ক্রূসদের। মিউনিখের অ্যালায়েঞ্জ এরিনায় জার্মান আক্রমণকে রুখতে রাফায়েল ভারানের নেতৃত্বে ফ্রান্স ডিফেন্সকে অনেক কঠিন সময় পেরোতে হলেও তাদের দিশেহারা করা যায়নি। ফরাসি কোচ দিদিয়র দেশঁর সমালোচকরা তাঁকে ডিফেন্সিভ কোচ বলেন। ফুটবলার হিসেবে বিসহব কাপ জয়ী অধিনায়ক দেশঁ ছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। সেই ধারণা থেকেই তিনি ডিফেন্সটাকে আটোঁসাঁটো করতে চান। সেটা যে কতটা কার্যকরী তা মঙ্গলরাতে দেখল ফুটবল বিশ্ব।
গোলের সুযোগ যে জার্মানি পায়নি তা নয়। ইকের গ্রূন্ডোগানরা পাসের বন্যা বইয়ে গোল মুখ খুলে ফেলেছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু টমাস মুলাররা সেই সব সুযোগ থেকে গোল করতে পারেননি। ফ্রান্সের ভাগ্যও যে খুব ভাল ছিল তা নয়। এক ম্যাচে দু বার তাদের গোল বাতিল হয়েছে অফ সাইডের অজুহাতে। প্রথমবার কিলিয়ান এম্বাপের, দ্বিতীয় বার করিম বেঞ্জামার। আবার মিডফিল্ডার রাবিয়েতের শট লাগল পোস্টে। কিন্তু ফ্রান্স যে দুভার্গ্যের শিকার হয়নি তার প্রমাণ তো জার্মানির আত্মঘাতী গোল। কুড়ি মিনিটে পল পোগবার কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে উঠে লুকাস হার্নান্ডেজ সেন্টার করেন কিলিয়ান এম্বাপের উদ্দেশে। কিন্তু সেটাকে ক্লিয়ার করতে গিয়ে হামেলসের হেড গোলে ঢুকে যায়। একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন ম্যানুয়ের ন্যয়ার। কিন্তু বলে হাতই ছোঁয়াতে পারেননি।
প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে হারানোয় ফ্রান্স একটু ভাল জায়গায় চলে গেল। এখন গ্রূপের পর্তুগাল-জার্মানি ম্যাচের দিকে নজর থাকবে সবার। জার্মানির সেদিন মরণবাঁচন ম্যাচ। জার্মানির কোচ হিসেবে জোয়াকিম লো-র সেদিন অগ্নি পরীক্ষা।