মাঝে মাঝে এ রকম হয়। প্রথম ম্যাচেই মহারণ।
শুধু ইউরোপ নয়, ফুটবল বিশ্বের সেরা দুটি দেশ হল ফ্রান্স আর জার্মানি। সাধারণত তাদের দেখা হওয়ার কথা সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালে। যেমন ২০১৬-র ইউরোতে ফ্রান্স আর জার্মানির দেখা হয়েছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু এবার ইউরোর গ্রূপ লিগেই দেখা হচ্ছে। এফ গ্রূপকে বলা হচ্ছে গ্রূপ অব ডেথ। ফ্রান্স, জার্মানির সঙ্গে গ্রূপে আছে পর্তুগাল এবং হাঙ্গারি। মঙ্গলবারই মিউনিখে ফ্রান্স মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানির।
ফ্রান্স বর্তমানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারা গত ইউরোর রানার্স। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও ভাল। তার উপর ইউরোর আগে কোচ দিদিয়র দেশঁ টিমে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন করিম বেঞ্জামাকে। ২০১৫-র পর আবার ফ্রান্সের নীল জার্সি পরে মাঠে নামবেন রিয়াল মাদ্রিদের বেঞ্জামা। ২০১৮-র বিশ্ব কাপ ফাইনালে ফ্রান্সের যে টিমটা খেলেছিল, জার্মানি ম্যাচে তার থেকে মাত্র তিনটি পরিবর্তন হচ্ছে। সেন্টার ব্যাকে স্যামুয়েল উমতিতির জায়গায় আসবেন প্রেসনেল কিমপেম্বে। মাঝ মাঠে ব্লাইসে মাতুইদির বদলে আদ্রিয়েন র্যাবিয়ট এবং ফরোয়ার্ডে অলিভার জিরুর বদলে বেঞ্জামা। তবে জিরু কিন্তু স্কোয়াডে আছেন। প্রয়োজনে তাঁকে অবশ্যই ব্যবহার করবেন দেশঁ।
ফ্রান্সের গোলে অধিনায়ক হুগো লরিস। চার ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন পাভার্ড, রাফায়েল ভারানে, প্রেসনেল কিমপেম্বে এবং লুকাস হার্নান্ডেজ। মাঝ মাঠে পল পোগবা, এনগোলো কন্তে এবং আদ্রিয়েন র্যাবিয়ট। ফরোয়ার্ডে আঁতোয়া গ্রিজম্যান, করিম বেঞ্জামা এবং কিলিয়ান এম্বেপে। কদিন আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে চেলসির হয়ে যে ফুটবল খেলেছেন এনগোলো কন্তে তা তিনি ইউরোয় খেলতে পারলে ফ্রান্সের জয় পাওয়া নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। তাঁর পাশে পল পোগবা এবং সামনে কিলিয়ান এম্বেপে, বেঞ্জামা এবং গ্রিজম্যান থাকায় গোল পেতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় দেশঁর টিমের। তিন বছর আগে উনিশ বছরের এম্বেপে বিশ্ব কাপে যে ফর্মে ছিলেন এখন তার চেয়েও তিনি অনেক বেশি পরিণত। গোলের মধ্যেই আছেন। ফ্রান্সকে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই চ্যাম্পিয়ন হবে বলে মনে করছেন। গত ছটা ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছে পাঁচটিতে, একটা ম্যাচ শুধু ড্র।
প্রথম ম্যাচে জার্মানির মুখোমুখি হওয়ায় একটু হলেও ভাবতে হচ্ছে দেশঁকে। জার্মানি ইদানিং যে খুব ভাল খেলছে তা নয়। গত বিশ্ব কাপে তারা গ্রূপ লিগের গন্ডি পেরোতে পারেনি। উয়েফা নেশনস লিগে তাদের পারফরম্যান্স বলার মতো নয়। ফিফা ফ্রেন্ডলিতে তারা স্পেনের কাছে সাত গোল খেয়েছে। উয়েফার কোয়ালিফাইং ম্যাচগুলিতেও আহামরি কিছু করতে পারেনি। তাদের বিশ্ব কাপ জয়ী কোচ জোয়াকিম লো-র এটাই শেষ টুর্নামেন্ট। ২০০৬-এর বিশ্ব কাপের পর থেকে তিনি জার্মানির দায়িত্বে। জিতেছেন বিশ্ব কাপ, কনফেডারেশন কাপ। ইউরোর ফাইনাল-সেমিফাইনাল খেলেছেন। তাঁর সঙ্গে জার্মানির ফেডারেশনের চুক্তি ছিল সামনের বছরের বিশ্ব কাপ পর্যন্ত। কিন্তু ইউরোর পরেই তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন।
লো-র বিদায়ী টুর্নামেন্টে কি তাঁর ছেলেরা তাঁকে বড় কিছু উপহার দিতে পারবেন? অসম্ভব নয়। জার্মানি তো বড় টিম। চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তিন বারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন। এবারের টিমে লো ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন সেন্টার ব্যাক ম্যাটস হামেলস এবং ফরোয়ার্ড টমাস মুলারকে। ওঁরা দুজনেই ব্রাজিল বিশ্ব কাপ জয়ী দলের সদস্য। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লো যে টিমের কথা ভেবেছেন তাতে গোলে আছেন ম্যানুয়েল ন্যয়ার। বিশ্বের এক নম্বর গোলকিপার জার্মানির অধিনায়ক। প্রায়শই গোল এরিয়া ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডিফেন্সকে সাহায্য করেন। তাই তিনি সুইপার কিপার। চার ব্যাক কিমিচ, হামেলস, রুডিগার এবং জিন্টার। মাঝ মাঠে ইকের গ্রূন্ডোগান, টনি ক্রূস এবং গোসেনস। ফরোয়ার্ডে কাই হার্ভাৎজ, টমাস মুলার এবং সার্জ নাব্রি। প্রথম ম্যাচে একটু মেপে খেলতে চাইবে দুই দলই। কারণ গ্রূপে আরও দুটি ম্যাচ আছে। ঝুঁকি নিতে চাইবে না কেউই। তবে দুটো সেরা দল যখন পরষ্পরের মুখোমুখি হয় তখন ডিফেন্সিভ খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে কতক্ষণ? বিশেষ করে দু দলেই যখন গোল করার একাধিক লোক আছে। নিজেদের মাঠে দর্শক সমর্থন পাবে জার্মানি। তবে তাতে খুব যে সুবিধে হবে তা না ভাবাই ভাল।
কারণ দু দলের যা ওজন যে কোনও দলই জিততে পারে। কিন্তু মাঠে নামার আগে কাউকেই ফেভারিট বলা যাচ্ছে না।