কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সওয়াল করা নতুন কিছু নয়, বেআইনিও নয়। আইনের ধারা অনুযায়ী করা যায়। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী নিজেই নিজের সওয়াল করেছেন, বহু অপরাধী নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে গান্ধীজি সমেত যাঁরা নিজের হয়েই ওকালতি করেছিলেন তাঁদের অনেকেই ছিলেন আইনজীবী। আবার ভগৎ সিংয়ের মতো বিপ্লবী যিনি আইন নয় সেদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই নিজেই সওয়াল করতে নেমেছিলেন। আবার কুখ্যাত অপরাধী সিরিয়াল কিলার চার্লস শোভরাজ জেলে থেকে রীতিমতো আইন পড়েই নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করেছেন, নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড থেকে বেরিয়ে এসে জেল খেটে এখন মুক্ত। সেই আইনি সুযোগই নিতে চেয়েছেন কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়। কারণ আমরা সবাই জানি এটা তো আইনের লড়াই নয়, এটা বিশুদ্ধ রাজনীতি, এটা বিরোধিতার পুরস্কার। তিনি সেই বিরোধিতাকেই আরেক স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আদালতের কাছে এই প্রার্থনা করেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে জেলে থাকা একজনও কি এই সাহস দেখাতে পারবেন? তিনি বিচারকের সামনে দাঁড়িয়েই বলেছেন আমাকে হ্যারাস করার চেষ্টা হচ্ছে এটা এক লিগ্যাল ডিপ ফেক, মানে এক সাজানো ষড়যন্ত্র। এবং উনি সাফ জানান আমি জামিন চাইছি না, জামিনের আবেদন করছি না। কেবল আদালতকে জানাতে চাই যে দেশের এক ভিজিলেন্স এজেন্সি দেশের সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আমিও সেই ষড়যন্ত্রের শিকার মাত্র, জামিন নয় বিচার চাইছি। আসমুদ্রহিমাচল আমাদের দেশের প্রত্যেক বিরোধিতাকেই সরকার এভাবেই স্তব্ধ করতে চায়, তার বিরুদ্ধে বিরোধিতার ওই স্বরকেই আরও জোর করার জন্যই উনি যা বলেছেন সেটাই বিষয় আজকে, আমি নিজেই আমার সওয়াল করতে চাই: কৌস্তুভ রায়।
বিচারকও জানিয়েছেন উনি রাজি কিন্তু তার জন্য কিছু লিগ্যাল ফর্মালিটিজ আছে যা পালন করতে হবে কাজেই এই বাংলায় ইডি মামলায় এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে যেখানে অভিযুক্ত নিজেই নিজের মামলার সওয়াল করবেন। যে মামলায় ইডি কৌস্তুভ রায়কে গ্রেফতার করেছে তার ভিত্তি নিয়েই এদিন তিনি যা বলেন তা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। তিনি এদিন আদালতে যা বলেন তার সারমর্ম হল ওনাকে যে বয়ান, যার বয়ানের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা তো আদালতের রায়েই মিথ্যে, বানানো, ভিত্তিহীন। এমন একজনের বয়ানের ভিত্তিতে ওনাকে গ্রেফতার করা হল যিনি এই মুহূর্তে আদালতের রায়ে অপরাধী। মানে ক’ বছর আগেই যে লোকটা আদালতের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটছে, হঠাৎ তার কাছ থেকে একটা বয়ান পেয়ে গেল ইডি, এবং তার ভিত্তিতেই কলকাতা টিভির মালিক সম্পাদককে গ্রেফতার করা হল। উচ্চ আদালতের সেই মামলাতে কোথাও কি কৌস্তুভ রায়ের নাম ছিল? না ছিল না। সেই মামলা তিন চার বছর ধরে চলেছে, তখনও ওনার নাম একবারের জন্যও আসেনি, সেই মামলার রায়ের ফলে সেই ব্যক্তি জেল খাটছেন সেটাও তিন বছর হয়ে গেল। সেই রায়ে আদালত বলছে যে এই মানুষটি আদ্যন্ত ফেরেব্বাজ, সমস্ত ডকুমেন্ট বানানো, একটা কথাও বিশ্বাসযোগ্য নয়, মানুষকে ঠকিয়েই এই অপরাধ করেছে। সেই মানুষটির, হ্যাঁ সেই একমাত্র মানুষটির বয়ানের ভিত্তিতে কৌস্তুভ রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার একবার ভাবুন জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত নয়, জালিয়াতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে আছেন সেই মানুষের অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে দুশো দিন হয়ে গেল। সেই ভিত্তিহীন অভিযোগের অপরাধে অভিযুক্ত কৌস্তুভ রায় আদালতে গিয়ে বলছেন, অনেক হয়েছে, এটা আইনের বিষয়ই নয়, এটা রাজনীতির বিষয়, আমাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, আমাকে হ্যারাস করা হচ্ছে, এবার আমি আদালতে দাঁড়িয়ে আমার কথা নিজেই বলব। আমরা আমদের দর্শকদের কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর বয়ানের ভিত্তিতে আমাদের চ্যানেলের সম্পাদক আজ ২০০ দিনেরও বেশি জেলেই আছেন, ইডির এই গ্রেফতারি কি আসলে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানোর জন্যেই করা হচ্ছে? এই গ্রেফতারি দিয়ে কি আসলে বিরোধীদের মাথা নোয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? শুনুন মানুষজন কী বলছে।
আরও পড়ুন: Aajke | শেখ শাহজাহানরা ইজ্জত কেড়ে নিত হিন্দু মহিলাদের
মানুষের শাশ্বত বিশ্বাস একদিন সূর্যের ভোর হবেই, একদিন মিথ্যা হেরে যাবে, স্বৈরাচারের পতন হবেই, নিরন্ধ্র নির্মম পতন। কিন্তু তা তো এমনিই হবে না, মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই রুখে দিতে পারে স্বৈরাচারকে, ইতিহাস সেই কথাই বলে। কৌস্তুভ রায় জেলে, বেশ হয়েছে দেখ কেমন লাগে, বলে নিরাপদ দূরত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের মনে করিয়ে দিই জার্মানির এক ধর্মযাজক মার্টিন নেমলারের কবিতা,
যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি কোনও কথা বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।
তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে এল ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে মারতে, আমি তখনও চুপ করে ছিলাম, কারণ আমি ইহুদি নই।
আবারও আসল ওরা ক্যাথলিকদের ধরে নিয়ে যেতে,আমি টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করিনি, কারণ আমি ক্যাথলিক নই।
শেষবার ওরা ফিরে এল আমাকে ধরে নিয়ে যেতে,
আমার পক্ষে কেউ কোনও কথা বলল না, কারণ, কথা বলার মতো তখন আর কেউ বেঁচে ছিল না।”
২০০ দিনের উপরে আমাদের সম্পাদক জেলে, অন্যায় অভিযোগে, প্রতিবাদ করুন। আমরা জামিন চাইছি না, আমরা মুক্তির আবেদনও করছি না, আমরা চাই জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।