থাকে, এরকম কিছু ক্রনিক ডিজিজ থাকে, সারে না, অবরে সবরে তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, দাদ, একজিমা, হাঁপানি ইত্যাদি সেই গোত্রের রোগ। কখনও মনে হবে ব্যস, এ তো সেরেই গেছে, ঠিক যখন সেরে ওঠাটা সেলিব্রেট করতে যাবেন, সেদিনেই আপনার পায়ের গোড়ালিতে সেই অসহ্য চুলকানি, সে আসিয়াছে ফিরিয়া। তো রাজনৈতিক দলেও এরকম বেশ কিছু থাকে। এঁরা কখনও সম্পদ, কখনও আপদ। আচ্ছা বলুন দেখি কাঁথি তমলুকে গিয়ে ওই হেড অন কলিশনে যাওয়ার ক্ষমতা তৃণমূলে ক’জন নেতার আছে? ক’জন নেতা শুভেন্দুর ওই তুই-তোকারির জবাব তুই-তোকারিতেই নেমে আরও তীব্রভাবে দিতে পারেন? এক ওই কুণাল ঘোষ ছাড়া? আবার এই কুণাল ঘোষ জেলে থেকেই হেডলাইন হয়েছেন, তখন কুণাল ঘোষের কোট দিয়ে প্রথম পাতায় খবর করেছে গণশক্তি। মমতা হল চোরেদের রানি। বলেছেন, এক মুখ দাড়ি, হাতে শিকল, নাটকের এক শেষ। আবার জেল থেকে বেরিয়েই যে উনি সিপিএম জয়েন করবেন সেটা তো কেউ আশা করেনি বরং মুরলীধর লেনে ঠাঁই পাড়বেন কি না সেদিকেই লোকজনের নজর ছিল। সেই কুণাল ঘোষ তৃণমূলের ফিরলেনই কেবল নয়, স্বমহিমাতেই ফিরলেন, দলের বিভিন্ন ইকুয়েশনকে অনায়াসে আয়ত্ত করেই কুণাল ঘোষ ধীরে ধীরে আবার ফ্রন্ট পেজে। সাংবাদিকদের কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সাংবাদিকরা কী চান, কোন খবরের কোন অংশটা হেডলাইন হবে তার হাল-হকিকত জানা কুণাল ঘোষ কিছুদিনের মধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক, দলের মুখপাত্র। উনি মন্ত্রীকে থামিয়ে নিজের কথা বলেন, দলের এমপির বিরুদ্ধে সপাটে বলে দেন। মিডিয়া ডার্লিং কুণাল ঘোষ খবরের কাগজের এক থেকে আটের পাতায় অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছেন প্রতিদিন। সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোল সামলেছেন, নিজের মামলা সামলেছেন, ব্যবসা সামলেছেন কিন্তু ওই একজিমার মতোই মাঝেমধ্যে উঠে এসেছেন প্রথম পাতায়, এটা তাঁর অভ্যেসও বলা যায়। তাই সেটাই বিষয় আজকে।
এমনিতে তৃণমূল দলে কি অন্য কারও কথা শোনার দরকার আছে? দল কি সবাই মিলে চালায়? এসব অবান্তর প্রশ্ন, দলে একটাই পোস্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাকি সব ল্যাম্প পোস্ট। কেউ কেউ অভিষেক দেখাবেন বটে, তাঁদেরকে বলব, উনি ছুরির হাতল ছুরি নয়, বন্দুকের বাঁট, বুলেট নয়। উনি আছেন কারণ তিনি থাকতে দিয়েছেন। মমতা ব্যানার্জির সম্মতি ছাড়াই দলে কিছু হয়ে যাচ্ছে এটা ভাবার কোনও কারণই নেই।
আরও পড়ুন: দেশের আইন কানুনের উপর এতটুকুও আস্থা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিজেপি নেতাদের
কাজেই গতকাল যে চিঠি দিয়ে কুণাল ঘোষকে আনুষ্ঠানিকভাবেই দলের সাধারণ সম্পাদক বা দলের মুখপাত্র পদ থেকে সরানো হল তাতেও দিদিমণির সায় আছে। কিন্তু এই নির্বাচনের প্রচারের ঘনঘটার মধ্যে এমনটা কেন? সেটা তো বুঝতে হবে? মানে এটা আগে করা যেত, মাসখানেক পরেও করাই যেত, কী এমন হল যে এখনই এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো? আরও বড় কোনও গল্প লুকিয়ে আছে এই সিদ্ধান্তের পিছনে। মামলা কুছ হজম নহি হুয়া, একটা ক্লাবের অনুষ্ঠানে কুণাল গেছেন, সেখানে আরও অনেকের সঙ্গে তাপস আছেন, যদিও এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয় যে উনি আছেন তা না জেনেই শিশু ভোলানাথের মতো কুণাল ঘোষ সেখানে হাজির হলেন। তারপরের বক্তৃতা তা আরও ইন্টারেস্টিং, আমি ডান দিকে রই না আমি বাম দিকে রই না আমি মধ্যখানে রই পরান জলাঞ্জলি দিয়া রে, মণিদার গানের মতো এক বক্তৃতা। এবং ওইটুকু বক্তৃতা দেওয়ার জন্যই নাকি দুম ফটাস, সব পদ থেকে তুলে নেওয়া হল কুণাল ঘোষকে। এত সরল ব্যাখ্যা? আসল ঘটনা কি উত্তর কলকাতার আসন ঘিরে? বিজেপির সঙ্গে কোনও ডিল ফাইনাল করার আগে? নাকি আবার দলের কিছু লোকজনদের ষড়যন্ত্রের শিকার কুণাল ঘোষ সেটা জানতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না, এখন কমিউনিস্ট পার্টির এবেলার খবর ওবেলায় বেরিয়ে যায়, এ তো তৃণমূল। কাজেই আপাতত অপেক্ষা করুন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করলাম এবার কুণাল ঘোষ কোন পথে হাঁটবেন বলে আপনাদের মনে হয়? শুনুন কী জবাব এসেছে।
বহু আমোদগেঁড়ে দলের লোক বা সাংবাদিক ইতিমধ্যেই কুণাল ঘোষের অবিচুয়ারি লিখে ফেলেছেন, আহা আহা আবার উঠতে গিয়ে পড়ে গেলেন? আমি জানি কুণালবাবু এসব নজরে রাখছেন, সময়মত ডিল করে নেবেন। এবং এটাও নিশ্চিত, ক’দিন পরেই আবার তিনি ভেসে উঠবেন এই ময়দানেই, আরও বেশি শক্তি নিয়ে। কাজেই নিদান হাঁকবেন না, ক্রনিক ডিজিজ কমে, থামে, সারে না।