কণাদ দাশগুপ্ত : সংগঠন দুর্বল, নেতানেত্রীরা অযোগ্য, ব্যর্থ৷ তাই ভাড়াটে সেনাই ভরসা বঙ্গ-বিজেপির৷ রোগের কারণ এবং রোগীর লক্ষণ বোঝার পর এমনই নিদান রাজ্য বিজেপির নতুন পর্যবেক্ষক সুনীল বনশলের৷ বৈদিক ভিলেজে আয়োজিত বিজেপির তিন দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিয়ে বনশলের বার্তা, ‘অন্য দলের নেতাদের বিজেপিতে আসার দরজা খোলা রাখতে হবে’। এখানেই শেষ নয়, অন্য দল থেকে পদ্ম-শিবিরে সামিল হওয়া দলবদলু নেতারা যাতে উপযুক্ত সম্মান পান, সে বিষয়েও নেতানেত্রীদের সতর্ক করেছেন বনশল।
২০২৩-এর পঞ্চায়েত এবং ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে দলকে আরও সংহত, কোন্দলমুক্ত এবং শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই পাঁচ তারা রিসর্টের মনোরম পরিবেশে শিবির খুলেছিল বিজেপি৷ তিনদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে বঙ্গ বিজেপিকে নানা ধরনের উপদেশ, পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন দিল্লির নেতারা৷ তবে সার কথাটি বলেছেন সুনীল বনশল৷এই বনশল বিজেপি’র অন্দরে পরিচিত ‘উত্তর প্রদেশে জয়ের কারিগর’ হিসাবে৷ বনশলের কৃতিত্বেই না’কি যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার সুযোগ পেয়েছেন৷ এবং বনশলের জন্যই না’কি মুখরক্ষা হয়েছে উত্তর প্রদেশের সাংসদ নরেন্দ্র মোদীর৷ বিজেপির শীর্ষমহল তাই বনশলের কথাবার্তাকে একটু বেশি নম্বর দেয়৷ সেই বনশলকেই বাংলার পর্যবেক্ষক করার পিছনে বিজেপির নির্দিষ্ট ছক রয়েছে৷ বনশলকে বিজেপি যত নম্বর দেয়, তাতে এটা স্পষ্ট, খামোকা সময় নষ্ট করার জন্য তাঁকে বাংলার পর্যবেক্ষক করা হয়নি৷ কিন্তু ওই বনশল প্রথম দিন এসেই বুঝতে পেরেছেন বঙ্গ-বিজেপির এই নেতাদের দিয়ে কোনও কাজ হবে না৷ দরকার দক্ষ নেতা৷ কিন্তু রাজ্য বিজেপির অন্দরে জোর তল্লাশি চালালেও যে মনোমত নেতা মিলবে না, তা শহরে পা রাখার ৪৮ ঘন্টাতেই বুঝে ফেলেন বনশল৷ তাই তাঁর উদাত্ত আহ্বান, “ভিন দলের নেতাদের দিকে নজর দেওয়া হোক৷ তাঁদের বিজেপিতে সামিল করার ব্যবস্থা হোক৷ অন্য দলের নেতাদের জন্য বঙ্গ-বিজেপির দরজা আরও চওড়া করতে হবে, দরজা খুলে রাখতে হবে৷” এই নিদানেইথামেননি বনশল৷ বলেছেন, “অন্য দল থেকে পদ্ম-শিবিরে সামিল হওয়া দলবদলু নেতারা উপযুক্ত সম্মান এবং স্বীকৃতিও পাবেন৷”
বনশলের এই বার্তায় রাজ্য-বিজেপি কার্যত উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে৷ একঘর নেতা-কর্মীদের সামনেই সুনীল বনশল বুঝিয়ে গেলেন রাজ্য নেতারা কোনও কাজের নয়৷ অযোগ্য, অদক্ষ, কোন্দলপ্রেমী, দলের মধ্যে গ্রুপ তৈরিতেই সিদ্ধহস্ত৷ এই নেতাদের সামনে রেখে একটি পঞ্চায়েতেও জয় আসবে না৷ রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েত ভোট বা লোকসভা নির্বাচন তো দূরের কথা৷ বিকল্প একটিই, অন্য দল ভাঙাও, নেতা আনো৷ দলকে আড়ে-বহরে বাড়াতে অন্য দলের নেতাদের জন্য দরজা খুলে রাখতেই হবে৷ সেই বার্তাই দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যের সদ্য নিযুক্ত পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে তৎকালীন পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এই নীতিই নিয়েছিলেন৷ একুশের ভোটের আগে দরজা আরও চওড়া হয়৷ সরকার গড়ার দাবিদার খেলা শেষ করে ৭৭ বিধায়কে, যা এখন দাঁড়িয়েছে ৬৯-এ৷ সাংসদও কমেছে ২ জন৷ বিধায়ক হতে যারা পদ্ম-পতাকা হাতে নিয়েছিলেন, ভোটে হেরে তাদের ৭০ ভাগই পুরোনো দলে ফিরে গিয়েছেন৷ আর দলের অন্দরে দগদগে ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে সীমাহীন কোন্দল, রাজ্য নেতাদের আলাদা আলাদা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে৷
সুনীল বনশল যেখানে হাত দেন, সেখানেই সোনা ফলে, বিজেপির এমনই বিশ্বাস ৷ ‘দরজা আরও চওড়া’ করার ডাক দেওয়া বনশল এখনও টের পাননি বঙ্গ-বিজেপির পদাধিকারীদের দৌড়৷ দলের উপকার করতে না পারুক, দলকে গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত করতে এরা প্রত্যেকেই সিদ্ধহস্ত৷ নিজেদের আসন টলে যাওয়ার ভয়ে এরা অন্য দলের কাউকেই দলে টিঁকতে দেবে না৷
বনশল ঠিকই বুঝবেন, একটু সময় লাগবে এই যা ৷