শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিকে জোরদার করতে বিভিন্ন কামতাপুর ভাষার দলগুলোর সঙ্গে গোপন ডেরায় বৈঠক করল গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টি। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির টেকাটুলিতে কামতাপুর পিপলস পার্টির সভাপতি নিখিল রায়ের নেতৃত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তায় আয়োজিত এই আলোচনা সভায় কামতাপুর ভাষার সমস্ত দলগুলির প্রতিনিধিসহ গ্রেটার কোচবিহার পিপলস পার্টির প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। রবিবার দুপুর দুটো থেকে শুরু হয়ে এই আলোচনা সভা চলে বিকাল চারটে পর্যন্ত। উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানায় বৈঠকে উপস্থিত সকলেই। সভায় তুলোধোনা করা হয় বাম সরকার থেকে বর্তমান তৃণমূল সরকারকে।
আরও পড়ুন সংক্রমণ কমলেও চিন্তা বাড়াচ্ছে দার্জিলিং
কামতাপুর পিপলস পার্টির সভাপতি নিখিল রায় বলেন, ‘’আজকেই প্রথম বৈঠক তাঁরা সারলেন। ধীরে ধীরে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই আলাদা রাজ্যের দাবীতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন’’।
উল্লেখ্য, গত ২রা মে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শেষ হতেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে ঝড় ওঠে সোশ্যাল সাইটে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে এই দাবি জানিয়ে শুরু হয় একের পর এক পোস্ট। এমনকী সেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি করে পোষ্ট করেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরাও।
এবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব হল সমস্ত রাজবংশী ও কামতাপুরি দলগুলি। দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে গ্রেটার কোচবিহার। বিধানসভা নির্বাচনের পরেই আলাদা রাজ্যের দাবিতে সরব হয়েছিল বিজেপি। সর্বপ্রথম আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে সরব হয় বিজেপির সাংসদ জন বার্লা। তারপরে এই দাবি তুলেছেন সদ্য ভোটে জেতা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ীর বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন বিজেপির সন্ত্রাসে ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মীরা
এরপর থেকেই গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয় বিতর্ক। আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে কিছুদিন আগেই দার্জিলিং সফরে আসা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদ জন বার্লার নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধি দল।
পৃথক রাজ্যের দাবীদারদের উৎসাহ যুগিয়েছে সম্প্রতি কেএলও বা কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিংহের ভিডিও। জীবন সিংহের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আলাদা রাজ্যের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, তাঁদের এই দাবি বহুদিনের, এবং সম্পূর্ণ ন্যায্য দাবী। তাদের এই দাবিকে খন্ডিত করার চেষ্টা এর আগে যেমন বামফ্রন্ট সরকার করে এসেছে , বর্তমানে সেই একই পথে হাঁটছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও।
অতীতেও দেখা গিয়েছে কামতাপুর আন্দোলনের নামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম। এবারও কি এই অন্দোলনও সেই দিকেই মোড় নেবে? প্রশাসন বা সরকার আন্দোলন সংঘটিত হওয়ার আগেই এই আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে দমন করতে সক্ষম হবে কি ? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক মহলে সবার মুখে মুখে।