বালি: জনসভার মঞ্চ থেকে সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের নাম করে আপত্তিকর ভাষণ দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত এক স্থানীয় সিপিএম সমর্থক। ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়াল নিশ্চিন্দা থানার দুর্গাপুর সমবায়পল্লী এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই এলাকায় দুর্গাপুর অভয়নগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে জনসভা ছিল শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের নাম করে বেশকিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সেই সময় পাশের বাড়ির এক সিপিএম সমর্থক প্রতিবাদ জানান। এরপর কল্যাণ চলে গেলে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা ওই ব্যক্তির বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালাায় বলে অভিযোগ। বাড়ির মালিক বাবুল ওরফে কৌশিক দত্তকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। এমনকী দুস্কৃতীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন কৌশিকের স্ত্রী সন্ধ্যা দত্ত। সন্ধ্য়ার অভিযোগ, বুকে ঘুঁষি মেরেছে হামলাকারীরা। শুধু তাই নয় শাসকদলের দুস্কৃতিরা ওই পরিবারের বাড়ি লাগোয়া টিনের ছাউনির নীচে কৌশিকের একটি অস্থায়ী দোকানেও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।
অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারটির একমাত্র সম্বল ছিল ওই একটি চায়ের দোকান। সেই দোকানটি ভেঙে তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সোনালী সমাদ্দার এসে কৌশিকের বাড়ি থেকে দুস্কৃতীদের সরিয়ে নিয়ে যান। পরিবারটিকেও আশ্বস্থ করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। যদিও হামলার ঘটনাটি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন প্রধান। বরং তাঁর পালটা দাবি, মদ্যপ অবস্থায় কৌশিক অশ্লীল ভাষায় যেভাবে কল্যাণ ও তৃণমূলকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করেছেন তাতে আরও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারত। তাঁরা ছিলেন বলেই তেমন কিছু ঘটেনি। গোলমালের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ। আক্রান্ত কৌশিক ও তাঁর স্ত্রীকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ফের পুলিশই পৌঁছে দেয় নিশ্চিন্দা থানায়। আক্রান্ত পরিবারটি এতটাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে যে তাঁরা এখনও পর্যন্ত পুলিশ লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কাছেও মুখ খুলতে তাঁরা যথেষ্ট আতঙ্কিত বোধ করছেন।
আরও পড়ুন: বিজেপি করার অপরাধে ৬ বছর ধরে বন্ধ যাতায়াতের রাস্তা, প্রশাসনকে জানিয়েও মিলছে না সুরাহা
শ্রীরামপুর কেন্দ্রে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের এখনও প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে তেমনই অভিযোগ বিরোধিদের। এই এলাকায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের দিন ও গণনার দিন ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের দিন রিগিং, ছাপ্পার পরেও গণনাকেন্দ্র থেকে পুলিশের উপস্থিতিতে বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যাপক সন্ত্রাস করে সব আসনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছিলেন সব বিরোধীরা। ফের লোকসভা ভোটেও সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করছে শাসক দল তেমমই অভিযোগ তাঁদের। এই অবস্থায় আগামী দুই তিন সপ্তাহ প্রচার ও ভোটের দিন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকবে নিশ্চিন্দা থানার এইসব এলাকা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।