আলিপুরদুয়ার: পুজোর আগে স্বস্তি জঙ্গল পর্যটনে। শুক্রবার থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের সমস্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তবে, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার খুলবে ১ অক্টোবর থেকে।বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি সুমন সৌরভ মোহান্তি এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
প্রতি বছর বন্যপ্রাণিদের প্রজনন মরসুমের জন্য দেশ জুড়ে ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর টানা তিন মাস বন্ধ রাখা হয় সমস্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চল। চলতি বছরে কোভিডের কারণে পর্যটকদের জন্য জঙ্গল খোলা নিয়ে দোলাচল তৈরি হয়েছিল। কোভিডের থাবায় টানা দেড় বছর ব্যবসায় মার খায় জঙ্গল পর্যটন।
এবার ১৫ সেপ্টেম্বর জঙ্গল খোলার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা জারি না হওয়ার দরুণ রীতিমতো সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছিলেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। জীবীকা হারানোর প্রশ্নে তাঁরা সম্মিলিত ভাবে দু-দুইবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত আবেদনও জানান।বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ পর্যন্ত জঙ্গল পর্যটনে সবুজ সংকেত মেলায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পর্যটন ব্যবসায়ী মহল।
সূত্রের খবর, জঙ্গল খুলে দেওয়া হলেও কড়াভাবে কোভিড প্রটোকল মানার উপর বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। জঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাস্ক, স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব বিধি মানার উপর বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমনকী, জঙ্গলে ঘুরতে আসার সময় প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে আনতে হবে করোনা টিকার ডাবল ডোজের সংশাপত্র। এছাড়াও, স্থানীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভাগীয় বনাধিকারিকরা মনে করলে আরও কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবেন। চালু হবে জিপসি ও হাতি সাফারি। সেখানেও পর্যটকদের মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব বিধি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যটক আবাস গুলি নিয়মিত ভাবে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে কিনা তার উপর কড়া নজরদারি চালাবেন বনাধিকারিকরা।
হঠাৎ জঙ্গল ও জঙ্গল সংলগ্ন কোনো এলাকাকে করোনার সংক্রমণের কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ‘কনটেন্টমেন্ট’ জোন হিসেবে চিহ্নিত করে, তৎক্ষনাৎ ওই এলাকা অথবা এলাকা গুলিতে বন্ধ করে দেওয়া হবে জঙ্গল পর্যটন। হিমালয়ান হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যল বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল খোলার আবেদন করছিলাম। যাতে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জঙ্গল খুলে দেওয়া হয়। টানা দেড় বছর জঙ্গল বন্ধ থাকায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। পরিস্থিতি যখন খানিকটা স্বাভাবিক হয়েছে তখন, জঙ্গল বন্ধ রাখলে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন অনিশ্চিত হয়ে পড়তে শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য জঙ্গল খোলার নির্দেশিকা জারি হওয়ায় স্বস্তি অনুভব করছি। সঙ্গে আমাদেরও কোভিড বিধি কড়া ভাবে মেনে চলার বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।”
আরও পড়ুন- ধর্মীয় পর্যটনের বিকাশে একাধিক প্রকল্পের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী
ইতিমধ্যেই গত বুধবার একটি পৃথক নির্দেশিকায় ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য রাজ্যের সমস্ত চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছিল বনদপ্তর। ওই নির্দেশিকার সঙ্গে জঙ্গল খোলার বিষয়টি জুড়ে না দেওয়ার দরুণ সংশয় তৈরি হয়েছিল পর্যটন ব্যবসায়ী মহলে। উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ জানিয়েছেন ” কোভিডের আতঙ্ক কাটিয়ে জঙ্গল পর্যটন চালু করা হলেও আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।” উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর জানিয়েছেন “জঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কোভিড বিধি মেনে চলার উপর কড়া নজরদারি থাকবে বনদপ্তরের। কেউ যাতে ওই সতর্কতা না অমান্য করেন, সে বিষয়ে বিনম্র আবেদন জানাচ্ছি।”