কলকাতা শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

চতুর্থ স্তম্ভ: রামপুর কা কিসসা
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ১১:৫১:৪৩ পিএম
  • / ৩৭৫ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

ইয়ে রামপুরি চাকু হ্যায়৷ জানি ইয়ে বচ্চোঁ কি খেলনে কা চিজ নঁহি হ্যায়৷ লগ জায়ে তো খুন নিকল আতা হ্যায়”৷ ওয়ক্ত ছবিতে রাজকুমারের ডায়ালগ। সেই রামপুরে ভোট হয়ে গেল৷ যে রামপুরের ছুরি বিখ্যাত। কমবেশি ৫০% মুসলমান জনসংখ্যা নিয়ে রামপুরের প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ১৯৫২ সালে। এরপর ১৯৫৭ সালেও, তাঁকে ওই রামপুর থেকেই নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়৷ তিনি নেহরুকে চিঠি লিখেছিলেন, দুঃখ করেই লিখেছিলেন, আমি কি কেবল মুসলমানদের নেতা? তার মানে মুসলিম বহুল অঞ্চলে মুসলমানরাই কেবল নির্বাচিত হবে? একবছরও পার না করে, ৫৮ র ফেব্রুয়ারিতে তিনি মারা যান। কিন্তু ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এই প্রথা চালু থেকেছে বরাবর, আজও।

কি কংগ্রেস, কি কমিউনিস্ট, সমাজবাদী কিংবা জনতা দল৷ তারা মুসলমান বহুল অঞ্চলে মুসলমানদেরই নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন৷ এটাই রেওয়াজ৷ আমাদের সংবিধান ছিলই তো সেকুলার৷ ৭৫-এ সেই সেকুলার শব্দটাকেও জোড়া হল সংবিধানে৷ আরও গুরুত্ব দিতে, কিন্তু তলায় তলায় ফল্গু নদীর মত বয়েছে এই ধর্মীয় রাজনীতির প্রকরণ, আরও শক্তপোক্ত হয়েছে, বিজেপি সেই রাজনীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে৷ তারা তাদের রাজনীতি থেকে মুসলমানদের ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থা করেছে৷ ২০১৯ এ নির্বাচিত ৩০৩ জন বিজেপি সাংসদের একজনও মুসলমান নয়৷ ২০১৭তে গোটা উত্তরপ্রদেশে একজন মুসলমান প্রার্থী দেয়নি বিজেপি৷ না এবারও নয়, এই কাহিনীতে একটা অন্য টুইস্ট আছে, সে বিষয়ে পরে আসছি।

তাদের হিসেব ৮০ আর ২০ র, এ হিসেব তারা দেশ জুড়েই করে, এখানে কাঁথির খোকাবাবু বলেছিল, উত্তরপ্রদেশে আদিত্যনাথ যোগী বলেছে, হম তো ৮০ – ২০ কা পলিটিক্স করতে হ্যাঁয়, করেঙ্গে। ওই রামপুরে বিজেপি একদা তাঁদের সবেধন নীলমণি, মুক্তার আব্বাস নকভিকে জিতিয়ে এনেছিল, পরে তিনিও হেরে যান। শেষমেষ ২০১৯ এর মোদি ঝড়ের পরেও রামপুর থেকে জিতেছিলেন আজম খান৷ সমাজবাদী দলের প্রার্থী। তার আগে, কংগ্রেসের হয়ে রামপুরে বহুবার জিতেছেন রামপুরের নবাব জুলফিকর আলি খান, তাঁর স্ত্রী বেগম নুর বানো। নবাব সাহেব জিততেন, জেতার পরে চলে যেতেন লন্ডন৷ মাঝেমধ্যে এলে দামি বিদেশি গাড়িতে ঘুরতেন৷ টিনের প্যাকেটে রাখা সিগারেট খেতেন, সিগারেট শেষ হয়ে গেলে ফেলে দিতেন, কোনও রামপুরবাসী ওই টিনের কৌট পেলে কপাল খুলে গেল, এরকমটাই মনে করত।

তখন মুসলমানদের ভোট যেত কংগ্রেসের বাক্স৷ কাজেই সেই নবাব বা বেগমদের জিততে কোনও অসুবিধেই হত না৷ কংগ্রেসেরও ভাবটা এমন ছিল, ও তো মুসলমানদের ভোট, আমাদেরই থাকবে। ওদিকে সেই নবাবের আস্তাবলে কাজ পাওয়া এক সহিসের ছেলে, আজম খান রাজনীতিতে নামলেন৷ নবাব সাহেবের এমএলএ হওয়াটা তাঁর পদমর্যাদার সঙ্গে মানানসই বলে মনে হয়নি৷ অতএব তিনি রাজ্য রাজনীতিতে নামেননি৷ আজম খান ক্রমশ রবীন হুড হয়ে উঠেছেন৷ অবশ্যই তাঁর কমিউনিটির মধ্যে, দবঙ্গ নেতা, ক্রমশঃ তাঁর সম্পদ বেড়েছে, প্রভাব বেড়েছে, রামপুর বিধানসভা নয়, রামপুর জেলা, তার আশেপাশের জেলাতেও আজম খান একটা নাম হয়ে উঠেছে৷ সমাজবাদী দল ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি ছিলেন, উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের অঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী৷ থানা, পুলিশ, প্রশাসন তাঁর কথাতেই চলত৷ ইতিমধ্যে তাঁর কনস্ট্রাকশন কোম্পানি তৈরি হয়েছে৷ ৭০০/৮০০ কোটি টাকার কনট্রাক্ট পেয়েছেন৷ বিদেশি গাড়ি একটা না, বেশ কয়েকটা তাঁর দোরগোড়ায়, উত্তরপ্রদেশের যে কোনও অঞ্চলের বাহুবলি নেতা, দবঙ্গ নেতাদের যা আছে সবই তাঁর আছে।

এবং এ বিষয়ে কোনও দলই কম যায় না, বিজেপি। লোকদল, কংগ্রেস বা সমাজ বাদী দল, বিএসপির যে ৯০% এম পি, এম এল একে দেখেই হিন্দি ছবি বা ওটিটি সিরিজ তৈরি হয়, এক এক জন খাঞ্জা খান, তাদের প্রতিপত্তি, রোয়াব, সম্পদ দেখার মত।

আজম খানের নাম যোগিজীর মুখে, বিজেপির তাবড় নেতারা সভায় সভায় আজম খানের কথা বলছেন৷ বলছেন সমাজবাদী দল এলে আবার আজম খানের রাজত্ব ফিরে আসবে৷ আসলে যা বলতে চাইছেন, তাও খুব পরিষ্কার৷ হে হিন্দু জনগণ, আজম খানের হাত থেকে বাঁচতে, মুসলিম শাসনের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিকে ভোট দিন, এ প্রচার প্রবল, প্রতিদিন চলছে।

ওদিকে আজম খান জেলে বন্দী, আজ দু বছর হল। কেন? অভিযোগ কী? একটা নয়, একশোর বেশি মামলা ঝুলছে আজম খানের বিরুদ্ধে৷ গরু চুরি, ১৬ হাজার টাকা চুরি, জমির মামলা, এমন কি বই চুরিরও অভিযোগ আছে, ভয় দেখানোর অভিযোগও আছে, তিনি বেল পাচ্ছেন না৷ ওদিকে ৪ জন কৃষককে গাড়ির তলায় পিষে মারা আশিস মিশ্র বেল পেয়ে গেলেন, তাঁর বেল অ্যাপ্লিকেশনে ৩০২ বা ১২০র বি ধারার উল্লেখও নেই, তা জানা গেল জজসাহেব বেল দেবার পরে৷ স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্রর উকিল বেল হওয়ার পর, জজ সাহেবকে তা জানালেন৷ জজ সাহেব তার পরেও জামিন মঞ্জুর করলেন।

জেল থেকেই আজম খান লড়ছেন রামপুর আসন থেকে, তার পাশের আসন স্বার থেকে লড়ছেন আজম খানের ছেলে, আবদুল্লা। এমটেক করা ছেলে, এর আগেও নির্বাচিত হয়েছেন। মজার কথা হল এই আবদুল্লার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী দেয়নি, এখানে প্রার্থী বিজেপির সহযোগী আপনা দলের এক মুসলমান প্রার্থী৷ তিনি নবাবজাদা হায়দর আলি খান, আপনা দলের নেতা অনুপ্রিয়া প্যাটেল, এই দল এক্কেবারেই উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলের কুর্মিদের দল, পশ্চিমাঞ্চলে তাদের একজন কর্মীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, তাহলে?

এইখানেই কহানি মে টুইস্ট৷ মুসলমান বহুল আসনে একজন মুসলমানকে লড়াতে পারলে মুসলিম ভোট ভাগ হবে, সেটা মাথায় রেখেই অমিত শাহ নবাবজাদা হায়দর আলি খানকে প্রার্থী করেছেন৷ এদিকে বিজেপি মুসলমান প্রার্থী দিলে কমল চিহ্নে, পদ্ম ফুলে মুসলমান ভোটাররা ভোট দেবেন না, তাই কৌশল, পূর্বাঞ্চলের আপনা দলের তরফে নবাবজাদাকে দাঁড় করানো হল, চুনাও চিহ্ন? কাপ প্লেট। মানে বিজেপি ভোটের জন্য সব করতে পারে, তারা গোহত্যা নিয়ে গোয়াতে একটা কথাও বলবে না, হিজাব নিয়ে উত্তরপ্রদেশে আগুন জ্বালাবে, আবার বকলমে মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়ে, মুসলমান ভোট বিভাজনের চেষ্টাও চালাবে, এটাই ছিল উত্তরপ্রদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে বিজেপির স্ট্র্যাটেজি৷

বিজেপির হয়ে কিছুটা কাজ করেছে বি এস পি, তারা বেশ কিছু মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, কিন্তু সকাল থেকেই দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্রাউন্ড রিপোর্ট হল, হচ্ছে না। মুসলিম ভোট এবার বিভাজনের রাস্তায় যাচ্ছে না, ৯০% মুসলমান ভোট এবারে সমাজবাদী দলের দিকে, ৫৫ টা আসনের অন্তত ৩০টা আসনে তারাই নির্ণায়ক শক্তি, কিন্তু শুধু তাদের ভোট হলেই হবে না, আরও কিছু ভোট চাই। চাই সাইনি, গুজ্জর, কিছু দলিত ভোটও। বি এস পির দলিত ভোট কিছুটা হলেও ভাঙ্গছে, অন্তত ১০ টা আসনে ভালরকম যাদভ ভোটের আশা রাখছেন অখিলেশ যাদব, সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট বিজেপির কপালের ভাঁজ আরও গাঢ় করল, বলাই যায়।

সকাল থেকে অমরোহা, মুরাদাবাদ, রামপুর, সাহারানপুরে লম্বা লাইন, সারাদিন মুসলিম মহিলা পুরুষরা ভোট দিয়েছেন, দিনের শেষে বিজেপির সম্ভলের প্রার্থী ভোট লুঠের কথা বলেছেন, ছবি পরিষ্কার। বিজেপি কমছে, কতটা কমছে তা অবশ্য নির্ভর করছে বিএসপির কোর ভোটারদের ওপর৷ তাদের সামান্য অংশও যদি এসপির দিকে ঝোঁকে, তাহলে বিজেপির বিপর্যয় কেউ রুখতে পারবে না৷ যদি তা নাও হয়, তাহলেও বিএসপির ভোট অন্তত বিএসপির কাছে থেকে গেলেও গতবারের রেজাল্ট উলটে যাবে, এটাই গ্রাউন্ড জিরোর রিপোর্ট।

এর পরের দফার ভোট ২০ ফেব্রুয়ারি, পশ্চিম উত্তর প্রদেশের ছোট্ট অংশ, অবধ আর বুন্দেলখন্ড এর ১৬ টা জেলার ৫৯ টা আসনে ভোট, যেখানে ৩০ টা আসনে নির্ণায়ক ভোট রয়েছে যাদবদের হাতে, ৫ বছর যারা ক্ষমতার বাইরে, এই পর্বেই রয়েছে অখিলেশের আসন কারহলের নির্বাচন, ৫৯ টা আসনের ৪৯ টা পেয়েছিল বিজেপি, তা যে তাদের হাতে থাকবে না, তা জানা কথা, কিন্তু কতটা কমবে? প্রথম দু দফার মত বিপর্যয় হলে, বিজেপির ক্ষমতায় ফেরা হবে না, সেটা বিজেপিও জানে, এস পির নেতারাও জানেন, কাজেই তৃতীয় দফার ভোটের দিকে চোখ সবার, তা নিয়ে আলোচনা ২১ তারিখে করা যাবে, আপাতত বিজেপির গ্রাফ নামছে, গর্মি উতর রহা হ্যায়, জানি, রামপুর কা চাকু হ্যায়, লগ যায়ে তো খুন নিকল আতা হ্যায়, বলেছিলেন রাজকুমার।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
আগামিকাল মুর্শিদাবাদে সেলিমের পরীক্ষা, ১৩ মে বহরমপুরে অধীরের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
শাহের মুখে সন্দেশখালি আছে, নেই ভিডিও নিয়ে কোনও কথা
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
বেহাল সড়ক, প্রশাসনকে জানিয়েও হয়নি লাভ
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team