হাওড়া: মেয়ের কানের কাছে মোবাইল ধরে রয়েছেন বাবা৷ অপরপ্রান্তে ফোনে রয়েছেন মা৷ দু’চোখ বেয়ে নেমে আসছে বাঁধভাঙা জল৷ নিথর মেয়ের সঙ্গে মায়ের এই মৌন বার্তালাপের সাক্ষী থাকলেন এসএসকেএম হাসপাতালের দেহদান ঘরের কর্মীরা৷ তাঁদের কারও মুখে তখন কথা ফোটেনি৷ বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিল মেয়ে৷ সেই রোগেই মারা যায় ১০ বছরের শ্রীতমা৷ তবে মেয়ের দেহ না পুড়িয়ে দান করার সিদ্ধান্ত নেন হাওড়া কদমতলার শিক্ষক দম্পতি৷ যাতে শ্রীতমার রোগ নিয়ে আরও গবেষণা করতে পারেন চিকিৎসকরা৷ যাতে এই রোগের ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেন তাঁরা৷ যাতে আর কোনও বাবা-মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়৷
শরীরের মূল স্নায়ুতন্ত্রে একটি টিউমার হয়েছিল শ্রীতমার৷ চার বছর বয়সেই এই রোগটি ধরা পড়ে৷ তারপর দীর্ঘ ৬ বছরের লড়াই৷ কিন্তু ডাক্তারিতে এই রোগের কোনও চিকিৎসা এ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি৷ ধীরে ধীরে মাথার নীচের অংশে আকারে বাড়তে থাকে টিউমারটি৷ অবশেষে চিকিৎসাশাস্ত্রকে হার মানিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া একরত্তি মেয়েটি৷
জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস স্বাভাবিকই ছিল শ্রীতমা৷ কিন্তু চার বছর বয়সে তার মাথায় ওই বিরল রোগ ধরা পড়ে৷ বহু ডাক্তার দেখিয়েছেন বাবা-মা৷ কিন্তু কেউ রোগ সারাতে পারেননি৷ ভিন রাজ্যেও গিয়েছেন৷ সেখানেও আশাহত হয়েছেন৷ রবিবার সকালে হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে মেয়ের মৃত্যু হয়৷ কান্না ভেজা গলায় শ্রীতমার মা মঞ্জুশ্রী বলেন, এ রোগের কোনও ওষুধ নেই৷ এটাই আমাকে কুড়েকুড়ে খেত৷ ডাক্তারদের প্রশ্ন করতাম, এ কেমন রোগ যার কোনও ওধুধ নেই? কোনও উত্তর তাঁরা দিতে পারতেন না৷ বলতেন, সরি৷ মেডিক্যাল সায়েন্সে এই রোগ নিরাময়ে কিছু বলা নেই৷
শ্রীতমা আর ফিরে আসবে না৷ কিন্তু শ্রীতমার মতো পরিণতি আর কারও হোক, চান না মঞ্জুশ্রী ও তাঁর স্বামী নারায়ণ মণ্ডল৷ সেই ভাবনা থেকেই মেয়ের দেহ দানের সিদ্ধান্ত নেন বাবা ও মা৷ মঞ্জুশ্রী জানান, ভবিষ্যতে যদি মেডিক্যাল সায়েন্সে এই রোগ নিয়ে গবেষণার সুযোগ হয় তাহলে কোনও বাবা-মাকে সন্তানহারা হতে হবে না৷ পরিবারের তরফে আগেই শ্রীতমার চোখ দান করা হয়৷ এদিন মেয়ের দেহ দান করতে তাঁরা এসএসকেএম হাসপাতালে যান৷ কোলের সন্তানকে চিতার আগুনে জ্বলতে দেখতে চাননি মণ্ডল দম্পতি, সে কারণেও মেয়ের দেহ হাসপাতালের হাতে তুলে দিলেন তাঁরা৷