ইউরো কাপের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের খেলা শুরু হচ্ছে শনিবার। প্রথম ম্যাচে আমস্টারডামের জোহান ক্রূয়েফ এরিনায় মুখোমুখি হবে ডেনমার্ক এবং ওয়েলস। ১৯৯২ সালের ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্কের এবারের ইউরো অভিযান চমকপ্রদ। প্রথম ম্যাচে কোপেনহেগেনে নিজেদের মাঠে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে তারা বিরাট সমস্যার মধ্যে পড়েছিল। ম্যাচের ৩৪ মিনিটে তাদের মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন মাঠের সাইডলাইনের ধারে থ্রো করতে গিয়ে পড়ে যান। পরে জানা যায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মাঠের মধ্যে চিকিৎসা এবং তারপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরিকসন এখন বিপদমুক্ত। সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িও ফিরে গেছেন। তবে সেই ম্যাচটা পৌনে দু ঘণ্টা স্থগিত থাকার পর যখন আবার শুরু হল ফিনল্যান্ড জিতে গেল ১-০ গোলে।
বি গ্রূপে সবচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল বেলজিয়াম। তাদের বিরুদ্ধে ডেনিসরা হারলেও একটি গোল করেছিল তারা। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ২-১ গোলে। পর পর দুটো ম্যাচ হেরে নক আউটে যাওয়া যায় না। ডেনমার্ক কিন্তু সেই প্রায় অসম্ভবটাকে সম্ভব করেছে শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দিয়ে। এই জয়টাই তাদের নক আউটে পৌছে দিয়েছে। এইখান থেকে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে তারা সহজে হারবে বলে মনে হয় না। ওয়েলসের সঙ্গে তাদের লড়াই হবে।
ওয়েলসের গ্রূপে ছিল ইতালি, সুইৎজারল্যান্ড এবং তুরস্ক। ইতালির কাছে ওয়েলস ০-১ গোলে হারলেও তারা তুরস্ককে হারিয়ে দিয়েছে ২-০ গোলে এবং সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করেছে। ওয়েলস টিমে দুজন এমন প্লেয়ার আছেন যাঁরা যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারেন। তাঁরা হলেন ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেল এবং মিডফিল্ডার অ্যারন র্যামসে। রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন ফরোয়ার্ড বেল এখন খেলেন ই পি এল-এর এভার্টনে। আর আর্সেনালের প্রাক্তন র্যামসে এখন জুভেন্তাসে। দুজনে মিলে মাঝ মাঠের আক্রমণ গড়েন। বেল খেলেন একটু বাঁ দিক ধরে। তাঁর থ্রোগুলোও বেশ লম্বা। র্যামসে মূলত বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। তবে দরকার পড়লে তিনি ডান দিক বরাবর খেলতে পারেন। এবারের ইউরোয় বেলের ফর্ম বেশ ভাল। দলের তিনটি গোলের ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান আছে। কিন্তু তিনি নিজে এখনও গোল পাননি। তবে পেনাল্টি নষ্ট করেছেন। ডেনমার্ককে হারাতে হলে বেল এবং র্যামসেকে নিজেদের সেরা ফর্মে খেলতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না গত ইউরোতে গ্যারেথ বেলরা সেমিফাইনালে উঠেছিলেন।
ডেনমার্ক তাদের সেই সুযোগ দেবে কি না মুশকিল। এখন অবশ্য তাদের সেই সুসময় নেই যখন তারা নিজেদের সম্পর্কে বলত উই আর রেড, উই আর হোয়াইট, উই আর ডেনিস ডিনামাইট। লাল-সাদা জার্সি পরে তারা এখনও মাঠে নামে। কিন্তু তাদের ফুটবলে ডিনামাইট নেই। ডেনমার্কের কোচ কাসপার হিলমান্ড অবশ্য দলে তারকা নেই বলে বিলাপ করতে বসেননি। যদিও ইন্টার মিলানে খেলা এরিকসনকে তো তারকাই বলা যায়। তবে মিডফিল্ডার পিয়ের এমিল হজবার্গ রাশিয়ার বিরুদ্ধে দুটো গোল করেছেন, তাঁর তিনটে আ্যাসিস্টও আছে। সামনের দিকে ইউসুফ পলসেন এবং মার্টিন ব্রেথওয়েট গোল করার কাজটা ভালই পারেন। পলসেন তো ইতিমধ্যেই বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে। আর ডেনমার্কের গোলে আছেন কাসপার স্কিমিশেল। বছর পাঁচেক আগে লেস্টার সিটিকে ই পি এল চ্যাম্পিয়ন করার ব্যাপারে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। কাসপারের বাবা পিটার স্কিমিশেল ডেনমার্কের ইউরো জয়ের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। এখন দেখার কাসপার এবং তাঁর সতীর্থরা ডেনমার্ককে প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পেরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন কি না।