কলকাতা: আজ ১৫ মার্চ। ভারতীয় ক্রিকেটের (Indian Cricket) ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন এবং ২০১১ সালের ২ এপ্রিল ভারতীয় ক্রিকেটের লোকগাথায় ঢুকে পড়েছে কারণ ওই দুই দিনে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। কিন্তু ২০০১ সালের ১৫ মার্চের গুরুত্ব ওই দুই দিনের থেকে কোনও অংশে কম নয়। এই দিনেই কলকাতার (Kolkata) ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) মহা শক্তিধর অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) হারিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) ভারত (India)। প্রথম ইনিংসে ফলো অন (Follow On) করার পরেও অবিশ্বাস্যভাবে ওই ম্যাচ জিতেছিল তারা। ওই ম্যাচের পরে আমূল বদলে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট।
বছর দুয়েক আগেই গড়াপেটা কেলেঙ্কারিতে বিধ্বস্ত হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট। সবে দলের দায়িত্ব পেয়েছেন সৌরভ। তিনি ছাড়া দলে অভিজ্ঞ বলতে শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar), রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman)। এছাড়া সব আনকোরা। উল্টো দিকে স্টিভ ওয়ার (Steve Waugh) অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া। টানা ১৪টি টেস্ট জিতে খেলতে এসেছে ভারতে। অজিদের জয়রথ সৌরভরা থামাতে পারবেন এমনটা কারও মাথাতেই আসেনি। প্রত্যাশামতোই মুম্বইতে (Mumbai) সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর কলকাতায় যা হল তা অলৌকিক।
আরও পড়ুন: Champions League | চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৭ গোলের তাণ্ডব ম্যান সিটির, একাই ৫টা দিলেন হালান্ড
প্রথমে ব্যাট করে ৪৪৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া। সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক স্টিভ ওয়া, ৯৭ রান করেন ম্যাথু হেডেন। ভারতের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন তরুণ অফস্পিনার হরভজন (Harbhajan Singh) সিং। পরপর তিন বলে রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং শেন ওয়ার্ন (Shane Warne) প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ইডেনের দর্শকদের শব্দব্রহ্ম তখন বিস্ফোরণের রূপ নিয়েছে। কিন্তু ভারত ব্যাট করতে নামতেই চুপ হয়ে গোটা মাঠ। গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নের দাপটে ১৭১ রানে অল আউট ভারত। একমাত্র লক্ষ্মণের ৫৯ ছাড়া কেউ কিছু করতে পারেননি। কিছুটা অতি আত্মবিশ্বাস নিয়েই ভারতকে ফলো অন করতে বলেন স্টিভ ওয়া।
তৃতীয় ইনিংসে বুদ্ধি করে লক্ষ্মণকে তিনে পাঠানো হয়। চারে শচীন ১০ রানে আউট হওয়ার পর নামেন সৌরভ। তিনি ৪৮ করে আউট হয়ে যান। পাঁচে নামেন দ্রাবিড়। এরপর লক্ষ্মণ ও দ্রাবিড়ের ঐতিহাসিক পার্টনারশিপের শুরু। ১৪ মার্চ চতুর্থ দিনের গোটাটা দুজনে ব্যাট করেন। ২৩২ রানে চার উইকেট থেকে লক্ষ্মণ যখন আউট হন, ভারতের রান তখন ৬০৮। লক্ষ্মণ করেন ২৮১ এবং ১৮০ রান করে তাঁকে যোগ্য সহায়তা দেন দ্রাবিড়। কলকাতা টেস্টের এই পার্টনারশিপ পৃথিবীর সর্বকালের সেরা পার্টনারশিপের মধ্যে পড়ে। এরপর কামাল দেখান হরভজন সিং। ৩৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে গিয়ে ২১২ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
এটা শুধু নিছক একটা টেস্ট ম্যাচ জয় ছিল না। ছিল ভারতের ক্রিকেট দলের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয়। হারের মুখ থেকে ফিরে এসে অজিদের পাল্টা ধরাশায়ী করার পর সবার উপলব্ধি হয়, এই ভারতীয় দল সেরাদের টক্কর দিতে পারে। বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে জানে, কাউকে ভয় পায় না। শুধু ভারতীয় দল নয়, সমর্থকরাও বুঝতে পারেন, এতদিনের মিনমিনে দল নয়, এই ভারতের দম আছে। অন্যদিকে এই হারে ঘাবড়ে যায় শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। চেন্নাইয়ের শেষ টেস্টেও ২ উইকেটে হেরে যায় তারা। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি ২-১ এ জেতে সৌরভের ভারত।