লকডাউনে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের জন্য ‘চাই লকডাউনের ভরপাই’ বলে দাবি তুললেন বেশ কয়েকটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে দেশের সরকার ও রাজ্য সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নিয়ে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহলে ব্যাপক মত পার্থক্য তৈরি হয়েছে। খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলো, যারা লোকের বাড়িতে কাজ করে বা দিন আনা দিন খাওয়া মুটে মজুররা সমাজের এই অংশের মানুষের কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে অনলাইনে চিঠি দিয়ে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানাল তাঁরা। সংগঠনের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে আবেদনে জানান হয়েছে, প্রশাসনকে এমন বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে যাতে জনজীবন সচল থাকে। আর এই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটে।
সংগঠনের আবেদনে দাবি করা হয়েছে, বৈজ্ঞানিক তথ্য গত এক বছরে গোটা দুনিয়ার ক্ষেত্রে প্রমাণ করছে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর। সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্নে লকডাউন বিশাল প্রশ্নচিহ্ন এনে দিয়েছে। এর পাশাপাশি অরাজনৈতিক এই সমাজসেবী সংগঠনটির দাবি এরই মধ্যে অন্যান্য দেশের মতোই ভারতেও অসাম্য ও শোষণ এবং একই সঙ্গে বেড়ে চলা গার্হস্থ অত্যাচার এই লকডাউনে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁরা একটি পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন যে, দেশে যারা মাসে কুড়ি হাজার টাকার কম আয় করেন গত বছর লকডাউনে তাঁদের ৩৭ শতাংশের রোজগার কমে গেছে। বিপরীতে এদেশের বিলিয়নের সম্পদ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। তাঁরা আরও বলেন, গত বছর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে লকডাউন চালু হওয়ার পর কেবলমাত্র এপ্রিল মাসে দেশের ১১ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ থেকে ছাঁটাই হয়েছেন। যার মধ্যে এক কোটি ৭০ লক্ষ মহিলা হারিয়েছেন তাঁদের কাজ। তাঁদের অভিযোগ দেশের ৩২ কোটি ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষার সম্পূর্ণ বাইরে চলে গেছে। ১২ কোটি শিশু মিড-ডে-মিল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ৬০ লক্ষ তপশিলি জাতি উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সব সমস্যার সমাধানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপালের কাছে সংগঠনটির দাবি, কোভিড ১৯ এর চিকিৎসা সামগ্রী, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ টিকাকরণ, অবিলম্বে লকডাউন প্রত্যাহার, আর্থিকভাবে দুর্বল সব পরিবারকে বছরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ, অন্তত এক বছরের জন্য সব ক্ষুদ্র ঋণ মকুব করা ও ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পুনরায় কাজে বহাল করার দাবি, ওয়ার্ক ফ্রম হোম সহ কোথাও দিনে ৮ঘণ্টার বেশি কাজ না করানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সকলের জন্য করোনা সহ অন্যান্য সমস্ত রোগের উপযুক্ত চিকিৎসার পরিষেবা প্রস্তুত করে বিনা চিকিৎসায় কোনও মানুষ যাতে মারা না যান, ধসে যাওয়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবি জানান হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত রোগী সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রতিদিনের চিকিৎসার সম্পূর্ণ তথ্য রোগীর পরিবারকে জানানর দাবি তোলা হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে ভিজিটিং আওয়ারে পরিবারের লোককে রোগীকে দেখতে দিতে হবে। রোগী মারা গেলে মৃতদেহ ইচ্ছুক পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে। গণ ভ্যাকসিনের নামে ব্যবসা চালাবার জন্য দেশের মানুষকে গিনিপিক বানানো চলবে না। ইচ্ছুকদেরও ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যে কোনো শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সমস্ত দায় সরকার ও ভ্যাকসিন কোম্পানিকে নিতে হবে।