ত্রিপুরা: ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটকে (Tripura Assembly Election) কেন্দ্র করে সিপিএম-কংগ্রেস (CPM – Congress) কাছাকাছি চলে এল। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে কথা চলছে তিপ্রা মথার সঙ্গেও। বৃহস্পতিবার বাম এবং কংগ্রেস নেতারা ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারকে উতখাত করার ডাক দিয়েছেন যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজ্যের দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আজ ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক দলগুলি এক জায়গায় উপস্থিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা জানিয়েছেন, তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম কিশোর মাণিক্যের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরা এই আসন সমঝোতার প্রক্রিয়ায় মথাকে পাওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী।
সাংবাদিক বৈঠকে সিপিএম নেতার সুরই শোনা গিয়েছে বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে ফেরা প্রবীণ নেতা সুদীপ রায় বর্মণের গলাতেও। তিনি বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। সেই কারণে ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক শক্তি এক জায়গায় আসতে বাধ্য হয়েছে। কংগ্রেস সম্পর্কে যাদের অ্যালার্জি আছে, সেই আরএসপি, ফব এবং সিপিআইয়ের মতো বামফ্রন্টের শরিকরাও সাংবাদিক বৈঠকে হাজির ছিলেন। এমনকী ফ্রন্টের শরিক না হলেও হাজির ছিলেন সিপিআই (এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদকও।
আরও পড়ুন:Manas Bhunia: গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না মেটালে মিউজিক থেরাপি, কেশপুরে হুঁশিয়ারি মন্ত্রী মানসের
এককালের বামেদের শক্ত ঘাঁটি ত্রিপুরায় বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে জাতীয় স্তরে বামের এবং কংগ্রেস এখন অনেকটাই কাছাকাছি। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রায় আমন্ত্রণ পেয়ে যোগ না দিলেও সিপিএম তার সাফল্য কামনা করেছে। বাম শরিক সিপিআই অবশ্য কংগ্রেসের আমন্ত্রণ পেয়ে শ্রীনগরে যাত্রার সমাপ্তি পর্বে শামিল হবে বলে জানিয়েছে। আগরতলায় শেষ কবে বাম এবং কংগ্রেস নেতারা একসঙ্গে বসেছেন, একসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, তা বলা খুব মুশকিল। গত শতাব্দীর আট-নয়ের দশকে অত্যাচারী কংগ্রেসকে সরিয়ে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে। ২০১৮ সালে বহু বছর পর বাংলার মতোই ত্রিপুরায় বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তাদের পাঁচ বছরের অপশাসনই বাম-কংগ্রেসকে কাছে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, ত্রিপুরায় এই নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ আগামী দিনের পক্ষে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সিপিএমের এই লাইন আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও অনেক রাজ্যে চালু হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। যদিও কেরলে তা সম্ভব নয়। ওই রাজ্যে সিপিএমের মূল লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে।
তবে বাংলায় তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধিতায় বাম-কংগ্রেস আগামী দিনে আরও কাছাকাছি আসতে পারে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। সাম্প্রতিক অতীতে বিধানসভা থেকে শুরু করে পুর নির্বাচনে তারা জোট করেছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও তলে তলে এই দুই শক্তির জোট বা সমঝোতা হতে পারে। দুই দলের নেতারা বিষয়টি নিচুতলার উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।
বাম-কংগ্রেস কাছাকাছি আসা যে অসম্ভব নয়, শুক্রবার বাংলায় সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা গৌতম দেব। দলের অন্দরে এখন তা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক আছে বলেও গৌতম দেব মনে করেন না। মুখপত্রে তিনি লিখেছেন, পার্টি হিসেবে সিপিএম ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত যে লাইন ঘোষণা করেছে, তা সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে। প্রধান কথা বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাস্ত করা। কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম যে আসন রফা করবে, গতকালও কেউ এটা ভাবতে পারত না। আজকে পার্টিতে এই নিয়ে খুব বেশি বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য গৌতম দেবের এই বক্তব্যই অনেক আগামী দিনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিল কি না, চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়ে।