নয়াদিল্লি: খুনের আগে মৃতের সঙ্গে শেষ কার দেখা হয়েছিল? যে কোনও তদন্তে এটা একটা বড় সূত্র। এই সূত্র ধরেই বহু খুনের জট খোলা গিয়েছে। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যাঁর শেষ দেখা হয়েছিল তাঁকেই বেশির ভাগ সময়ে অভিযুক্ত হিসেবে ধরে প্রাথমিক তদন্ত এগিয়েছে। এটাকেই আইনের ভাষায় ‘লাস্ট সিন থিয়োরি’ বলা হয়ে থাকে। এই থিয়োরি বা তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই এক খুনের মামলার রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
আদালত জানিয়েছে যদি কোনও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে লাস্ট সিন থিয়োরি প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তাঁকে ব্যাখ্যা করতে হবে কোন পরিস্থিতিতে তিনি মৃতের সঙ্গ ছেড়ে গিয়েছিলেন। উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে না পারলে ‘লাস্ট সিন থিয়োরি’র ভিত্তিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা অযৌক্তিক নয়। প্রধান বিচারপতি এনভি রমনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে।
১৯৮৭ সালের একটি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় নিম্ন আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে আদালত। পটনা হাইকোর্টও ২০১০ সালে এই সাজা বহাল রাখে। পরিস্থিতিগত প্রমাণ ছাড়াও খুনের উদ্দেশ্য ও ‘লাস্ট সিন থিয়োরি’ ওপর ভিত্তিতে করে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
পটনা হাইকোর্টের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশের শীর্ষ আদালতে আপিল করেন। অভিযুক্ত দাবি করেন, তাঁকে ‘লাস্ট সিন থিয়োরি’র ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা পুরোপুরি অযৌক্তিক। দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে লাস্ট সিন থিয়োরির তত্ত্ব। বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মৃতের শেষ দেখা হওয়া এবং মৃতদেহ উদ্ধারের মধ্যে সময় অত্যন্ত কম। এতোটাই কম যে ওই সময়ের মধ্যে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির পক্ষে অপরাধ সংগঠিত করা অসম্ভব।
আদালত রায়ে জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন পরিস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির সঙ্গত্যাগ করেছে, তার ব্যাখ্যা দিতে পারিনি। তাই ‘লাস্ট সিন থিয়োরি’র ভিত্তিতে সাজা ঘোষণা করা যেতে পারে। খুনের পিছনে তাঁর উদ্দেশ্যও পাওয়া গিয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে পরিস্থিতিগত প্রমাণও রয়েছে।
তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত অন্য আসামির বিরুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার বা পলাতক হওয়ার কোনও অভিযোগ নেই। সে কারণেই প্রথম আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং দ্বিতীয় আসামীকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছিল।