কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ব্রিটানিয়া মুর্দাবাদ, হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ।
১৯৩৯ সাল। তখন ভারতে চলছে ব্রিটিশ রাজ। ১১ বছরের এক কিশোর, সদ্য পেরিয়েছে ক্লাস ৩। স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য এক পয়সার কয়েন উপহার পেয়েছে বিভিন্ন স্কুলের দায়িত্বে থাকা এক মুন্সীর কাছ থেকে। চলছে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। মুন্সী কয়েন উপহার দিয়েই বাচ্চাটিকে বলেন, ‘ব্রিটানিয়া জিন্দাবাদ, হিটলার মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিতে। পরাধীন ভারতবর্ষের মাটিতে দাঁড়িয়ে পঞ্জাবের (বর্তমান পাকিস্তানের) ওই একরত্তি ছেলে বলে ওঠে, ‘ব্রিটানিয়া মুর্দাবাদ, হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’। এই দুঃসাহসিক ছেলে আর কেউ নন, বিপ্লবী ভগৎ সিং।
আরও পড়ুন: শাহিদের স্মৃতিতে ‘কামিনে’
সে সময়ে এই দুঃসাহসিকতার ফল ভালো চোখে দেখেনি ব্রিটিশরা। এরকম কর্মের জন্য মুন্সী সাহেব বেধড়ক মেরেছিলেন ছোট্ট ভগৎকে। এখানেই শেষ নয়, ওপরমহল থেকে চিঠি পাঠিয়ে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তাঁকে। চিঠিতে তাঁকে বর্ণনা করা হয় ‘বিপদজনক’ আর ‘বিপ্লবী’ হিসেবে। ভগৎ এর মা-বাবা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক অনুনয় করেছিলেন। কিন্তু তাতে মন টলেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের। মাত্র ১১ বছর বয়সেই প্রতিবাদী এই ছেলের প্রথাগত শিক্ষায় ছেদ পড়ে।
আরও পড়ুন: ‘দেশটা সবার নিজের’, গান লিখে সম্প্রীতির বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
এই স্কুল ছিল অবিভক্ত পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার রামগড় গ্রামে। স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে এতটুকুও মন খারাপ হয়নি ছোট্ট ভগতের। তিনি বলেছিলেন, ‘এখন থেকে আমি মুক্ত, স্বাধীনভাবে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারব’। ওইটুকু বয়সেই কী অদম্য জেদ ছিল ভগৎ সিং এর মধ্যে। এরপরই তিনি যোগদান করেন কীরটি পার্টিতে। রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পঞ্জাবে ফিরে এসে কয়েকজন বিপ্লবী গড়ে তোলেন এই দল। পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে দলটি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়।
আরও পড়ুন: ১৫ অগস্ট, ১৯৪৭, লালকেল্লায় ভাষণ দিচ্ছেন জওহরলাল নেহেরু
ভগৎ সিং বরাবর বিপ্লবীদের সাহায্য করে গেছেন। তাঁর পরিবারও আত্মগোপনকারী যোদ্ধাদের খাবার এবং আশ্রয় জুগিয়ে গেছে। ভগৎ সিং আজও বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে। তাঁর পুরো নাম ভগৎ সিং জুগজ্জিয়ন। ৯৩ বছর বয়সী এই ভগৎ সিং আজও লড়ে যাচ্ছেন কৃষকদের জন্য। দেশ স্বাধীন হলে তিনি চলে আসেন ভারতের পঞ্জাবে।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে এল কাঙ্খিত স্বাধীনতা, কলকাতায় সকাল থেকেই বন্দেমাতরম ধ্বনিতে মাতল জনতা
১৯৪৮ এ তিনি যোগ দেন লাল কমিউনিস্ট পার্টি হিন্দ ইউনিয়নে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ভারতে নিষিদ্ধ ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। সে সময় ভগৎ সিং আবার ফিরে গেলেন চাষের কাজে। আর রাতের অন্ধকারে গোপন ক্যুরিয়র হিসেবে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে লাল পার্টি যুক্ত হয়ে যায় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) সঙ্গে। ১৯৬৪ সালে সিপিআই ভেঙে সিপিআইএম হলে তিনি তাতে যোগদান করেছিলেন।
আরও পড়ুন: Exclusive: ‘ওমরের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে’, বিস্ফোরক রশিদ খান
দেশ স্বাধীন হলেও তাঁর লড়াই থামেনি। জমির ওপর অত্যধিক করের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন তিনি। পঞ্জাবের উত্তরপূর্ব বর্ডারের কান্দি এলাকায় কৃষকদের একত্রিত করার অভিযোগে জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। এছাড়াও লুধিয়ানা জেল এবং পাতিয়ালা জেলেও বেশ কিছুটা সময় কেটেছে এই বিদ্রোহীর।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন জঙ্গিনেতা বুরহানের বাবা
এরপর ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত পঞ্জাব সন্ত্রাসে জর্জরিত ছিল। শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এই সময় সিপিআই, সিপিআইএম, সিপিআইএমএল-এর কর্মীরা খলিস্তানিদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়েছিল। ভগৎ সিং ছিলেন হিট লিস্টে। সেসব দিন পেরিয়ে এসে জীবনের প্রায় সায়াহ্নে উপস্থিত হয়েছেন বৃদ্ধ ভগৎ সিং। বর্তমানে বয়সের ভারে যেতে না পারলেও নয়া কৃষি বিল নিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ভগৎ সিং জুগজ্জিয়নের।