কলকাতা: প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে রেকর্ড টিকাকরণের সংখ্যা দেখাতে গিয়ে প্রচুর ভুয়ো সার্টিফিকেট ইস্যু করার অভিযোগ উঠল। সূত্রের খবর, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে এই ধরনের ভুয়ো সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, টিকাকরণের যে পরিসংখ্যান সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক, তা আদৌ সঠিক তো? কলকাতা টিভি ডিজিটালের হাতে এসে পৌঁছেছে একটি ভুয়ো সার্টিফিকেট।
ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে মৃত ব্যক্তির নামে ইস্যু হয়েছে এই সার্টিফিকেট। অঙ্কুর রাওয়াত নামে এক ব্যক্তির বাবা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মারা গিয়েছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মোদির জন্মদিনের দিন তাঁর নামে ইস্যু হয়েছে সার্টিফিকেট।
আরও পড়ুন: ২০ কোটির বেশি ভারতীয় সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন পেয়েছেন, আমেরিকায় দাবি প্রধানমন্ত্রী মোদির
অঙ্কুর রাওয়াত গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কলকাতা টিভি ডিজিটালের কাছে। তিনি জানিয়েছেন, আমার বাবা এই বছরের এপ্রিল মাসে মারা গিয়েছেন। ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট অনুযায়ী, তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় হাসপাতালে ভ্যাকসিনটি নিয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতালের কর্মীরা জানলেও তাঁরাই সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন। পুরো ঘটনার কথা জানিয়ে অঙ্কুর ফেসবুক পোস্টও করেছেন। ওই পোস্টে যোগী আদিত্যনাথকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
শুধু অঙ্কুরবাবুর বাবাই নন, টিকা না নিলেও ওইদিনের তারিখ দেওয়া ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন অনেকে। আবার কোনও জায়গায় কোভিডে মৃত মহিলাকেও সে দিন ‘ভ্যাকসিন’ দেওয়া হয়েছে। পরিবারের হাতে আসা সার্টিফিকেট সেই কথায় বলছে।
মধ্যপ্রদেশে কোভিডে মৃত এক মহিলার ছেলে মায়ের ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট পেয়েছেন ওইদিন। আগার-মালওয়া জেলার বাসিন্দা তাঁর ছেলে আশুতোষ শর্মা সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড করে সেভ করে রেখেছেন। আশুতোষ শর্মার ফোনে তাঁর মায়ের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার মেসেজ আসে ওইদিন। তাতে লেখা ছিল, মাননীয়া বিদ্যা শর্মা, ১৭ সেপ্টেম্বর রেকর্ড টিকাকরণের দিন আপনি সফলভাবে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। অথচ তাঁর মা চার মাস আগে মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মোদির জন্মদিনে টিকাকরণের পরিসংখ্যানে ব্যাপক কারচুপি, টিকা পেয়েছেন ‘মৃত’ মহিলাও
আশুতোষবাবু জানিয়েছেন, চার মাস আগে মা কোভিডে মারা গিয়েছিলেন। অথচ ১৭ তারিখ রাত ৮টা ২মিনিটে ভ্যাকসিনেশনের মেসেজটি আসে। একহাতে মায়ের ডেথ সার্টিফিকেট এবং অন্যহাতে ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট নিয়ে তাঁর অভিযোগ, টিকাকরণের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আধিকারিকদের উপর ব্যাপক চাপ ছিল।
ওই একই রকমের মেসেজ পান আগার জেলার বাসিন্দা পিঙ্কি ভর্মা। ২৬ বছর বয়সী ওই মহিলাও দ্বিতীয় ডোজের সার্টিফিকেট পান। সেই সার্টিফিকেটে উল্লেখ, রাজস্থানের ঝালাওয়াড়েতে তিনি দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। তিনি জানান, ৮ জুন প্রথম ডোজ পেয়েছিলাম। ৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। শরীর খারাপ থাকায় তা নেওয়া হয়নি।
তাঁর অভিযোগ, টিকাকরণের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সরকারের তরফে দায়সাড়া মন্তব্য করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের মেডিক্যাল এডুকেশন মন্ত্রীর সাফাই, দু-একটি ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। কোনও কর্মীদের গাফিলতি ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হবে।
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডের বিচারপতি উত্তম আনন্দের মৃত্যু উদ্দেশ্য প্রণোদিত, আদালতে দাবি সিবিআইয়ের
শুক্রবার নরেন্দ্র মোদির ৭১ তম জন্মদিনে রেকর্ড সংখ্যায় টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ ঠিক হয়েছিল, ১৭ সেপ্টেম্বর অন্তত ২ কোটি মানুষকে আজ টিকা দেওয়া হবে৷ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে তুলতে এই পদক্ষেপ নেয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক৷ এ জন্য ৮ লক্ষের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷
২৭ অগস্ট ভারত প্রথম টিকাকরণে এক কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছিল৷ ঠিক চারদিনের মাথায় ৩১ অগস্ট রেকর্ড তৈরি হয়৷ ওই দিন ১.৩০ কোটি মানুষ টিকা পেয়েছিলেন৷ দৈনিক টিকাকরণের ক্ষেত্রে যা ছিল সর্বকালীন রেকর্ড৷ তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেয় ১৭ সেপ্টেম্বরের টিকাকরণ কর্মসূচি৷