কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্কে: পাঁচ রাজ্যে ভোট বিপর্যয়ের পর কি কংগ্রেস কিছু শিক্ষা নেবে? আঞ্চলিক দলগুলি সম্পর্কে তাদের দাদাগিরির মনোভাব পরিবর্তন হবে? দলের অন্দরে নেতৃত্ব বদলের প্রশ্নে যখন তুমুল ডামাডোল চলছে, তখন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের কিছু মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পাঁচ রাজ্যের ভোট বিপযয়ের পর আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস কৌশল বদল করছে? যদিও সরকারিভাবে এ নিয়ে কংগ্রেসের কোনও নেতা মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্য কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা শনিবার বলেন, চিদম্বরম কী বলেছেন জানি না। তিনি হয়ত ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন। কৌশল বদল নিয়ে এখনই আলোচনার সময় আসেনি। বাকি রাজ্যগুলির ভোটের অনেক দেরি আছে।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা চিদম্বরম সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে লড়াই করতে হবে তৃণমূলের নেতৃত্বেই। আগামিদিনে পঞ্জাবে কংগ্রেসকে লড়তে হবে আম আদমি পার্টির অধীনেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের এই মন্তব্য ঘিরেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে কংগ্রেস একলা চলার কথাই বলেছিল। উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাবে তারা একাই লড়াই করে। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস জোট বেঁধেছিল অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে। সেবার কংগ্রেসের মাত্র সাতটি আসন। এবার একা লড়াই করে তারা পেয়েছে মাত্র দুটি আসন।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে টুইটে উদ্বেগ রাহুলের
গোয়াতেও কংগ্রেস এককভাবেই লড়াই করেছে। রাহুল গান্ধী প্রচারে গিয়েও গোয়ায় দাবি করেছিলেন, এবার কংগ্রেস একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়বে। রাহুল-সহ কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, গোয়ায় বিরোধী ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তৃণমূল ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বান ডেকেছিল। ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে একযোগে সামিল হওয়ারও বার্তা দেয়। কিন্তু কংগ্রেস সেই ডাকে সাড়া দেয়নি। তৃণমূল গোয়ায় একটি আসন না পেলেও কিছু আসনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত নির্দল এবং মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টির সমর্থনে বিজেপিই গোয়ায় সরকার গড়তে চলেছে।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম গোয়ায় ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও শুরু থেকেই তৃণমূল বিরোধী অবস্থানে অনড় ছিলেন। রাহুলের মতো তাঁরও দাবি ছিল, গোয়ায় তৃণমূলের সমর্থনের কোনও প্রয়োজন নেই কংগ্রেসের। কংগ্রেস একাই গোয়ায় সরকার গড়বে। সেই চিদম্বরমই এখন ভোল বদলে বলতে শুরু করেছেন ২০২৪ সালে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতৃত্বেই লড়তে হবে কংগ্রেসকে। একইভাবে পঞ্জাবে গোহারা হেরেছে কংগ্রেস। সেখানে সরকার গড়েছে এককভাবে আপ। চিদম্বরমের মন্তব্য, পঞ্জাবেও আম আদমি পার্টির নেতৃত্বেই আগামিদিনে কংগ্রেসকে লড়াই করতে হবে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতার এই মন্তব্য ঘিরেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আঞ্চলিক দলগুলির সম্পর্কে কংগ্রেস মনোভাব পাল্টাচ্ছে?
পাঁচ রাজ্যে মুখ থুবরে পড়ার পরই কংগ্রেসের জি ২৩ গোষ্ঠীভুক্ত বিক্ষুব্ধ নেতারা ফের নেতৃত্ব বদলের দাবি তুলেছেন। তা নিয়ে কংগ্রসের অন্দরে নানা দলঘোলা হচ্ছে। হাইকমান্ড বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকে বসে পরিস্থিতি বাগে আনার চেষ্টা করছে। জি ২৩ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হয়েও সংগঠন নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন চিদম্বরম। শশী থারুর, ভুপেন্দ্র সিং হুডার মতো গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠা কংগ্রেস নেতারাও বৃহস্পতিবার অন্যতম বিক্ষুব্ধ নেতা গুলাম নবি আজাদের বাড়ির বৈঠকে হাজির ছিলেন। তাতেও বিড়ম্বনা বেড়েছে কংগ্রেসের। যদিও গুলাম নবি আজাদ শুক্রবারই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা জানিয়ে এসেছেন।
সব মিলিয়ে কংগ্রেসে এখন চূড়ান্ত ডামাডোল। তার মধ্যেই আঞ্চলিক দলগুলি সম্পর্কে চিদম্বরমের নরম সুর কংগ্রেসের অন্দরে নতুন বিতর্ক তুলে দিয়েছে।