শরীর সুস্থ রাখতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলে লিভার। আমরা যা খাই বা পান করি তা লিভার হয়ে আমাদের অন্ত্রে পৌঁছায়। এই সব খাদ্য সামগ্রীর পাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বাইল বা পিত্তরস ও অ্যালবুমিন নিঃসরণ করে লিভার। এই উপাদানগুলি খাদ্যে থাকা ফ্যাট ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থেকে শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি করে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে লিভার ভাল রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। তা না হলে খুব সহজেই লিভারে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে নানা রকমের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই লিভার ভাল রাখতে ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় এই সব খাবার রাখলে উপকার পাবেন-
জল (Water)
লিভারের ডিটক্সিফিকশনের জন্য জল অত্যন্ত আবশ্যক। জল লিভার ও লিভার টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাষণ করে। শরীর থেকে টক্সিন বার করার সময় কিডনির টক্সিনও নিষ্কাষণ করে জল। এর ফলে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাষণে লিভার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয় না। লিভারের কার্যক্ষমতা ভাল থাকে।
ব্লুবেরি (Bluberry)
ব্লুবেরিতে পলিফেনলস রয়েছে। এই বিশেষ উপাদান নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এই নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি অ্যাসিডের অসুখ আক্রান্তদের স্থূল করে তোলে এবং কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। ব্লুবেরির পাশপাশি জলপাই, প্লাম ও ডার্ক চকলেটেও পলিফেনলস রয়েছে। পলিফেনলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি কার্যকারিতা রয়েছে। তাই যে কোনও দীর্ঘমেয়াদি অসুখের ক্ষেত্রে শরীরের নানা সমস্যায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ইনফ্লেমেশনের থেকে রক্ষা করে।
ওটমিল(Oatmeal)
ওটে প্রচুর পরিমাণে ডায়টারি ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার লিভারের জন্য খুব ভালো। যাদের ফ্যাটি লিভার ডিজিস রয়েছে তাদের জন্য ভীষণ উপকারী এই ওটস। ব্রেকফাস্টে ওটস খেলে শরীর সুস্থ থাকে।
ব্রোকলি(Brocolli)
পুষ্টিতে ভরা ব্রোকলি লিভারের ভাল রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্রোকোলি আমাদের শরীরে গ্লুটাথিওইনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই বিশেষ পদার্থ লিভার ডিটক্সিফিকেশন করে। পাশাপাশি ব্রোকলি লিভারের নন-অ্যালকোহলিক চর্বিজনিত অসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
কফি (Coffee)
অল্প পরিমাণ কফি খেতে পারেন। কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটা অ্যালকোহল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে লিভারের যে ক্ষতি হয় তা থেকে রক্ষা করে। তবে কফি পরিমাণে বেশি হলে কিন্তু আবার উল্টো ফল হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেনও শরীর ডিহাইড্রেট করে দেয়।
গ্রিন টি (green tea)
গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটা শরীরের জন্য উপকারী। গ্রিনটিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লিভারের এনজাইমের স্তর বাড়ায় ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কম করে ও লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না।
আমন্ড বাদাম (almond)
আমন্ড বাদামে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ই ‘ফ্যাটি লিভার’ সংক্রান্ত অসুখ দূরে রাখে। পাশাপাশি শরীর থেকে ব্যাড কোলেস্টেরল সরাতে লিভারকে সাহায্য করে আমন্ড বাদাম। একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এই খাবারগুলোর পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি(green leafy vegetables) যেমন পালং শাক, সরষের শাক খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন রয়েছে। এগুলি ফ্যাটি লিভারের অসুখ দূরে রাখতে কার্যকরী। একইভাবে কিছু গাছড়া কিংবা রান্নাঘরের নিত্য ব্যবহারের মশলা (herbs and spices)যেমন জিরে, রোজমেরি খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস আছে। এই পলিফেনলস ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূরে রাখে।
আরও পড়ুন: জানেন কি নিত্যদিনের এই অভ্যেস লিভারের বিপদ ডেকে আনে?