জেনেভা: কলেরা (Cholera)। মেডিক্যাল সায়েন্সের ব্যাখ্যায় বললে, সিভিয়ার অ্যাকিউট ওয়াটারি ডায়েরিয়া (Severe Acute Watery Diarrhoea)। সোজা ভাষায় বললে, জল ঘটিত এমন এক অসুখ, যার ফলে রোগী মারাত্মক আন্ত্রিক রোগে ভোগেন এবং তা একনাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। এমনকি, এর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একসময় কলেরা মহামারীর (Pandemic) আকার নিত। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি এবং মানবসভ্যতা আধুনিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ নিয়ন্ত্রণেই আনা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু, আবার বাড়তে শুরু করেছে কলেরার প্রকোপ। আর তার প্রধান কারণ হল জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change)। এই সতর্কবার্তা (Warning) আর কারও নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা – হু (World Health Organization – WHO) এই কথা জানিয়েছে।
চলতি বছরে প্রায় ৩০টি দেশে কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের নিরিখে যাকে নজিরবিহীন (Unprecedented) ঘটনা বলে আখ্যা দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা (Health Experts)। শুক্রবার এই কথা জানিয়েছে হু। রাষ্ট্রসঙ্ঘের এক সাংবাদিক সম্মেলনে (UN Press Conference) হু তরফে জানানো হয়েছে, আফ্রিকা (Africa) মহাদেশের ৩০টি দেশে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, কলেরার প্রকোপ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতেও (Haiti)।
আরও পড়ুন: Julian Assange : সাংবাদিকের বিচারের দাবিতে দুনিয়ার কাছে আর্জি অ্যাসাঞ্জের স্ত্রীর
হু-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, গবেষকদের (Researchers) অনুমেয় পরিসংখ্যান মোতাবেক, প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১৩ থেকে ৪০ লক্ষ ব্যক্তি কলেরায় আক্রান্ত হন এবং ২১,০০০ থেকে ১,৪৩,০০০টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। হু-এর কলেরা অ্যান্ড এপিডেমিক ডায়রিয়াল জিজিজ টিম (Cholera and Epidemic Diarrheal Diseases Team)-এর প্রধান ফিলিপ বারবোজা (Philippe Barboza) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “নজিরবিহীন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বিগত বছরগুলিতে আমরা শুধুমাত্র বেশি মাত্রায় প্রাদুর্ভাব দেখেছি তাই নয়, বরং আরও বৃহৎ ও আরও ভয়ঙ্কর মাত্রা প্রত্যক্ষ করেছি। বেশ কয়েক বছর কলেরায় আক্রান্ত হওয়া ও তার জেরে মৃত্যুর সংখ্যা কমার পর এই বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে।” বিভিন্ন দেশে কলেরা ও মহামারী জাতীয় রোগের চিকিৎসা করা ডাক্তাররা জানিয়েছেন লেবানন, সোমালিয়া এবং নাইজেরিয়াতে শরণার্থী শিবিরগুলিতে (Refugee Camps) কলেরার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও কলেরা
কলেরা একটি ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগ (Bacterial Disease), যা আমাদের অন্ত্রকে (Intestine) আক্রান্ত করে। দূষিত খাদ্য অথবা জলের (Contaminated Food or Water) মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং কলেরা রোগ দেখা দেয় আক্রান্ত রোগীর। কলেরা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ (Signs and Symptoms) হল লাগাতার ডায়রিয়া অর্থাৎ পাতলা পায়খানা এবং বমি (Diarrhea and Vomiting)। এই রোগ সবচেয়ে মারাত্মক শিশুদের জন্য। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরজন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য দেওয়ার আগে গত বছরের শুরু এবং শেষ প্রত্যক্ষ করেছেন এবং কলেরার রোগ বৃদ্ধির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট ও সরাসরি প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনকেই কেন দায়ী করা হচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের বলছেন, আফ্রিকা মহাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে বন্যা, বর্ষাজনিত আবহাওয়া এবং সাইক্লোনের মতো ঝড় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেখা দিচ্ছে বেশি করে। আর কলেরা মূলত দারিদ্রতা এবং দুর্বলতা জনিত অসুখ। যে সব দেশে স্বচ্ছ জল এবং মৌলিক পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে, সেখানেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কলেরা রোগের চিকিৎসা হল ওরাল রিহাইড্রেশন (Oral Rehydration) অর্থাৎ মৌখিকভাবে জলশূন্যতা দূর করার ওষুধ প্রয়োগ এবং গুরুতর ক্ষেত্রে ইন্ট্রাভিনাস রিহাইড্রেশন (Intravenous Rehydration) অর্থাৎ শিরার মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ।