কলকাতা: দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে চাপারউতোর তুঙ্গে উঠল। সোমবার দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় বলেন, আমি আশা করি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে আসবেন না। এ কথা বলার পরেই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্য সভাপতিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন দলের অন্যতম মুখপাত্র এবং রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, অভিষেকের পিছিয়ে আসার কথা উঠছে কেন। তিনি অবিলম্বে পিছিয়ে আসা শব্দবন্ধটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, কয়েকজন সিনিয়র নেতা দলের মধ্যে বিভাজনের সৃষ্টি করছেন। কুণাল দলের চেয়ারম্যানকে কার্যত থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার বলেও কটাক্ষ করেন।
বেশ কিছুদিন আগে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি দলের এক অনুষ্ঠানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে মন্তব্য করেছিলেন, আপনার এখন প্রকাশ্যে আসা উচিত। মানুষ মনে করছে, আপনি হারিয়ে যাচ্ছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাস খানেক মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাটের বাড়িতে বিশ্রামে ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই সুব্রত বক্সি ওই মন্তব্য করেন। সোমবার সেই প্রসঙ্গ তুলে কুণাল বলেন, এসব বলার উনি কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মুখ। তিনি কোটি কোটি তৃণমূল কর্মীর মনের মণিকোঠায় আছেন। তিনি হারিয়ে যাবেন কেন। তিনি হারিয়ে যাচ্ছেন, এ কথা বলার অর্থ কী। উনি কেন বলছেন, যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, ততদিন আমি আছি।
আরও পড়ুন: লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না অভিষেক, সুব্রতর মন্তব্যে বিতর্ক
কুণাল বলেন, তৃণমূলের প্রধান মুখ মমতা। অভিষেক প্রধান সেনাপতি। তার বাইরে আমরা সব (পড়ুন সুব্রত বক্সিও) থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার। মমতা আর অভিষেকের মধ্যে এই সব থার্ড পার্সনের নাক গলানোর দরকার কী। অভিষেক দলের স্বার্থে, দলের ভালোর জন্য কিছু বলতে চান। রাজ্য সভাপতি সিনিয়র লোক, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি সেসব নিয়ে নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলেই তো সমস্যা মিটে যায়।
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটের দায়িত্বে ছিলেন সুব্রতর মতো অনেক সিনিয়র নেতা। কুণাল বলেন, কারা মুখ্যমন্ত্রীর ভোটের দায়িত্বে ছিলেন। কেন তাঁরা নন্দীগ্রামে মমতার মতো নেত্রীকে ক্লিয়ার জয় দিতে পারলেন না। শুভেন্দু ভোটে কারচুপি করার সাহস পেলেন কোথা থেকে।
কুণাল বলেন, আজকে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে কিছু সিনিয়র নেতাকে পরিষ্কার স্ট্যান্ড নিতে হবে। দলের কিছু নেতা, মন্ত্রীকে সব সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নানা অনুষ্ঠান মঞ্চ আলো করে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের মুখে কখনও শুভেন্দুর নিন্দা করতে দেখি না। তাঁকে চোর বলতে শুনি না। শুভেন্দু এবং বিজেপির কিছু নেতা আমাদের নেত্রী এবং আমাদের সেনাপতির বিরুদ্ধে নানান কুকথা বলেন। কিন্তু ওই সব নেতা-মন্ত্রীর মুখে শুভেন্দুর সমালোচনা করতে শুনি না।
সম্প্রতি ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং এবং জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। শনিবার রাজ্য সভাপতি সেই বিরোধ মেটাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার জন্য তিনি নৈহাটিতে যান। কিন্তু অর্জুন থাকলেও বৈঠকে বিধায়ক হাজির হননি। কুণাল বলেন, ভেবেছিলাম, সেই সমস্যা সভাপতি মিটিয়ে ফেলবেন। কিন্তু মেটাতে পারলেন না। তিনি বলেন, আজ ফিরহাদ হাকিম দুর্নীতি নিয়ে ঠিক কথা বলেছেন। কিন্তু আমি যখন আগে এই কথা বলেছিলাম, তখন আমাকে শুনতে হয়েছিল, মন্ত্রিসভার যৌথ সিদ্ধান্ত। আমি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলেছিলাম। অকারণে নবীন-প্রবীণ না করে দলটাকে চালাতে দিন। তৃণমূলে মমতা এবং অভিষেক ছাড়া সবাই থার্ড পার্সন।