কলকাতা: দলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও নবীন-প্রবীণ প্রশ্নে বিতর্ক পিছু ছাড়ল না তৃণমূলের। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে এই প্রশ্নে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছেন বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল। তারই মধ্যে সোমবার দলের ২৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির মন্তব্যে বিতর্কের পারদ আরও চড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সুব্রত এদিন বলেন, আমার ধারণা, অভিষেক লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। তিনি যদি লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন, তবে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই লড়াই করবেন। অভিষেক আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। রাজ্য সভাপতি আরও বলেন, কোনও কোনও মহল তৃণমূলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলছি, যতই চেষ্টা করুন। তাতে কোনও লাভ হবে না।
তৃণমূলের অন্দরে রাজ্য সভাপতির এই যদি শব্দ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। চর্চা চলছে, যদি অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন, এ কথা কেন বলতে গেলেন সুব্রত। তবে কি সত্যিই অভিষেক লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে যাচ্ছেন? সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সাম্প্রতিক কাজকর্মে দলের একাংশ সেই ইঙ্গিতই দেখতে পাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মহলে অভিষেক জানিয়েছেন, তিনি নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান। নিজের কেন্দ্রের জন্য সাংসদ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠা দিবসে পানিহাটিতে খুন তৃণমূ কর্মী
গত কয়েকদিন ধরেই অভিষেক কার্যত মৌনব্রত পালন করে চলছেন। শনিবার সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাতে আরও জল্পনা বাড়ে। যাঁরা অভিষেকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, অভিষেককে আমরা আরও সক্রিয় হওয়ার আবেদন জানিয়েছি। এদিকে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে অভিষেক কর্মী-সমর্থকদের আগামী আন্দোলনের জন্য তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, নতুন বছরে নব উদ্যমে আগামী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। তাঁর আরও মন্তব্য, সব কর্মী-সমর্থকই দলের মেরুদণ্ড। তাঁদের সকলকে কুর্ণিশ।
এই আবহে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রাজ্যের পুরমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, তৃণমূলে কোনও সমস্যা নেই। নবীণ-প্রবীণ সমন্বয়েই মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল সংগ্রাম করে এগিয়ে চলেছে। কিছু মানুষ গুলিয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছে। কিছু মিডিয়া কিছু বিষয়কে তাদের মতো করে দেখাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, তৃণমূলে কোনও বিভাজন আছে। আমরা যে যাই করি না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই দল করি এবং লড়াই করি।
সম্প্রতি শাসকদলের রাজ্য মুখপাত্র এবং সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেছিলেন, আগামিদিনে অভিষেকই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তার জবাবে ফিরহাদ এদিন বলেন, মমতাই আমাদের নেত্রী। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা চলি। পাশাপাশি কলকাতার মেয়রের দাবি, তৃণমূলে মমতার পরেই অভিষেকেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। দুর্নীতি নিয়েও ফিরহাদ প্রতিষ্ঠা দিবসে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, দলের মধ্যে থেকে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া কিংবা দুর্নীতি করা মায়েরব মাংস কেটে খাওয়ার সমতুল।