পশ্চিম মেদিনীপুর: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Elections) মুখে পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Mdinapore) কেশপুর এবং খড়্গপুরে গোষ্ঠীকোন্দল সামাল দিতে নাজেহাল হতে হচ্ছে শাসকদল তৃণমূলকে (TMC)। যদিও মুখে জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করছেন, সব ঠিক আছে। কেশপুর, খড়্গপুর নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নিচুতলার কর্মীরা পাল্টা দাবি করছেন, সব ঠিক নেই। দুটি এলাকাতেই পরিস্থিতি বেশ গোলমেলে। কেশপুরে (Keshpur) অঞ্চল সভাপতি নির্বাচন নিয়ে যেমন কোন্দল তুঙ্গে, তেমনি খড়্গপুর (Kharagpur) পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারকে নিয়েও দলে গোলমাল। তারই মধ্যে জেলা নেতৃত্ব প্রদীপকে চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিতে বলেছেন। প্রদীপ অবশ্য ইস্তফা দিতে নারাজ। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Avishek Banerjee) বললে আমি পদত্যাগ করব। কেশপুরের তৃণমূল বিধায়ক (MLA) শিউলি সাহার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন দলের একটি বড় অংশের নেতা-কর্মী। রবিবার জেলা পরিষদ ভবনে দলীয় বৈঠক চলাকালীনই বাইরে শিউলির বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী আসে। ছুটির দিনে জেলা পরিষদ ভবনে কেন তৃণমূলের দলীয় বৈঠক, তা জানতে চেয়ে বিজেপি (BJP) নেতা শঙ্কর গুছাইত চিঠি দেন জেলাশাসককে।
অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ ঘিরে গত একমাস ধরে কেশপুর ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চলছে। ব্লক সভাপতির (Block President) বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজের ইচ্ছেমতো অঞ্চল সভাপতি বাছাই করেছেন। এর প্রতিবাদে তাঁর পাল্টা গোষ্ঠী শনিবার ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে দুটি তালা লাগিয়ে দেয়। তার পরেই ব্লক সভাপতির অনুগামীরা আরও একটি তালা ঝুলিয়ে দেন প্রধান গেটে। দলীয় সূত্রের খবর, মোট ১৫টি অঞ্চলের মধ্যে ৮, ১০, ১২ এবং ১৩ নম্বর অঞ্চল সভাপতি নিয়েই ঝামেলা।
আরও পড়ুন: Naoda Incident: আদালতে জবানবন্দি দিতে চান নদিয়ার নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী
সেই ঝামেলা মেটাতে রবিবার জেলা পরিষদ ভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতি। রাত প্রায় নটা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বাইরে তখন শ’খানেক তৃণমূল কর্মী শিউলি সাহার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। শিউলি দূর হটো, শিউলিকে কেশপুরে চাই না, ইত্যাদি স্লোগান ওঠে। বিক্ষুব্ধদের সামাল দিতে হিমশিম খান জেলার নেতারা। আসে পুলিশ।
বৈঠক শেষে অজিত মাইতি দাবি করেন, বড় কোনও সমস্যা নেই কেশপুরে। কিছু নেতা-কর্মীর ইগো নিয়ে সমস্যা। তাকে ব্যবহার করেছে সিপিএম (CPIM) এবং বিজেপি। তিনি জানান, বৈঠকে ১৫টি অঞ্চল সভাপতি নিয়ে কথা হয়। সমস্যা শুধু ১০ নম্বর অঞ্চল নিয়ে। সেখানে সভাপতিকে সরিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। যারা শিউলির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে, তাদের শো কজ করা হচ্ছে। এই বৈঠকের পরেও যদি কেউ ঝামেলা করে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অজিত জানান, খুব শীঘ্রই কেশপুরে বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হবে। শিউলি জানান, যা বলার, অজিতদা বলে দিয়েছেন। আমার সঙ্গে কারও গোলমাল নেই। তবে দলবিরোধী কার্যকলাপ করলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এরপরও কেশপুরে কোন্দল কমবে কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরেই সংশয় রয়েছে।
এদিকে চূড়ান্ত কোন্দল চলছে তৃণমূল পরিচালিত খড়্গপুর পুরসভায়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জোট বেঁধেছেন। তাঁরা প্রদীপের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। দিন কয়েক আগে ওই বিক্ষুব্ধরা পুরসভার কাছেই গোপন বৈঠক করেন। জেলার নেতা অজিত মাইতি জানান, অভিষেকের নির্দেশেই প্রদীপকে চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে। তাঁকে দলের আরও বড় কাজে ব্যবহার করা হবে। প্রদীপ বলেন, দলের এবং বাইরের কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। অনেক কাউন্সিলর আমার বিরুদ্ধে সই না করতে চাননি। কোনও অদৃশ্য শক্তির কাছে তাঁরা মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন।