কাবুল: বুধবার তালিবানদের সঙ্গে বৈঠক করে নর্দান অ্যালায়েন্স। যুদ্ধ না করে কিভাবে সহাবস্থান বজায় যায়, তাই ছিল বৈঠকের মূল বিষয় বস্তু। সংঘর্ষ ও রক্তপাত এড়িয়ে সমঝোতার আলোচনা হয়। কিন্তু তা পরও সেই চুক্তি ভঙ্গ করে শনিবার পঞ্জশিরে প্রবেশ করল তালিবানিরা৷ নিজেরা সেই দাবি করেছে তালিবান৷কাবুল-সহ গোটা আফগানিস্তানকে তালিবানদের দখলে চলে এলেও এতদিন পঞ্জশিরে পা রাখতে পারেনি তালিবান৷ কিন্তু, শনিবার শেষ রক্ষা হল না৷
طالبان ادعا کوي چې ځواکونه یې پنجشېر ته ننوتلي ديhttps://t.co/jdmhNnxeNc pic.twitter.com/Xt39caVk8D
— TOLOnews (@TOLOnews) August 28, 2021
এ দিকে মার্কিন সেনা কাবুল বিমান বন্দরের গেট ছাড়তেই দখল নিয়েছে তালিবান৷ শূন্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে৷ গুলির শব্দে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়৷ শুধু তাই নয়, তালিবানরা নতুন আফগান সরকার গড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে৷ তাদের দাবি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন সরকার ঘোষণা করবে৷
Taliban prepare to set up new Afghan government as U.S. evacuation nears end https://t.co/8fazqe0uhG pic.twitter.com/Hh26OwO2Ss
— Reuters World (@ReutersWorld) August 28, 2021
আরও পড়ুন :ভোট পরবর্তী হিংসায় আরও ১০ মামলা দায়ের, নদীয়াতে গ্রেফতার ২
হিন্দুকুশ পর্বতমালার মাঝে অবস্থিত পঞ্জশির বরাবরই হানাদারদের আক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রেখেছে। যা সম্ভব হয়েছে পঞ্জশিরের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য৷ ১৯৯৬-২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের প্রথম শাসনপর্বের সময়ও নিশ্চিন্তে ছিল পঞ্জশির। আলমাস জাহিদের নেতৃত্বে নর্দান অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে ১২ জন এবং তালিবানের গোয়েন্দা উপ-নেতা মোহাম্মদ মহসিন হাশিমির নেতৃত্বে ৬ জন প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগ দেন। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে বৈঠক হয় তাদের। এই বৈঠকের পর নর্দান অ্যালায়েন্স দলের এক প্রতিনিধি মহম্মদ আলম ইজেদিয়ার তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, দেশের শান্তি বজায় রাখার জন্য বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল তাদের বার্তা পৌঁছে দেবে দলের নেতৃত্বের কাছে। সেই সঙ্গে যত দিন না দ্বিতীয় দফার আলোচনা হচ্ছে, ততদিন পঞ্জশির বা তালিবান, কেউই কারও উপর হামলা চালাবে না। তারপরও শনিবার সেই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে তালিবানর বিরুদ্ধে৷
আরও পড়ুন : ব্যাটিং ব্যর্থতা মেনে নিলেন বিরাট, ওভালে দল পরিবর্তনের ইঙ্গিত
তবে, তালিবান প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানায়, তারা পঞ্জশির নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু মাসুদের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যত সরকারের কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল। এই ভাবে আলোচনার করে কোনও বাস্তব ফলাফল মেলেনি। তালিবানদের সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য আনামুল্লাহ সামঙ্গানি বলেন, “পঞ্জশির প্রতিনিধি দল শাসন ব্যবস্থার সামগ্রিক কাঠামোর উপর বেশি জোর দিচ্ছে। যেহেতু দুই পক্ষের দাবির মধ্যে বড় পার্থক্য ছিল, তাই উভয় পক্ষই বৈঠকে স্থির করে যে, এই বৈঠকে কী কী বার্তা দেওয়া হল, তা নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।” এই বৈঠক যে আশানুরূপ হয়নি, তা তালিবানদের কথাতেই স্পষ্ট। তালিবানদের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য নুরুল্লাহ নূর বলেন, যদি দু’পক্ষের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছন না যায়, তাহলে অন্য কোনও বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে তালিবানরা। পঞ্জশিরও তখন সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে বলে মত তালিবানদের একাংশের। দু’পক্ষের নেতাদের কাছে বৈঠকের বার্তা পৌঁছনোর পর তাঁরা কি সিদ্ধান্ত নেন, এখন সেটাই দেখার। তবে নেতারা যাই সিদ্ধান্ত নিক, নিজেদের সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে পঞ্জশির, জানালেন নর্দান অ্যালায়েন্সের আরও এক প্রতিনিধি হামিদ সাইফি।
আরও পড়ুন : আধারের সঙ্গে প্যান-ইপিএফও লিঙ্কে কোনও রকম সমস্যা হয়নি, দাবি আইটি মন্ত্রকের
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নর্দান অ্যালায়েন্সের নেতৃত্বে থাকা আহমদ মাসুদ জানায়, যদি সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে আফগানিস্তান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। “আমরা তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে কানাডার তরফে জানানো হয়েছে যে, আফগানিস্তানে যদি কোনও বিশেষ সরকার গঠিত হয়, তাহলে কানাডা তাকে স্বীকৃতি দেবে না। এই সরকার গঠন হলে জনগণ ভোগান্তির শেষ থাকবে না”, জানালেন মাসুদ। তালিবানরা তাদের সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। যদিও এই সরকার গঠনের পক্ষে কী কী শর্ত থাকবে, তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।