ঢাকা: বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মুজিবুর রহমান-কন্যা শেখ হাসিনা টানা চারবার ঢাকার মসনদে বসতে চলায় আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগের বিরোধীহীন জয়ের পরেই দলনেত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। এছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে প্রতিবেশী দেশ তথা স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার ভারত। রাশিয়াসহ সাত দেশের রাষ্ট্রদূত হাসিনাকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছে।
আজ, সোমবার সকালে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করায় শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। হাসিনা সরকারের নতুন মেয়াদে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেও সাক্ষাতে আশা প্রকাশ করেন প্রণয় বর্মা।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম-ন্যায় বিলকিসের, মুক্তিপ্রাপ্তরা ফের জেলে
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আজ, সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দেন। ঢাকার চীন দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। ওয়েন বলেন, চীনা নেতারা দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে, বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে হাসিনার সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করা যায়।
রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফল ও এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামি লিগ এবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামি লিগ।
এর পরেই রয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা, ৬১টি আসনে। তাঁদের বেশিরভাগই আওয়ামি লিগের নেতা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। আর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। সংসদের প্রধান বিরোধী জাতীয় পার্টি এত কম আসনে জয়ী হওয়ায় বিরোধী দল কে হবে, তাই নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
তারকাদের কে জিতলেন, কে হারলেন?
আসাদুজ্জামান নুর
২০০১ সাল থেকেই আওয়ামি লিগের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নুর। এ নিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি।
মমতাজ বেগম
লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী এবার বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের হয়ে নৌকা প্রতীকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরে গেলেন তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ।
ফিরদৌস আহমেদ
দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় তারকা। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে অভিনয়ে এরই মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন ২৫ বছর। কয়েক বছর ধরে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও বেশ সক্রিয় এই অভিনেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার লড়েই বাজিমাত করেছেন তিনি।
মাহিয়া মাহি
প্রচারে চমক দেখালেও ভোটযুদ্ধে হেরে গিয়েছেন নায়িকা মাহিয়া মাহি।
ডলি সায়ন্তিনী
একসময়ের জনপ্রিয় গায়িকা ডলি সায়ন্তনী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলাফলে দেখা যায় ডলি সায়ন্তনী পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৩৮২ ভোট। তারকাদের মধ্যে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন ডলি সায়ন্তনী।
সাকিব আল হাসান
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামি লিগের প্রার্থী সাকিব আল হাসান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট।
মাশরাফি বিন মুতর্জা
বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামি লিগের প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।
বাংলাদেশ নির্বাচনের এই ফলের দিকে তাকিয়ে ছিল আন্তর্জাতিক রাজনীতিও। কারণ ভারত লাগোয়া এই প্রতিবেশী দেশ নয়াদিল্লির প্রতি অতি অনুগত এবং বিশ্বাসভাজন বলেই পরিচিত। তিস্তা জলচুক্তি ছাড়া ভারতের সঙ্গে আর বিশেষ কোনও মনোমালিন্যও নেই। দুদেশের স্থল বাণিজ্য অত্যন্ত অর্থকরী। এছাড়াও হাসিনা সরকার আন্তর্দেশীয় পাচার, জঙ্গি কার্যকলাপ, ঘাঁটি গেড়ে জঙ্গিদের ভারত বিরোধী ছক কষা, জাল নোট ছাপার কারখানা বন্ধ সহ একাধিক কট্টরপন্থী কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন হাসিনা।
সেদিক দিয়ে হাসিনার পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়া ভারতের পক্ষে আপেক্ষিক মঙ্গলজনক। যদিও আর্থিকভাবে দুর্বলতর বাংলাদেশ চীন, আমেরিকা ও রাশিয়ার কাছে ঋণগ্রস্ত রয়েছে। সে কারণে ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে বাংলাদেশকে দাবার ঘুঁটি করতে মরিয়া চীন, আমেরিকা ও রাশিয়া। এই তিন দেশের কাছ থেকেই অস্ত্র সরঞ্জামসহ অন্যান্য বাণিজ্য নির্ভর ঢাকার প্রশাসন। পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশকেও নিজের তাঁবে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। যার সহযোগী রাশিয়া। উল্টোদিকে চীনকে টাইট দিয়ে রাখতে ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশকে মুঠোয় রাখতে মুখিয়ে আছে বাইডেন প্রশাসন। এসব দিক থেকে দক্ষিণ এশীয় রাজনৈতিক ভারসাম্যের মানচিত্রে হাসিনার জয় সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী।
অন্য খবর দেখুন