ইসলামাবাদ: জোড়া দুঃসংবাদ ইমরান খানের পক্ষে। গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে বুধবার সেদেশের আদালত ৮ দিনের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল। পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর হেফাজতে থাকবেন ৭০ বছর বয়সি ইমরান। অন্যদিকে, এদিনই পাকিস্তানের আরেক আদালত ইমরানকে তোষাখানা দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত করে। মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছিল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান নেতা ইমরানকে। এরপরই দেশজুড়ে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়ে যায়। দলের কর্মী-সমর্থকদের তাণ্ডবে এ-পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ইমরানের অনুগামীরা উত্তর-পশ্চিমে রেডিও পাকিস্তানের একটি আবাসনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক বলেছেন, পাকিস্তানের উপর তাঁরা নজর রেখেছেন। যদিও ইমরানের গ্রেফতারিকে তিনি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন। ইতিমধ্যেই অশান্ত পাক পঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানে সেনা নামানো হয়েছে।
এদিকে, এদিনই অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো পুনর্তদন্ত করে জানিয়ে দিয়েছে, অর্থ তছরুপ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং তাঁর ছেলে জড়িত নন। তাঁদের দুজনকেই সম্পূর্ণ ক্লিনচিট দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। তারা বলেছে, শেহবাজ শরিফ এবং তাঁর ছেলে হামজা দুজনেই নির্দোষ। এই মামলায় তাঁদের কোনও যোগ নেই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। রাতভর হেফাজতে থাকার পর বুধবার ইসলামাবাদ পুলিশ লাইন সদর দফতর এইচ-১১/১-এর পুলিশ লাইন গেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয় ইমরানকে। সেখানই বসে আদালত। ইমরানের গ্রেফতারির পরই বিক্ষোভে শামিল হন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর সমর্থকরা। শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের বাসভবন ঘিরে ফেলেন তাঁরা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিভিন্ন এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। আবার অনেক জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয় আধা সামরিক বাহিনী। এমনকী, সেনার বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ চলে। লাহোর, ফয়জলাবাদে সেনা কমান্ডারের বাসভবনেও হামলা চালানো হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদর দফতরেও রাতে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত জনতা। প্রচুর মহিলাকেও ওই জমায়েতে দেখা গিয়েছে। তারা গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখায়।
একাধিক এলাকায় ইমরানের দলের সমর্থকরা সরকারি সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে সংযত ছিল জওয়ানরা। অশান্তি যাতে না ছড়িয়ে পড়ে সেই জন্য ইসলামাবাদ-সহ পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কার্ফু। যদিও দলের কর্মী-সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নির্দেশ দেন পিটিআই নেতা তথা পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। রাতের পর বুধবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভে নামে সমর্থকেরা। খানের মুক্তির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এদিকে ইমরানের গ্রেফতারি বেআইনি বলে দাবি করেছিল পিটিআই। তবে আদালত জানিয়ে দেয়, সেই গ্রেফতারি আইনি। আপাতত ৮ দিন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর হেফাজতে থাকবেন ইমরান। দুর্নীতি-সহ ১২১টি মামলায় ইমরানকে জেরা করা হবে।